• বুধবার , ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

সাজবুলের নকল কাহিনী


প্রকাশিত: ১০:২৮ পিএম, ৭ জুন ২৪ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০২ বার

ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মারধরসহ বহু অভিযোগ-

 

 

জবি প্রতিনিধি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী সাজবুল ইসলাম পরীক্ষার হলে নকল নিয়ে ধরা পড়লেও তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ছাত্রলীগ নেতার দাবি তিনি নকল করেননি, ‘পাশের জনের খাতা’ দেখেছেন। সাজবুল ইসলাম ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের অনুসারী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারধরসহ আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে।

সোমবার (৩ জুন) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ‘সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ইন ইসলাম’ কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন নকল করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। হলে হাতেনাতে নকলসহ ধরা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার হল পরিদর্শক সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ছালেহ উদ্দীন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। এ সময় ‘সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ইন ইসলাম’ কোর্সের পরীক্ষায় হল পরিদর্শক ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ছালেহ উদ্দীন। পরীক্ষা চলাকালীন খাতার নিচে নকল রেখে লিখছিলেন সাজবুল।

দায়িত্বরত শিক্ষক ছালেহ উদ্দীন তা দেখামাত্র খাতা নিয়ে নেন। কিন্তু সেই ছাত্রলীগ নেতা সাজবুলের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ আবদুল ওদুদ। সাজবুল ছাত্রলীগ নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, যদি কোনো বিভাগের পরীক্ষার হলে নকলের ঘটনা ঘটলে, তাহলে প্রথমে নকলের প্রমাণসহ বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে সবকিছু যাচাই করার পর তা শৃঙ্খলা উপকমিটির কাছে পাঠায়।

শৃঙ্খলা উপকমিটিতে সবকিছু পর্যালোচনার পর অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর জন্য শাস্তি সুপারিশ করে শৃঙ্খলা কমিটির কাছে পাঠায়। সবশেষে শৃঙ্খলা কমিটিতে শাস্তি প্রদানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। তবে ছাত্রলীগ নেতা সাজবুল নকলসহ হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও বিভাগ থেকে তার নামে কোনো অভিযোগ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠানো হয়নি।

শৃঙ্খলা উপকমিটির আহ্বায়ক হলেন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ এবং অন্য সদস্যরা হলেন- কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হোসনে আরা, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জহুরুল ইসলাম।এ বিষয়ে ওই সেমিস্টারের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল ওদুদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফোনে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) জহুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি অসুস্থতার কথা বলে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে আরেকটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, যদি কোনো শিক্ষার্থীর নকলের বিষয়ে বিভাগ থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ লিখিত আকারে না পাঠানো হয়, তাহলে এতে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না। এক্ষেত্রে আমাদের কোনো দোষ নেই, বিভাগের দোষ।

অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতা সাজবুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে ফাও খাওয়ার পর খাবারের বিল চাওয়ায় ক্যান্টিনের এক কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগও রয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের আশেপাশের বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদাবাজি, বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলাসহ ক্যাম্পাসের সামনে চলাচলকারী বিভিন্ন বাস ও ট্রাকের ড্রাইভারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এসব অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে ছাত্রলীগ নেতা সাজবুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, নকল করিনি। তবে পাশের জনের খাতা দেখেছি। এ কারণে স্যার খাতা নিয়ে গেছেন। এছাড়া ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া ও বাসস্ট্যাণ্ডে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।