• রোববার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪

স্ত্রীর পরকীয়ার ক্ষুদ্ধ হয় খুনী


প্রকাশিত: ১:১৪ এএম, ১৮ জুন ২৩ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯১ বার

স্টাফ রিপোর্টার : স্ত্রী তানিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ইমন কাজীর। এ কথা জানতে পেরে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে আল-আমিন। সে কৌশলে স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক ইমন কাজীকে বাসায় ডেকে এনে হত্যা করে।হত্যাকান্ডের আগে প্রথমে কোমল পানীয় কোকের সঙ্গে ১০টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে ইমনকে খাওয়ায়। ইমন ঘুমে আচ্ছন্ন হলে ধাক্কা মেরে তাকে মেঝেতে ফেলে দেয়। এরপর গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ ঘরে রেখে দরজায় তালা মেরে বাইরে চলে যায় খুনি আল আমীন। হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে অটোরিকশার গ্যারেজে ঘুমিয়ে ছিল সে। পরদিন সকালে একটি বস্তা কিনে বাসায় ফেরে। লাশটি বস্তায় ভরে রেখে আবারও বাইরে চলে যায়। সন্ধ্যায় এসে লাশের বস্তা মাথায় করে তিন তলা থেকে নিচে নামিয়ে আনে। নিজের অটোরিকশায় করে লাশের বস্তাটি নিয়ে ফেলে দেয় পাশের ডোবায়।

ক্লু লেস এই হত্যাকান্ড উদঘাটন করে গোয়েন্দারা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডেমরা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুল জানান, গত ৩১ মে ডিএমপির কদমতলী থানার হেনোলাক্স গলির ডোবা থেকে একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে পরিচয় শনাক্ত হলে জানা যায়, লাশটি ইমন কাজী (১৭) নামে এক অটোরিকশা চালকের। এই ঘটনায় ইমন কাজীর পরিবারের সদস্যরা বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ক্লু-লেস ওই ঘটনার তিন দিনের মাথায় হত্যার সঙ্গে জড়িত আল-আমিন শেখকে বরিশালের হিজলা থানার গোবিন্দপুর খন্না এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গোয়েন্দারা জানান, স্ত্রী তানিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ইমন কাজীর। এ কথা জানতে পেরে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে আল-আমিন। সে কৌশলে ইমন কাজীকে বাসায় ডেকে এনে হত্যা করে। গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইমনকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছে আল আমিন। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আল-আমিন শেখ জানায়, তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোহরগঞ্জে। ঢাকায় কদমতলীর কমিশনার মোড়ে হুমায়ুন সাহেবের বাড়িতে স্ত্রী তানিয়া ও চার বছরের সন্তান ইসমাইলকে নিয়ে ভাড়া থাকতো।

পেশায় অটোরিকশাচালক আল-আমিন শেখ জানায়, মাঝে-মধ্যেই সে তার স্ত্রী তানিয়াকে ইমন কাজীর রিকশায় ঘুরে বেড়াতে দেখতো। এ বিষয়ে স্ত্রী তানিয়াকে জিজ্ঞাসা করলে ইমনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে। পরে সে নিজেই স্ত্রী তানিয়ার কথা গোপন করে ইমনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে ইমন জানায়, অটোরিকশায় যাকে নিয়ে সে ঘুরে বেড়ায়, তানিয়া নামে এই নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে তার। এ কথা জেনে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে আল-আমিন।

আল-আমিন শেখ জানায়, বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে ইমন তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়ে সেই টাকাও ফেরত দিচ্ছিল না। তার স্ত্রী বরিশালে বাবার বাড়িতে যাওয়ার পর আল আমিন গত ৩০ মে তার এক ফুপুকে অটোরিকশায় করে এক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে ইমনকে। ওই দিন বিকালে ইমন তার বাসার কাছে এলে তারা দুজনে একসঙ্গে কোক ও সিগারেট কেনে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আল আমিন স্থানীয় একটি ফার্মেসি থেকে দুই দফায় মোট ১০টি ঘুমের ট্যাবলেট কেনে। এরপর ইমনকে নিয়ে সে বাসায় যায়।

আল আমিন শেখ জানায়, তর্কের এক পর্যায়ে ইমন কাজীকে সে ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। পরে তার বুকের ওপর বসে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। ইমনের মৃত্যু নিশ্চিত হলে লাশ ঘরের মধ্যে রেখে দরজায় তালা দিয়ে বের হয়ে যায় আল আমিন।
আল আমিন শেখ আরও জানায়, সন্ধ্যার দিকে অটোরিকশা নিয়ে সে বাসার নিচে যায়। এরপর তিন তলা থেকে লাশের বস্তাটি মাথায় করে নামিয়ে আনে এবং লাশটি অটোরিকশায় নিয়ে গুমের উদ্দেশ্যে বের হয়। পাশের হেনোলাক্সের গলিতে একটি ডোবার পাশে গিয়ে লাশের বস্তাটি ফেলে দিয়ে আসে।ডোবায় লাশ ফেলে দেওয়ার পর সে সোজা চলে যায় বরিশালে শ্বশুর বাড়িতে। সেখানে গিয়ে আত্মগোপন করে ছিল। কিন্তু তিন দিনের মাথায় সেখান থেকেই পুলিশ তাকে ধরে আনে।