সুস্থ জঙ্গি সাকিরার মেয়ের-ভবিষ্যত কি?
মেডিকেল রিপোর্টার : জঙ্গি সাকিরার মেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকে) ২০ দিন ধরে চিকিৎসাধীন। কেউ তার খোঁজ নিচ্ছেনা। কেই বরতে পারছে না তার ভবিষ্যত কি হবে? পুলিশ বলছে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে ? সাত বছর বয়সী ওই শিশুটির পাহারায় দায়িত্ব পালন করছেন ১০ জন পুলিশ। তবে সাকিরার ফাটানো বোমার স্পিন্টারে বিদ্ধ শিশুটি এখন আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গত ২৪ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে গতকাল পর্যন্ত কেউ তার খোঁজ করতে আসেনি। ফলে শিশুটিকে নিয়ে কী করা হবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না পুলিশ।
গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর পূর্ব আশকোনার ৫০ নম্বর সূর্য ভিলা নামের একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তনার সন্ধান পায় পুলিশ।
আস্তানাটি ঘেরাও করার কয়েক ঘণ্টা পর সেখান থেকে আত্মসমর্পণ করেন রূপনগরে নিহত জঙ্গি নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম মুরাদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা এবং পলাতক জঙ্গি নেতা মাঈনুল ইসলাম মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা মনি। তাদের দুজনের সঙ্গেই শিশু সন্তান ছিল। এই দুই নারী আত্মসমর্পণ করার কয়েক ঘণ্টা পর আত্মসমর্পণের নাটক করে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান কারাগারে বন্দী জঙ্গিনেতা সুমনের স্ত্রী শাকিরা। এ সময় তার সাত বছর বয়সী শিশুকন্যা আহত হয়।
২৪ ডিসেম্বর বিকালেই শিশুটিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে অপারেশন করানোর পরে দুদিন রাখা হয় পোস্ট অপারেটিভে। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ২০৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১০ নম্বর বিছানায় ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেলের ২০৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাইরে গিয়ে দেখা যায়, একটি বেঞ্চে বসে দায়িত্ব পালন করছেন চারজন নারী কনস্টেবল। একজন পুলিশ রয়েছে শিশুটির বিছানায়।
২০৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউকে প্রবেশ করতে দেখলেই ওই নারী পুলিশ সদস্যরা তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। পরে হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডে থাকা অন্য রোগীদের দর্শনার্থীদের প্রবেশের অনুমতি দেন। জানা যায়, সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পাঁচজন নারী কনস্টেবল এবং রাত আটটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত পাঁচজন নারী কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করেন।
একজন পুলিশ সদস্য জানান, শিশুটি এখনো কোনো কথা বলতে পারে না। সে কিছু খাবে কি না, এমন প্রশ্ন করলে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর শিশুটি মাথা নেড়ে উত্তর দেয়। সারাদিনে একটি কথাও বলে না- এমন নজির আছে বলেও জানান ওই পুলিশ সদস্য।
জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক খাজা আবদুল গফুর বলেন, শিশুটির অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো। চিকিৎসকদের পরামর্শমতেই তাকে সকল প্রকার সেবা দেওয়া হচ্ছে। শিশুটির বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। পরে তার মা শাকিরা বিয়ে করেন সন্দেহভাজন জঙ্গি নেতা সুমনকে।
সুমনই শিশুটির মাকে জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ধ করেন। তবে শিশুটির মা শাকিরার পরিবার সম্পর্কে কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। কোনো স্বজন নিতে আসেনি শিশুটিকে। এখন এই শিশুটির বিষয়ে পরবর্তী করণীয় কী হবে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যোগাযোগ করা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শিশুটির কোনো স্বজন আদালতে আবেদন করে তার জিম্মায় নিতে পারেন। আর যদি কেউ না আসে, নিতে না চায় তাহলেও আদালতের সিদ্ধান্ত মতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’