সুরেন্দ্র-কাদের নৈশভোজ-বৈঠক!
বিশেষ প্রতিনিধি : রায় নিয়ে অস্থিরতার মাঝেই এবার সুরেন্দ্র-কাদের নৈশভোজ ও বৈঠকে আন্তরিক আলোচনা হয়েছে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া আপিল বিভাগের রায় নিয়ে চলমান অস্থিরতার মধ্যেই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার রাতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন ওবায়দুল কাদের। এসময় দুজনের মধ্যে সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতি ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের নৈশভোজ আপাতদৃষ্টিতে সামাজিক অনুষ্ঠান মনে হলেও এর রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক। নৈশভোজে যাওয়ার আগে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে এই দুজনের মধ্যে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানা যায়নি।
জানা গেছে, রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে একান্তে আলাপ করেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ও ওবায়দুল কাদের। এ সময় প্রধান বিচারপতি কাদেরকে জানান, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে তিনি কোথাও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় সংসদকে অসম্মান করে কোনো বক্তব্য লেখেননি। যারা এগুলো বলছেন, তারা পূর্ণাঙ্গ রায় না পড়ে কয়েকটা লাইন পড়েই এসব সমালোচনা করছেন।
এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি কাদেরের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং আইন সচিবের বিভিন্ন কর্মকান্ড নিজের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার কথা জানান। আলোচনায় বিচারপতি খায়রুল হকের প্রতিক্রিয়া জানানোর বিষয়টিও স্থান পায়। সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই আইন সচিব হিসেবে আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হককে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসকে সিনহা।
অন্যদিকে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ক্ষোভের বিষয়টি প্রধান বিচারপতির দৃষ্টিতে আনেন।
জানা গেছে, রায়ের পর্যবেক্ষণের আপত্তিকর অংশগুলো প্রত্যাহারের জন্যও সিনহার সঙ্গে আলোচনা করেছেন কাদের। ৭৯৯ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এ রায়ের কিছু অংশ দেখে সুযোগসন্ধানীরা সুযোগ নিতে পারে বলেও প্রধান বিচারপতিকে জানিয়েছেন তিনি।
বৈঠক সূত্র জানায়, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতি এবং নির্বাহী বিভাগের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, অচিরেই তা নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, আইন মন্ত্রণালয় এবং উচ্চ আদালত দুপক্ষের মধ্যেই কিছু ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। এ ভুল বোঝাবুঝিগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ের। এর রেশ রাষ্ট্রের ওপর যেন না পড়ে, সে জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একান্তে আলাপ করতে তার বাসার নৈশভোজে যোগ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।