• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সাবধান-স্তন স্ফীতকরণ প্রক্রিয়ায় সর্বনাশ


প্রকাশিত: ৮:৩৬ পিএম, ৬ জুলাই ১৯ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩১৮ বার

ড. নূরুর রহমান : সাবধান-স্তন স্ফীতকরণ প্রক্রিয়ায় সর্বনাশ ডেকে আনবেন না। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য নারী অপারেশন করিয়ে তাদের স্তন স্ফীতকরণ করাচ্ছেন। তাদের দৃষ্টিতে এতে আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এমন কৃত্রিম উপায়ে স্তন স্ফীতকরণ বা আকৃতি বড় করাতে গিয়ে তারা নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছেন। তাদের অনেকেই এর ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।

অনেকে অস্বস্তিকর জীবন যাপন করছেন। এ অপারেশনকে সাধারণত ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এর ফলে ক্যান্সারের সম্ভাব্য যোগসূত্র আছে বলে একটি ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট বিষয়ক কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করছেন প্রায় আড়াইশত বৃটিশ নারী। তারা সবাই ওই কোম্পানির ক্লায়েন্ট বা তাদের কাছ থেকে সেবা নিয়েছেন।এসব নারীর স্তনে ‘অ্যালারগ্যান বায়োসেল’ ইমপ্লান্ট করা হয়েছে। এখন তারা একত্রিত হয়ে আইনী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ওই কোম্পানিটিকে দাঁড় করাচ্ছেন কাঠগড়ায়। বৃটেনে স্তন বর্ধিতকরণের ফলে ক্যান্সারের সম্পর্ক বা ঝুঁকির বিষয়টি সামনে আসে ২০১১ সালে।

যে আড়াইশ নারী অ্যালারগ্যান বায়োসেল ইমপ্লান্ট করিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ক্যান্সারের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বৃটেনে এই ইমপ্লান্ট বা স্তন বর্ধিতকরণ পদ্ধতি সবচেয়ে জনপ্রিয়। কিন্ত বৃটেনে অ্যালারগ্যান বায়োসেল বিক্রি প্রত্যাহার করে নিয়েছে কোম্পানিটি। আলাদাভাবে মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার বিষয়ক পণ্য নিয়ন্ত্রণকারী এজেন্সি পরীক্ষা করে দেখছে, স্তন বর্ধিতকরণের সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বা কোনো পাশ্বপ্রতিক্রিয়াকে ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট ইলনেস বা স্তন বর্ধিতকরণ সংক্রান্ত অসুস্থতাকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া হবে কিনা।

যে আড়াইশ নারী ওই মামলা করছেন তাদের মধ্যে ৬ জনের স্তনে অ্যানাপ্লাস্টিক লার্জ সেল লিম্ফোমা (এএলসিএল) নামের রিবল ব্লাড ক্যান্সার বেড়ে উঠছে বলে জানা গেছে। এর সঙ্গে স্তন বর্ধিতকরণের সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে অন্য যারা আছেন তাদের এমন ঝুঁকির বিষয়ে পর্যাপ্ত সতর্কতা দেয়া হয় নি। স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ পরামর্শ দিচ্ছে যে, যারা স্তন স্ফীতকরণ করিয়েছেন তাদের স্তনের ভিতর থেকে থলথলে কৃত্রিম সিলিকার ঝিল্লি তা প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ঘটনাটি বৃটেনের ৫ লক্ষাধিক নারীর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এসব নারী স্তন স্ফীতকরণ করিয়েছেন। মোট নারীর মধ্যে তাদের শতকরা হার ৩ ভাগ।

অসংখ্য নারীর স্তন স্ফীতকরণ অপারেশনে সহায়তা করেছেন জুলি হ্যারিস। এমন কি তিনি নিজেই নিজের স্তন স্ফীতকরণ করিয়েছেন। এখন তিনিও ওই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। দুই দশক ধরে তিনি ম্যানচেস্টারে হারলে মেডিকেল গ্রুপে কনসালট্যান্ট নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময়ে তিনি শত শত নারীর সঙ্গে বসেছেন। তাদেরকে স্তন স্ফীতকরণের পরামর্শ দিয়েছেন। জুলি হ্যারিসের বয়স এখন ৫৮ বছর। তার মধ্যে স্তন স্ফীতকরণ প্রযুক্তির ওপর আস্থা এতটাই বেশি ছিল যে, নিজেই নিজের অপারেশন করিয়েছেন।

তিনি ২০০৫ সালে নিজের স্তন স্ফীত করেন। কিন্তু ২০১২ সালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যে, স্তন স্ফীতকরণে ব্যবহৃত পিআইপি ফুটো হয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে জুলি হ্যারিস তার স্তনের ভিতর থেকে সেগুলো বের করে ফেলেন এবং তার স্থানে প্রতিস্থাপন করেন অ্যালারগ্যান ইমপ্লান্ট। গত বছর তার স্তন পরীক্ষা করে তাতে ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট-অ্যাকুয়ার্ড আনাপ্লাস্টিক লার্জ সেল লিম্ফোমা (বিআইএ-এএলসিএল) ধরা পড়ে।তারপর থেকে তাকে ৬ দফা কেমোথেরাপি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই অপারেশনে যে ঝুঁকি তা কোনো নারীকেই আগে বলা হয় নি। ১৯৯৭ সালে বিআইএ-এএলসিএল পদ্ধতি প্রথম রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর ঝুঁকি সম্পর্কে খুব বেশি নারীকে জানানো হয় নি।

এ সংক্রান্ত যে মামলা করা হবে সে বিষয়ে এরই মধ্যে বৃটেনের চ্যানেল ৪ একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করার কথা। তবে অ্যালারগ্যান বায়োসেল ইমপ্লান্টের সঙ্গে কেন ক্যান্সারের যোগসূত্র সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় নি।তবে এমনটা হতে পারে, এর ভিতর রয়েছে বিষাক্ত জেল এবং শেল। সার্জারির সময় সেগুলোতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে। বর্তমানে ইউরোপে এটি বিক্রির লাইসেন্স নিরাপত্তা ইস্যুতে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।