সৌদি আরবে যৌন নিগ্রহের ভয় ও আতংক বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মীদের
সোমা মোনালিসা.ঢাকা: সৌদি আরবে যৌন নিগ্রহের ভয় ও আতংক কাজ করছে বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মীদের।বিভিন্ন ভাবে যৌন নিগ্রহের বিষয়টি মিডিযায় প্রচার হওযায় এ আতংক কাজ করছে বলে একাধিক রিক্রুটিং এজেন্ট জাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন।
ফলে বিনা খরচেও সৌদি আরবে কাজ করতে যেতে আগ্রহী নন নারী কর্মীরা। বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী নিতে গত মাসে ৩০ হাজার ভিসা দেয় সৌদি আরব। রোজার আগেই যাওয়ার কথা ছিল ২০ হাজার নারী কর্মীর। এ ক্ষেত্রে পাসপোর্ট করা ছাড়া আর কোনো খরচ লাগবে না। সব খরচ দেবে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপরও প্রয়োজনীয় সংখ্যক নারী কর্মীই পাচ্ছেন না বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানিকারকরা। ২০ হাজারের বিপরীতে বাছাই শেষে টিকেছে মাত্র আড়াই হাজার কর্মী। গত ৩১ মে পর্যন্ত সৌদি গেছেন মাত্র ১১৬ জন। চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে কর্মী পাঠাতে চুক্তি করে বাংলাদেশ। তখন জানানো হয়েছিল, প্রথমে যাবেন নারী কর্মী। পরবর্তী সময়ে যাবে পুরুষ কর্মী। মাসে যাবেন ১০ হাজার গৃহকর্মী। শুধু নিবন্ধিত নারী কর্মীরাই এক্ষেত্রে কাজের সুযোগ পাবেন।
গত কয়েক বছরে ২২ লাখ বাংলাদেশি বিদেশ যেতে নাম নিবন্ধন করেছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ। চুক্তির পর গত ফেব্রুয়ারিতেও নিবন্ধন করেন প্রায় তিন হাজার নারী। চলতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিনা খরচে বিদেশ যাওয়ারসুযোগ পেয়ে নাম নিবন্ধন করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। ভিড় সামাল দিতে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছিল।
কিন্তু চার মাসের ব্যবধানে সামগ্রিক চিত্র যেন রাতারাতি পাল্টে গেছে। এখন নারী কর্মীই খুঁজে পাচ্ছেন না রফতানিকারকরা। সৌদিতে ২০ হাজার নারী কর্মী সংগ্রহ, বাছাই ও পাঠানোর দায়িত্ব পেয়েছে ১১৫টি রিত্রুক্রটিং এজেন্সি। একটি এজেন্সি পাঠাতে পারবে সর্বোচ্চ ২০০ কর্মী। কিন্তু কোনো এজেন্সিই এখন পর্যন্ত কোটা পূরণ করতে পারেনি। গত ২৪ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত দেশের ৪২ জেলায় জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে বাছাই অনুষ্ঠিত হয়।বেসরকারি রিত্রুক্রটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রা সূত্রে জানা গেছে, বাছাই শেষে সারাদেশ থেকে মাত্র দুই হাজার ২০০ নারী কর্মী পাওয়া গেছে সর্বসাকুল্যে। তিন সপ্তাহ প্রশিক্ষণের পর তাদের সৌদি আরব পাঠানো হবে।বায়রা সভাপতি আবুল বাশার জানান, প্রত্যাশা অনুযায়ী নারী কর্মী পাওয়া যায়নি। রিত্রুক্রটিং এজেন্সিগুলোর প্রচারে কোনো ত্রুটি ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। তারপরও কেন এই সংকট এর জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীরা এমনিতে বিদেশ কাজ করতে খুব একটা আগ্রহী নন। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নিপীড়নের কিছু ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসায় অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।’ তিনি জানান, এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আগামী দুই সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সৌদি আরবের জন্য আগ্রহী নারী কর্মী পাওয়া না গেলেও গত এক মাসে ওমান, কাতার, আরব আমিরাত ও জর্ডানে প্রায় ১০ হাজার নারী কর্মী গেছেন। বাংলাদেশ মহিলা অভিবাসী শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বমসা) পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, সৌদি আরবে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে নারীরা দেশটিতে যেতে আগ্রহী নন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে নারীদের পাঠানো উচিত হবে না। নির্যাতনের ঝুঁকি কমাতে আবাসিক কাজের পূর্ণ প্রশিক্ষণের পর কর্মী পাঠানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
তবে এবার নারী কর্মীদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান আবুল বাশার। তিনি বলেন, ‘আগে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও এখন নির্যাতন রোধে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব ১০ সদস্যের যৌথ কমিটি করেছে। নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই কমিটি যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’সৌদি আরবের গণমাধ্যমগুলোও জানাচ্ছে যে, নির্ধারিত সময়ে কর্মী পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। গত শনিবার সৌদি গেজেটের খবরে বলা হয়, সৌদি নাগরিকরা অভিযোগ করেছেন, কয়েক মাস অপেক্ষা করেও তারা বাংলাদেশি গৃহকর্মী পাচ্ছেন না। অপেক্ষার পরও বাংলাদেশি গৃহকর্মী না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে দেশটির একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা পুরুষ ও নারী গৃহকর্মী সমান সমান নেওয়ার দাবি তুলেছে।