• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

সার্ক নিয়ে ভারতের দাদাগিরি-আঞ্চলিক সহযোগীতা ব্যাহত


প্রকাশিত: ৯:৫২ পিএম, ১৯ অক্টোবর ১৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৭১ বার

saarc_112647fশফিক আজিজি.ঢাকা:

আগামী নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে নেপালের  কাঠমান্ডুতে যে সার্ক সম্মেলন হবার কথা রয়েছে তা সন্ত্রাসী হামলার হুমকিতে পড়ে ব্যাহত হতে পারে। ভারত ইতিমধ্যে নেপালকে ওই সম্মেলনে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কা দেখিয়েছে। নেপাল সরকারকে এক গোপনীয় চিঠি দিয়ে ভারত সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, সার্ক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বড় ধরণের সন্ত্রাসী হামলা ঘটতে পারে যা জানতে পেরেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। এ নিয়ে নেপালের মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।

নেপালকে ভারতের  তরফ থেকে দেয়া চিঠিতে আরো বলা হচ্ছে আল-কায়েদা বা ভারতীয় মুজাহিদিন তরফ থেকে কাঠমান্ডুতে সার্ক সম্মেলনে ওই হামলা হতে পারে। এছাড়া নেপালে ভারতের দূতাবাস থেকে কর্মকর্তাদের অপহরণ বা এ দুটি দেশের বিমান হাইজ্যাকের মত ঘটনাও ঘটাতে পারে জঙ্গিরা। তবে নেপালের গোয়েন্দা সংস্থা এধরনের হামলা নিয়ে সন্দেহ করছে। এমনকি তারা এও সন্দেহ করছেন যে সার্ক সম্মেলনকে সামনে রেখে এধরনের জঙ্গি তৎপরতার আশঙ্কা দেখিয়ে ভীতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে যাতে নেপালের সার্ক সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব না হয়। এধরনের আশঙ্কা এর আগেও করেছে ভারত।

এদিকে ভারতের তরফ থেকে সার্ক সম্মেলন নিয়ে এ আশঙ্কা এমন সময় করা হল যখন নেপাল চীন থেকে ১’শ মিলিয়ন টাকার নিরাপত্তা সরঞ্জাম কিনেছে। আর তা কেনা হয়েছে সার্ক সম্মেলনকে সামনে রেখেই। এসব সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে মেটাল ডিডেক্টও, স্ক্যানারস, সিসিটিভি ও ১০টি বিলাসবহুল যানবাহন। নেপাল থেকে এক প্রতিনিধি চীন সফরে গেলে তাদের হাতে এসব নিরাপত্তা সরঞ্জাম তুলে দেয়া হয়। গত জুন মাসে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়ান ইয়াং নেপাল সফরে এসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালাকে সার্ক সম্মেলন আয়োজনে বিভিন্ন সহায়তার আশ্বাস দেন।

এছাড়া সার্কে চীন অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, জাপান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, মিয়ানমার ও মৌরতানিয়ার মত পর্যবেক্ষক দেশ হলেও এখন  দক্ষিণ এশিয়ার এ সহযোগিতা জোটে সদস্য হিসেবে যোগ দিতে চাচ্ছে। যার বিরোধীতা করে আসছে ভারত। এছাড়া সার্কের সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে কেননা
দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নিয়ে দুটি দেশের মধ্যে আলোচনায় সীমাবদ্ধ ও এ নিয়ে তৃতীয় বা একাধিক দেশের কোনো সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ না থাকায় সার্ক এগুতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে সার্ক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অনেক অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে কোনো সমাধানে পোঁছানো সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে সার্ক গঠিত। তবে চীনের সার্ক সদস্য হওয়ার ব্যাপারটি ভারত সুনজরে দেখছে না বলে আন্তর্জাতিক বিশেøষকরা মনে করছেন। অথচ ভারত তুরস্ক ও রাশিয়াকে সার্কের পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চীন সার্কের সদস্য হলে ভারত এ জোটে তার প্রভাব অনেকটাই খর্ব হবে বলে মনে করে।

ঢাকায় গত ১৩তম সার্ক সম্মেলনে নেপালের রাজা জ্ঞ্যানেন্দ্র শাহ চীনকে সদস্য করার জন্যে সুপারিশ করলে তাতে সম্মত হয়নি। এদিকে সার্ক সংস্কার না হলে এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্ভব হয়ে উঠছে না। কারণ সদস্য দেশগুলো কোনো স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সার্ক’এর অন্য সদস্য দেশগুলোর বহু অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাচ্ছে না এবং এসব ব্যাপারে ভারতের তরফ থেকে শুধু মাত্র আশ্বাস মিলছে। সার্কভুক্ত দেশুগুলোতে দারিদ্র বিমোচন , বিনিয়োগ, এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে খুব অল্পই আগানো গেছে।

গত ফেব্রæয়ারিতে মালদ্বীপে সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও ভারতের অনাগ্রহে বেশিদূর আগানো সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য ভারতের এক্সটারনাল এ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী সালমান খুরশিদ এ নিয়ে মালদ্বীপে গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি সে সময় সার্কের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সংস্কারের ওপর জোর দিলেও তারপর আর কোনো উদ্যোগ কার্যত নেয়া হয়নি। সে সময় মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট এ সংস্কারে সমর্থন দেন। সার্কে চীনের সদস্য হওয়ার ব্যাপারে নেপাল ও শ্রীলংকা আগ্রহী হলেও ভারত তাতে কোনো সাড়া দিচ্ছে না।

সার্ক কি ভারত চালিত নাকি ভারত কেন্দ্রিক বরং তারচেয়ে বড় সার্কে ভারতের প্রভাব সবসময় ছিল ও আছে।  চীন সদস্য হিসেবে  সার্কে যোগ প্রভাব বলয়ে ভারসাম্য আসবে বলে মনে করছে অন্য সদস্য দেশুগুলো। কিন্তু ভারতের কথা হচ্ছে চীন সার্কে সদস্য হিসেবে যোগ দিলে দেশটির সঙ্গে তার যে দ্ব›দ্ব রয়েছে তা আরো বৃদ্ধি পাবে। ভারত এও বলছে চীন গণতান্ত্রিক দেশ নয়, দেশটিতে স্বৈরশাসন চলছে। কিন্তু সার্ক প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সাবেক সামরিক শাসক  ও পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ভ‚মিকা রেখেছেন।

চীনের অর্থনীতি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, অন্যান্য দেশে যেভাবে চীন বিনিয়োগ করছে তাতে সার্ক সদস্য হয়ে উঠলে  এশিয়ার আঞ্চলিক উন্নয়নে তা অবশ্যই কাজে লাগবে। চীন পূর্ব এশিয়ার  বা ভ‚কৌশলগত অবস্থানের কারণেই ভারত চীনকে সার্কের সদস্য হতে দিতে রাজি নয়।