সোনার শাড়ি পরিহিতা দেবী দুর্গা
কলকাতা থেকে মীরা নায়ার : মধ্য কলকাতার লেবু পার্ক এলাকার সন্তোষ মিত্র স্কয়ারের সোনার শাড়ি পরিহিতা দেবী দুর্গা। ২০১৫ সালে কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক সর্বজনীন পূজা কমিটি ৮৩ ফুট উঁচু দুর্গাপ্রতিমা গড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য কলকাতাবাসীর, পঞ্চমীর দিনেই সেই দুর্গার মুখ ঢেকে দিয়েছিল পুলিশ। ভিড় সামলাতে পারবে না—এই অজুহাতে তারা দুর্গাপ্রতিমা দর্শন বন্ধ করে দিয়েছিল। গত বছর এই দেশপ্রিয় পার্ক ১ হাজার হাতের দুর্গা গড়ে ফের হইচই ফেলে দিয়েছিল। এবার তারা মণ্ডপ গড়েছে স্বর্গের ধাঁচে।
অন্যদিকে, এবার মধ্য কলকাতার লেবু পার্ক এলাকার সন্তোষ মিত্র স্কয়ার ২৮ কেজি সোনার শাড়ি পরিহিতা দেবী দুর্গা গড়ে সবার নজর কেড়েছে। এই দুর্গাকে একনজর দেখার জন্য উপচে পড়ছে ভিড়। এই দুর্গার কাপড়ের মূল্য ৮ কোটি রুপি। কলকাতার নামি জুয়েলারি হাউস ‘সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডস’ শাড়ির স্পনসর করেছে।
কলকাতার প্রখ্যাত ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল তাঁর ডিজাইনে তৈরি করেছেন শাড়িটি। সন্তোষ মিত্র স্কয়ারের এবারের ৮২তম বর্ষে এই সোনার শাড়ি পরিহিতা দুর্গাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। ৮ ফুট লম্বা শাড়িটি মুম্বাই, মেদিনীপুর ও কলকাতার স্বর্ণশিল্পীদের দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রায় দুই মাস ধরে শাড়িটি তৈরি করেছেন ৫০ জন কারিগর।
মধ্য কলকাতার লেবু পার্ক এলাকার সন্তোষ মিত্র স্কয়ারের সোনার শাড়ি পরিহিতা দেবী দুর্গা। অগ্নিমিত্রা পাল আজ শুক্রবার দুপুরে বলেন, শাড়ির নকশায় গড়া হয়েছে মা দুর্গার অন্যান্য অলংকার। শাড়িতে ফুল-পাতা, কল্কা, ময়ূর, প্রজাতির ডিজাইন করা হয়েছে।
থ্রি-ডির ইফেক্টে মনে হবে, শাড়ির ওপর যেন উড়ে বেড়াচ্ছে প্রজাপতি। শাড়িতে আছে ছিলে কাটার কাজ।দেবী দুর্গার পাশাপাশি কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও অসুরের পোশাক তৈরি করা হয়েছে দুর্গার শাড়ির সঙ্গে মিল (ম্যাচ) করে। তবে তা সোনার নয়, সোনার মতো করা হয়েছে। সব মূল শাড়িই তৈরি করা হয়েছে সাদা সিল্কের ওপর।
লক্ষ্মীকে পরানো হয়েছে সাদা রঙের ঢাকাই জামদানি। তার সবুজ পাড়ে রুপালি জারদৌসি। সরস্বতীর পাড় সবুজ-ম্যাজেন্টা। তাতে রয়েছে গোন্ডেন জারদৌসির কাজ। কার্তিক পরেছেন ব্লু কাঁথা স্টিচের পাড়। তাতে আছে সিলভার জারদৌসি। গণেশ পরেছেন লাল পাড়ের বালুচরি। তাতে আছে গোল্ডেন জারদৌসির কাজ। অসুর পরেছে সাদা ইক্কত। তাতে আছে অরেঞ্জ পাড়, গোল্ডেন জারদৌসির কাজ।
সন্তোষ মিত্র স্কয়ারের পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদের অনুকরণে। রয়েছে বিগবেন, লন্ডন ব্রিজ, মাদামতুসো, রয়্যাল গার্ড, ল্যাম্পপোস্ট, রাস্তায় রাস্তায় টেলিফোন বুথ। আর সেই প্রাসাদেই সপরিবারে থাকছেন মা দুর্গা।
এবার ১০১ ফুট উচ্চতার বিশ্বের সর্বোচ্চ দুর্গাপ্রতিমা গড়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই করে নিয়েছে আসামের রাজধানী গুয়াহাটির বিষ্ণুপুর সর্বজনীন পূজা কমিটি। তবে এখানের দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করা হয়েছে শুধু বাঁশ দিয়ে। অন্য কোনো উপকরণ ব্যবহার করা হয়নি। এই প্রতিমা গড়ছেন আসামের প্রখ্যাত শিল্পী নুরুদ্দিন আহমেদ। সঙ্গে ছিলেন আরও ৪০ জন সহশিল্পী। শিল্পী জানিয়েছেন, এই প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে ৫ হাজার বাঁশ। খরচ হয়েছে ১১ থেকে ১২ লাখ রুপি।
শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে কলকাতায় জনস্রোত নেমেছে। চতুর্থীর দিন থেকে শুরু হয়েছে দেবী দুর্গা দর্শনের এই জনস্রোত। সকাল থেকে রাত অবধি মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তদের ভিড় দেখা গেছে।আজ সকাল থেকে আকাশ ভারী। কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। তবুও মানুষ ছুটছে ছাতা মাথায় দিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে। এবার কলকাতায় ২ হাজার ৬০০টি মণ্ডপে দুর্গাপুজো হচ্ছে।
দুর্গাপূজা ঘিরে কলকাতা প্রতিবছরই মেতে ওঠে আনন্দ-উৎসবে। আলোর রোশনাই আর আতশবাজি চমকে কলকাতা ঝলমলে হয়ে ওঠে। পূজা দেখতে বাংলাদেশসহ দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ আসে কলকাতায়। পূজা ঘিরে দিন-রাত চলে সব ধরনের যানবাহন।