• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সুশীল সমাজের অনেকেই অসাংবিধানিক পক্ষের ক্ষমতা গ্রহণে আগ্রহী-হাসিনা


প্রকাশিত: ৩:৩৮ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ১৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৯ বার

 

নিউইয়র্কে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছবি : প্রথম আলো

 

 

 

 

শফিক আজিজি.ঢাকা:
দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কেউ ভুল করে থাকলে ভুলের খেসারত তাকেই দিতে হবে। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সরকারের আঁতাতের অভিযোগ নাকচ করেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, সুশীল সমাজের লোকজনের অনেকেই অসাংবিধানিক পক্ষের ক্ষমতা গ্রহণে আগ্রহী।
গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী এখন নিউইয়র্কে আছেন।

স্থানীয় সময় বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে এসে পৌঁছান। সেখানে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির দিশারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সবাইকে স্বাগত জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এম এ মোমেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী গত পাঁচ দিনে নিউইয়র্কে তাঁর বিভিন্ন কর্মসূচির বিবরণ তুলে ধরেন। এ সময় তিনি মার্কিন ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগেরও আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নে তাঁর ব্যক্তিগত আগ্রহের কথা তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র নেতাদের সামনে তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, ৪০ বছর আগে বঙ্গবন্ধু পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে যে নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশ এখনো তা মেনে চলছে।

জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, সরকারের সঙ্গে জামায়াতের কোনো আঁতাত হয়নি।
আঁতাত হলে বিচার কী করে হয়—এ প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন। সাঈদীর ফাঁসির রায় তো আমি দিইনি, আদালত দিয়েছে। বিচারটা এত দিন পরে আওয়ামী লীগ করছে বলেই কী এসব প্রশ্ন উঠছে।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন জিয়া।
দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে কি না—এমন প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের সংজ্ঞা জানতে চান। তিনি বলেন, দেশে এমন কী পরিস্থিতি বিরাজ করছে যে, সংলাপে বসার প্রয়োজন। নির্বাচন কে বানচাল করতে চেয়েছিল, তারা রাজনৈতিক ভুল করেছিল। ভুলের মাশুল তাদেরকেই দিতে হবে। এখন আলাপ করে তাদেরকে ​কি ক্ষমতায় আনতে হবে?
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ শান্তিতে আছে। তাদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দারিদ্র্য দূর হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি ছয় ভাগ অর্জিত হয়েছে। এ অবস্থায় মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা বা ভাবনার কোনো কারণ তিনি দেখেন না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ব্যবসা করার জন্য আসিনি। আওয়ামী লীগ জানে, কীভাবে দেশ চালাতে হয়। দেশে দুর্নীতি হলে উন্নয়ন সম্ভব হতো না।’
বিদ্যুৎ, শিক্ষা খাতের উদাহরণ দিয়ে শেখ হাসিনা দাবি করেন, সর্বত্র উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে সরকারের দক্ষতা ও যোগ্যতার কারণে। আওয়ামী লীগ কখনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল, তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি। বর্তমান সরকার দুর্নীতি নিয়ে সতর্ক আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার জন্ম নিতান্ত গ্রামে, টুঙ্গিপাড়ায়। আমার কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। পাসপোর্ট ভিসার প্রয়োজন নেই।’

তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁর জন্ম শিলিগুড়িতে, প্রয়োজনে পাসপোর্ট ভিসার জন্য তাঁকেই ভাবতে হবে।’

সুশীল সমাজ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দেওয়া প্রাইভেট টিভি চ্যানেল, বিদ্যুৎ আর এয়ারকন্ডিশনে বসে তাঁরা আমার সরকারের সমালোচনা করেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, সুশীল সমাজের লোকজনের অনেকেই অসাংবিধানিক পক্ষের ক্ষমতা গ্রহণে আগ্রহী। এতে নিজেদের জন্য পতাকা, পদ, পদবি নিশ্চিত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা সমালোচনা করেন, তাঁদের তো আমার সরকারের প্রশংসা করার কথা। আমিই বেসরকারি টিভি দিয়েছি, টিভি চালু রাখার জন্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আজ শনিবারের বৈঠক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে আসা নেতাদের সঙ্গে সাধারণত সৌজন্য বৈঠক হয়। গতকাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা হলে তা পরে জানানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় বক্তব্য দেবেন। এ ছাড়া প্রবাসীদের আয়োজিত সংবর্ধনা সভায়ও যোগ দেবেন তিনি।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংস্থাটির সদর দপ্তরে গতকাল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। ওই অনুষ্ঠানে ৪০ বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সদ্য স্বাধীন দেশের জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তির কথা স্মরণ করা হয়।