• শনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

সীমান্ত ব্যাংক বিজিবির ঈদ উপহার-প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত: ৪:২৬ এএম, ২ সেপ্টেম্বর ১৬ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৬ বার

বিশেষ প্রতিনিধি  :  সীমান্ত ব্যাংক বদলে দেবে  বিজিবিকে-সীমান্তের মানুষকে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিজিবির প্রতিটি 5সদস্যের জন্যও বিশেষ আনন্দের দিন। মাত্র কয়েকদিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা।সীমান্ত ব্যাংকের উদ্বোধন এ বাহিনীর সকল সদস্যের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঈদের বিশেষ উপহার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোনো কিছু সন্দেহ হলেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান। কারণ, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ। আর এ ঐক্য অটুট রেখে জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হবে। আগামী প্রজন্ম যাতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পথে না যায়, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অভিভাবক, শিক্ষক সমাজসহ সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবি সদর দফতর পিলখানার ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে ‘সীমান্ত ব্যাংক’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই ধর্ম কখনো হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে না। এই ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে, তারা সব থেকে ক্ষতি করছে ইসলাম ধর্মের। পবিত্র ও শান্তির ধর্মকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের ছেলে-মেয়েরা কী করে, কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মেশে, কী পড়াশোনা করে; সেগুলো সম্পর্কে সব সময় খবর রাখতে হবে। সন্তানদের সমস্যা কিছু থাকলে তা শোনা, তাদের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হওয়া এবং তাদের আস্থা-বিশ্বাস যেন থাকে সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পরিচালনায় বিজিবির সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণের লক্ষ্যে ‘সীমান্ত ব্যাংক’ গতকাল থেকে যাত্রা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত এই বেসরকারি ব্যাংকটির যাত্রা শুরুর মাধমে বিজিবি সদস্যদের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন পূরণ হলো।

প্রধানমন্ত্রী প্রথম গ্রাহক হিসেবে নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটিতে একটি একাউন্ট খোলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিজিবির প্রতিটি সদস্যের জন্যও বিশেষ আনন্দের দিন। মাত্র কয়েকদিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা।

সীমান্ত ব্যাংকের উদ্বোধন এ বাহিনীর সকল সদস্যের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঈদের বিশেষ উপহার। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, এই ব্যাংক বিজিবির সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে।’

বিজিবির সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সুনামকে অক্ষুণ্ন রাখবেন। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নে বিজিবির সদস্যদের আরো নিবেদিত হতে হবে। মনে রাখবেন এ দেশটি আমাদের সকলের।

তাই আসুন, সকলে মিলে কাজ করে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করি। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি-জামায়াতের আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, সরকারি সম্পদ ধ্বংস, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বনির্ভরতা অর্জনে প্রতিটি বাহিনীকে আমরা সহায়তা করতে চাই। আজ যে সীমান্ত ব্যাংক চালু হচ্ছে তা বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট-এর একটি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান। আমি আশা করি, ‘বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ আরো নতুন নতুন উপার্জনশীল প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। তিনি বলেন, এ ব্যাংকের আয় বিজিবির মুক্তিযোদ্ধা সদস্য, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ও তাদের পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের জন্যও প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা প্রদান করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিজিবির নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত ‘আলোকিত সীমান্ত’ ও ‘সমৃদ্ধির পথে সীমান্ত’র মতো বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নেও এই ব্যাংক সহায়তা দেবে, যা সীমান্ত অপরাধ রোধে ভূমিকা রাখবে। বিজিবি সদস্যের যোগ্য সন্তানদের এ ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, যা বেকারত্ব হ্রাসে ভূমিকা রাখবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশীদার হিসেবে বিজিবি তাদের উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব গভীর দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসামরিক প্রশাসনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা ও দেশগঠনমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিজিবির ভূমিকা ও পেশাদারিত্ব আজ সর্বমহলে প্রশংসিত।

তিনি বলেন, সীমান্তে বিজিবি’র কঠোর অবস্থানের ফলে চোরাচালান, মাদক পাচার, নারী-শিশু পাচার ও সীমান্ত অপরাধ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। বিজিবি-বিএসএফ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারের ফলে সীমান্তে নিহতের ঘটনা কমে এসেছে। এছাড়া কোনো কারণে বিএসএফ’এর হাতে বাংলাদেশি নাগরিক আটক হলে প্রয়োজনীয় যোগাযোগের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে।

সীমান্তরক্ষী বাহিনীটির অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অসাধারণ ভূমিকা রয়েছে। এ বাহিনীর অসংখ্য যোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক বেদনাদায়ক ঘটনায় আমাদের এ বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা শহীদ হয়েছেন। আজকের দিনে তাদের আমি স্মরণ করছি

তিনি বিজিবিকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন- ২০১০ পাস করেছি। বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে আরো শক্তিশালী করে ‘বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো’ স্থাপন করেছি। ভারত এবং মিয়ানমারের সাথে ৪৭৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় এবছর ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন ৫৫টি বিওপি নির্মাণ করছি। বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের যে দুর্গম সীমান্ত রয়েছে তা সুরক্ষার জন্য ‘সীমান্ত সড়ক’ নির্মাণের একটি প্রকল্প গত ৭ জুলাই একনেকে অনুমোদন দিয়েছি। এছাড়া বিজিবি’র নিজস্ব এয়ার উইং গঠন করে দিয়েছি যা এর অপারেশনাল সামর্থ্যকে আরো বৃদ্ধি করেছে।

প্রতিটি বাহিনীকেই যুগোপযোগী ও শক্তিশালী করতে তার সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌ বাহিনী এবং বিমান বাহিনীর জন্যও যৌথ একটি ব্যাংক চালু করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দারিদ্র্যের হার ৫৭ ভাগ থেকে ২২ দশমিক ৪ ভাগে নেমে এসেছে। ২০২১ সালের মধ্যে এই হারকে আরো ৮-১০ ভাগ আমরা কমাতে চাই। তাহলে কেউ আর দরিদ্র বলে আমাদের কটাক্ষ করতে পারবে না। আমরা সেটা করতে পারবোই ইনশাআল্লাহ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, সীমান্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সীমান্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোখলেসুর রহমান ব্যাংকটির ওপর একটি অডিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ উচ্চপদস্থ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, এ বছর ২১ জুলাই প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে সীমান্ত ব্যাংক বাংলাদেশ বাংকের ‘সিডিউলড ব্যাংক’ হিসেবে নথিবদ্ধ হয় এবং ১ আগস্ট এটি গেজেটভুক্ত হয়।