সাজেকে খাদ্য সংকটে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল সেনাবাহিনী
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন।সকাল থেকে হেলিকপ্টারে করে প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকার গ্রামগুলোতে খাদ্য বিতরণ শুরু হয়েছে।
সেনাবাহিনীর এ উদ্যোগে স্বস্তি ফিরে এসেছে এলাকাবাসীর। তারা সেনাবাহিনী এমন মহতি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। জুমের ফলন কম হওয়া, বনজ সম্পদ কমে যাওয়া এবং পাশাপাশি একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের জুম চাষের চাঁদাবাজির কারণে সাজেক ইউনিয়নে খাদ্য সংকটের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছে জুম চাষ ও বনজ সম্পদের ওপর আয় নির্ভর এসব গ্রামের ভুক্তভোগীরা।
দেশের সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন সাজেক। আয়তন ৬০৭ বর্গমাইল। যা দেশের যেকোনো জেলার চেয়েও বড়। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারতের মিজোরাম রাজ্য সন্নিহিত প্রাকৃতিক রূপে রূপময় ও অপার সম্ভাবনার জনপথ সাজেক। সমতল ভূমি থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় সাজেক অবস্থিত। এ পাহাড়ের চূড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়বে যেকোনো আগন্তুক।
সাজেকে লোকসংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার। সাজেকের রয়েছে, ঢেউ খেলানো অসংখ্য উঁচু-নিচু পাহাড়বেষ্টিত হৃদয়গ্রাহী সবুজ বনানী পূর্ণ। সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে নয়নাভিরাম নানান দৃশ্য। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলেছে নাম না জানা অসংখ্য নদ-নদী। নদীতে ভাসছে বাঁশের চালি। যা যাবে কাপ্তাই লেক হয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলে। রাস্তার দুধারে-চোখে পড়বে উপজাতীয়দের বসতবাড়ি বিচিত্রময় জীবনধারা।
একসময় সাজেক যাওয়া ছিল অনেকটা স্বপ্ন। সেনাবাহিনীর ১৯ ইসিবির সুবাদে কয়েক বছর আগে সাজেক পর্যন্ত রাস্তা হয়েছে। ফলে সাজেক এখন দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রও বলা যায়। নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে সাজেকে প্রতিদিন শত শত পর্যটকের আগমন ঘটছে। সেই সঙ্গে বদলে যেতে শুরু করেছে সাজেকবাসীর জীবন চিত্র। তবে সাজেকে বেশ কিছু দুর্গম এলাকা রয়েছে যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। প্রত্যন্ত এসব গ্রামে পায়ে হেঁটে পৌঁছতে লাগে ৫-৭ দিন।
সাজেকবাসীর আয়ের উৎস মূলত জুম চাষ ও বনজ সম্পদ। দুর্গম এলাকা উঁচু-নিচু পাহাড়ের আগুন জ্বালিয়ে আগাছা পুড়িয়ে প্রাকৃতিক সার তৈরি করে ধান, ভুট্টা, কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ আর্থাৎ জুম চাষের ওপরই ঐতিহ্যগতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। বর্ষা শুরুর আগেই জুম চাষিরা পাহাড়কে চাষাবাদের উপযোগী করে তোলেন আর বর্ষা শুরু হলেই সঙ্গে সঙ্গে জুমে বীজ বপন শুরু হয়। পুরো বছর জুমের ফসল বেচাকেনা করেই চলে জুম চাষিদের জীবন।
সাজেক ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শান্তি কুমার ত্রিপুরা জানিয়েছেন, গত বছর জুমের ধানসহ অন্যান্য ফসলের ফলন কম হওয়ার কারণে প্রায় দুই মাস আগে থেকেই খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামে।
খাদ্যাভাবসহ আর্থিক অনটনে ভুগছে সাজেকের উদোলছড়ি, নতুন জৌপুই, পুরান জৌপুই, নিউথাংমাং, নিউলংকর, ব্যাটলিংপাড়া, শিয়ালদাই, নিমুইপাড়া, হাগড়াকেজিং, দুলুছড়ি, দুলবন্যাসহ ২০টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা জানিয়েছেন, গত বছর জুমে ফলন কম হওয়ায় এবং এলাকায় গাছপালা কমে যাওয়ায় মানুষের আয়ও কমে গেছে। ফলে এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
তবে স্থানীয় এক কারবারি নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানিয়েছেন, একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসীরা গত বছর থেকে জুম চাষে আগাম চাঁদা ধার্য করে দেওয়ায় জুমিয়া পরিবারগুলো খাদ্য ও আর্থিক সংকটে পড়েছে। তবে সেনাবাহিনী অসহায় মানুষগুলোর মধ্যে খাদ্য বিতরণ শুরু করায় স্বস্তি ফিরেছে জুমিয়াদের মাঝে।
এদিকে বুধবার থেকে সাজেকের প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ও বিজিবির সহযোগিতায় চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। সকাল থেকে হেলিকপ্টারে করে দুর্গম এলাকায় চাল পৌঁছে দেওয়া হয়। বাঘাইহাট জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মুহাম্মদ ইসমাইল খাঁ দুপুরে কংলাকপাড়ায় নিজে চাল বিতরণ করেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সাজেকে সাময়িক খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় আর্তমানবতা সেবার অংশ হিসেবে ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও খাগড়াছড়ি রিজিয়নের পক্ষ থেকে সাজেকের প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় চারটি হেলিকপ্টারের সাহায্যে চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।