• শনিবার , ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

সিআরপির বেহাল দশা


প্রকাশিত: ৩:৪৭ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৮ বার

 


বেডশিট নাই পেপার দিচ্ছে: ক্ষুদ্ধ সারজিস-

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের খোঁজ খবর নিতে এবং চিকিৎসার মান দেখতে সাভারে অবস্থিত পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) পরিদর্শন করেছেন সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি সকালে সাভার সিআরপি’তে ভর্তি রোগীদের খোঁজখবর নেন। কীভাবে তারা আহত হয়েছেন এবং চিকিৎসায় কোনো অবহেলা রয়েছে কিনা, খাবার এবং পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

সিআরপি হাসপাতাল পরিদর্শন ও আহত রোগীদের খোঁজখবর নিয়ে সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, সাভার সিআরপিতে আমাদের অর্ধশতাধিক আহত ভাই-বোনেরা ভর্তি আছে। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আমরা এখানে এসেছিলাম। তার আগেই আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ গিয়েছে। অনেক ছবি এবং ভিডিও পেয়েছি। এখানকার পরিবেশ অনেক খারাপ।

এখানে সবচেয়ে বড় অভিযোগটি পেয়েছি এখানে যারা স্টাফ ভাই-বোনেরা রয়েছেন, আমরা তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা প্রত্যাশ করি। কিন্তু তাদের ব্যবহার সম্পর্কেই সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এখানে রোগীদের বেডশিটের পরিবর্তে পেপার দেওয়া হচ্ছে। একটা পেপার যদি ক্ষতস্থানে লাগে যেখানে গুলি লেগেছে, ওই জায়গায় পেপার দেওয়া মানে আরও বেশি ইনফেকশন করবে, ময়লা লাগবে। এই পেপারতো দোকান থেকে কেজি দরে কিনে আনা হয়।

আমরা চাই অতীতে যা হয়েছে হয়েছে। আজকের পর থেকে তারা যেন নিজের ভাইবোন মনে করে রোগীদের সাথে ব্যবহার করে। দ্বিতীয়ত এখানে খাবারের মান অত্যন্ত খারাপ। সবাই এটা নিয়ে নেগেটিভ মন্তব্য করেছে। যেদিন অভিযোগ দেওয়া হয় সেদিন একটু ভালো। তারপরেই আবার যে যার মন মতো খাবার দেয় এবং মানও কমে যায়।

আমরা আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট করে বলছি এগুলো ঠিক করতে হবে। রোগীকে রোগীর মতো দেখতে হবে, সেবা দিতে হবে। আরেকটা সমস্যা হলো, এখানে আমরা কিছু বেড দেখেছি। কেবিনগুলো ২-৩ বছর আগের, পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব পরিত্যাক্ত রুমে কেন আমাদের ভাই-বোনেরা থাকবে। সেখানে মশার উপদ্রপ।

খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং নোংরা। এটা দেখে মনে হয় একটা গোডাউন। কিন্তু এখানে রোগীরা থাকতেছে। আমার মাথায় ঢুকছে না এখানে যে মানুষগুলো কাজ করে তাদের কি পরিবার নাই। তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কি অন্য হাসপাতালে যায় না। যারা হাসপাতালে রোগী হয়ে যায় তারা একটা অসহায় অবস্থার মধ্যে থাকে। তাদের জিম্মি করে এরকম ব্যবহার করার কোনো মানে হয় না।

যারা এখানে সেবা দেওয়ার কাজ করছে তাদের ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো একটা রোগী হাসপাতালে ভালো ব্যবহার পেলেই অনেকটা ভালো হয়ে যায়। তারা যদি এই জায়গাটার দায়বদ্ধতা না বুঝে, তাদের কাজ কি সেটা না বুঝে তাহলে তো এখানে কাজ করার কোনো দরকার নাই।

একটা রোগীর সাথে আপনার যদি ভালো ব্যবহার করার মানসিকতা না থাকে তাহলে আপনার এই জায়গায় কাজ করার দরকার নাই। আপনি অন্য চাকরি করেন। আমরা আসছি এই খবর শুনে দ্রুত সেগুলো স্যাভলন দিয়ে পরিস্কার করা হচ্ছে। এটা কি একদিনের জন্য পরিস্কার রাখার বিষয়? এটাতে ৩৬৫ দিন পরিস্কার রাখার দরকার। আমাদের একটি টিম প্রশাসনের সাথে কথা বলতে আরও একাধিকবার আসবো।

স্থানীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে সার্জিস বলেন, এখানে যারা আমাদের সাংবাদিক ভাই-বোনেরা আছেন এখানকার অনিয়মগুলো আপনাদের তুলে ধরতে হবে। এটা আপনার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত দায়বদ্ধতা। এই অভ্যুত্থানে রাস্তায় কিন্তু কোনো তেলবাজ, তোষামোদকারী নামে নাই। রাস্তায় নামছিলো যাদের ওই বিবেকবোধটুক আছে। আমরা বিশ্বাস করি সাভারে যারা আমাদের সাংবাদিক ভাইবোন আছেন তাদেরও ওই বিবেকবোধটুক আছে।

আপনারা কাজের মাধ্যমে এটা আমাদের প্রমাণ করবেন। এখানকার অনিয়মগুলো তুলে ধরবেন। তাহলেই আমরা ছুটে আসতে পারবো আপনাদের এখানে। সবসময় চাইলেও ভাই আমরা সবজায়গায় যেতে পারি না। ওই সংবাদ আমাদের কাছে আসে না। আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ থাকবে এইখানে যদি এ রকম কোনো সিন্ডিকেট তৈরি হয় যারা রোগীদের জিম্মি করে তাদের ব্যবসা করছে, তাদের পরিচয় আপনারা দেশের সামনে দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরবেন।

সিআরপি পরিদর্শনকালে ভর্তি রোগীরা সমন্বয়ক সারজিস আলমের কাছে তাদের সুবিধা অসুবিধা এবং চিকিৎসা ও খাবার সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যর কথা তুলে ধরেন। রোগীরা বলেন, এখানে আমাদের ঠিকমতো সেবা দেয়া হচ্ছে না। খাবার এবং পরিবেশও অনেক খারাপ। একাধিকবার অভিযোগ করার পরও কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এ সময় এক রোগীর সাথে সারজিস আলমকে সেলফি তুলতে দেখা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ আতাউর রহমান খাঁন বলেন, আজকে যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত রোগীদের দেখতে এসে হাসপাতাল পরিদর্শন করে আমাদের সেবার মান নিয়ে অভিযোগ করেছেন আমরা অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে মিটিং করে ব্যবস্থা নিব। আমরা চেষ্টা করবো তারা যেসব বিষয়ে অভিযোগ করেছে সেগুলো ঠিক করার। আমরা আরও বেশি সতর্ক এবং সচেতন হবো।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে একটা টিম এসে আমাদের এখানে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতো। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে তারা আর আসেন না। সেজন্য আমরা একটু বিপদে পড়ে গেছি। আমাদের এখানে জনবল সংকট আছে। ম্যানেজমেন্টকে বলা হয়েছে এখানে পরিস্কার পরিচ্ছনতার জন্য আরও বেশী জনবল প্রয়োজন। আমরা খুব দ্রুত এখানে লোক নিয়োগ করব এবং আমাদের যে সমস্যাগুলো উঠে এসেছে সেগুলো আর থাকবে না।

সবশেষে তিনি বলেন, আমরা এখানে যারা কাজ করি সবাই নিজেকে ভলান্টিয়ার মনে করি। সিআরপি’র প্রতিষ্ঠাতা ভেলরী এন টেইলর আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। সিআরপি হাসপাতাল পরিদর্শন ও আহত রোগীদের খোঁজ খবর নেওয়ার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমের সাথে তার সহযোদ্ধারাও উপস্থিত ছিলেন।