সারা দেশবাসী দেখতে চায় এবার অলরাউন্ডার নাসির কে?
স্পোর্টস রিপোর্টার : টাইগারদের জেতা ম্যাচ হারতে হয়েছে টেল এন্ডারে নাসিরের মত অলরাউন্ডার না থাকার কারণে। প্রস্তুতি ম্যাচে নাসির থাকলে অন্তত ২১ রানে হারতো না বাংলাদেশ।যেটা করতে পারেনি মোশারফর।আর এক কারণেই ইংল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে নাসিরকে দলে নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন দেশের একাধিক সাবেক ক্রিকেটার ও বিশেষজ্ঞরা।
ম্যাচে ভালো অবস্থানে থেকেও শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের কাছে ২১ রানের হারটা পোড়াচ্ছে বাংলাদেশকে। এমন হার মেনে নেওয়া কঠিন! ৫২ বলে দরকার ৩৯ রান। হাতে ৬ উইকেট। অথচ এমন পরিস্থিতিতেই ১৭ রানের মধ্যে পড়ে গেছে বাকি সব উইকেট!
এই পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে সাবেক ক্রিকেটার আতাহার আলী খান বলেছেন, আমার দৃষ্টিতে পাঁচটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, নাসিরকে দ্রুত একাদশে দরকার। দুই কারণে। আমাদের লোয়ার অর্ডার আর স্লগ ওভার—এই দুই ব্যর্থতা ঘোচাতে ফিনিশার নাসিরকে অবশ্যই নিতে হবে। এই দুই মূল কারণ ছাড়াও নাসিরের ফিল্ডিং আর স্পিনও আমাদের এখন খুব দরকার।
১২.৩ ওভারে ৬৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ওদের বড় একটা জুটি হয়েছে চতুর্থ উইকেটে। তাসকিনের বলে যে ক্যাচটা দিয়েছিল বেন স্টোকস, এই পর্যায়ের ক্রিকেটে সেটি মাহমুদউল্লাহর অবশ্যই ধরা উচিত ছিল। যদিও সেটি অনেক কঠিন ছিল। মাশরাফির বলে স্টোকসের আরও একটি ক্যাচ ছাড়ে মোশাররফ হোসেন। এরপর সে ৩১ রান যোগ করেছে। বাংলাদেশ হেরেছে ২১ রানে। ক্যাচ ফেলা খেলার একটা অংশ। তবে কাল যেভাবে বাংলাদেশ হেরেছে, তাতে কাঠগড়ায় তুলতেই হবে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের।
ব্যাটিং অর্ডারে সাতের পর একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডারের প্রয়োজনীয়তা খুব অনুভব হচ্ছে। ইংল্যান্ডের দেখুন ৯-১০ পর্যন্ত ব্যাটসম্যান। প্রস্তুতি ম্যাচে নাসির ভালো করেছে। সে অসাধারণ ফিল্ডার, ভালো অফস্পিনও করে। ইংল্যান্ড দলের টপ অর্ডারে বেশ কজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছে। নাসিরের মতো অভিজ্ঞ বোলার থাকলে সে কাজে লাগতে পারত। কিন্তু সে কার জায়গায় আসবে?
বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ নিয়মিত তিন পেসার নিয়ে খেলছে। এখন পেসার একজন কমিয়ে নাকি তিন পেসার নিয়েই নাসিরকে নেওয়া হবে, সেটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। আমি মনে করি তিন পেসারসহ নাসিরকে নেওয়া যেতে পেরে। নাসির খেলতে পারে মোশাররফের জায়গায়।
কিন্তু পেসাররা যেহেতু পুরো ১০ ওভারের কোটা শেষ করতে পারছে না, টিম ম্যানেজমেন্ট দুই পেসারকে নিয়েও খেলতে পারে। এতে কোনো সন্দেহ নেই, আমাদের সেরা একাদশটা কেমন হবে, এ নিয়ে আমরা এখনো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।
স্পিন আক্রমণে সাকিবের সঙ্গী কে হবে, সেটা এখন বিরাট চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আফগানিস্তান সিরিজে তাইজুল ভালো করতে পারেনি। এরপর মোশাররফকে দলে নিয়ে আসা হলো। সে অবশ্য আফগানদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ভালো করেছে, এ কারণে হয়তো তাকে সুযোগ দিয়েছে।
গত দুই বছরে দেখেছি, নিজেদের কন্ডিশনে স্পিনাররা বল টার্ন পায় কম। এ কারণে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো করতে পারছে না। কাল অবশ্য পিচটা ছিল ব্যাটিং সহায়ক। তাহলে ইমরুল-সাকিব বাদে টপ অর্ডার ব্যর্থ হলো কেন? নিজেদের উইকেট কি আমরা বুঝতে পারছি না?
ইমরুল-সাকিব দুর্দান্ত খেলেছে। এই দুইয়ের সঙ্গে টপ অর্ডারের আরেকজনের জ্বলে ওঠা দরকার ছিল। সাব্বির রহমানের দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছে ডেভিড উইলি। সেটি নিয়ে কথা নেই। কিন্তু মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ কেন থিতু হয়ে বল বাতাসে তুলে দিল? ব্যাটিং নিশ্চয়ই তারা অনেক ভালো বোঝে।
তাদের এ–ও বুঝতে হবে, দলের প্রয়োজনে যেমন শট খেলতে হয় আবার পরিস্থিতি বুঝেই শট খেলার লোভ সামলাতে হবে। তা ছাড়া প্রথম ১০ ওভারে দুই ওপেনার খুব একটা স্ট্রাইক রোটেট করতে পারেনি। এই ১০ ওভারে উঠেছে ৫০ রান, এর মধ্যে ৩২ এসেছে বাউন্ডারি থেকে। আর অতিরিক্ত থেকে ৪ রান। বড় শটের অপেক্ষায় না থেকে এক-দুই করে ১০-১২ রান যোগ করলে শেষ দিকে চাপ আরও কমে যেত।
একসময় বাংলাদেশকে অনেক লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়েছে আমাদের লোয়ার অর্ডার। শেষের দিকের ব্যাটসম্যানরা কখনো কখনো ঝড়ও তুলে শেষ কয়েক ওভারে ভালো রান এনে দিত। এখন যেন প্রথম ৫-৬ ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পরই সব শেষ। কাল তো শেষ ৬ উইকেট পড়েছে ১৭ রানে। এর মধ্যে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা কেউ দাঁড়াতেই পারেনি। যদিও বলের চেয়ে রানই লাগত কম। সেই চাপটাও তারা সামলে নিতে পারল না।
লোয়ার অর্ডারে একজন ব্যাটসম্যানের শূন্যতা কাল খুব অনুভব হলো, যে কিনা ২০-৩০ রান যোগ করে দলকে জয় এনে দেবে। এখানেও ভূমিকা রাখতে পারে নাসির। ঘরোয়া লিগেও দেখা গেছে, ও নামে এমন সময়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লোয়ার অর্ডার বা স্লগ ওভারের চাপটা সে–ই কাঁধে তুলে নেয়।