‘সিনহা-দুর্নীতি অর্থপাচারে অভিযুক্ত’
বিশেষ প্রতিনিধি : সিনহা-দুর্নীতি অর্থপাচার নৈতিক স্খলনে অভিযুক্ত-সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিদেশে বসে যে বই লিখেছেন, তাতে দেশের বিচার বিভাগের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।তিনি বলেছেন, আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা সে সময় প্রধান বিচারপতি সিনহার সঙ্গে কেন বসতে চাননি- তা প্রকাশ পেলে আরও দুর্গন্ধ ছড়াবে। তাতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হবে।মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হল, বিচারপতি সিনহা যা করছেন এটা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি উনি নিজেই নষ্ট করছেন।এর ব্যাখ্যায় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনি প্রধান বিচারপতি থাকার সময় উনার সঙ্গে যারা বিচারকার্য পরিচালনা করেছেন, তাদের সম্পর্কে কোনো রকম কটূ মন্তব্য করা বা বাজে কথা বলা খুবই অগ্রহণযোগ্য এবং এই কাজটা করে উনি নিজেই বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।বলা হয়, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
সরকারের পক্ষ থেকে তার অসুস্থতার কথা বলা হলেও ১৩ অক্টেবর বিদেশে চলে যাওয়ার সময় বিচারপতি সিনহা বলে যান, তিনি অসুস্থ নন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় তিনি ‘বিব্রত’।তার ছুটির মেয়াদ শেষে ১১ নভেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিচারপতি সিনহা পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। এর এক বছরের মাথায় বিদেশে বসে বই লিখে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি।
‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে আত্মজীবনীমূলক ওই বইয়ে তিনি দাবি করেছেন, তিনি দেশ ছেড়েছেন ‘হুমকির মুখে’; একই কারণে বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। সিনহা লিখেছেন, ২০১৭ সালে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে ঐতিহাসিক এক রায় দেওয়ার পর বর্তমান সরকার আমাকে পদত্যাগ করতে এবং নির্বাসনে যেতে বাধ্য করে।
এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই সরকারের আমলে অনেক বিচারপতি কাজ করে গেছেন। এদের কেউ তো সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি! উনি তো (এস কে সিনহা) স্পষ্ট করেননি, কেন উনার সঙ্গে উনার সঙ্গী বিচারপতিরা একসঙ্গে বসতে (আপিল বিভাগের এজলাসে) চাননি।
পদত্যাগ করার পর বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বলা হয়, ওইসব অভিযোগের কারণে আপিল বিভাগের অন্য বিচারকরা আর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে মামলা নিষ্পত্তিতে রাজি নন।সে প্রসঙ্গ টেনে মাহবুবে আলম বলেন, অন্য বিচারপতিরা তার (এস কে সিনহা) সঙ্গে কেন বসতে চাননি, সে কারণগুলো তো তিনি বলেননি। সেগুলো তিনি যদি উল্লেখ করেন, তবে দুর্গন্ধ আরও ছড়াবে। সেগুলোতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হবে।
অন্য বিচারপতিরা তখন কেন এস কে সিনহার সঙ্গে বসতে চাননি জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, “আমরা যা জেনেছি কাগজ পড়ে জেনেছি। কোনো বিচারপতির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলিনি। উনার সঙ্গে অন্য বিচারপতি সহকর্মীরা বসতে অস্বীকৃতি দেখিয়েছেন। আমার মনে হয় না, এমন ঘটনা পৃথিবীতে আর কোথাও ঘটেছে।এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সিনহার বইটিতে যদি কোনো বর্তমান বিচারপতি সম্পর্কে কোনো কথা বলা থাকে এবং তারা যদি মনে করেন, তবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”