সাকিব-রনি’র কারণে হারলো বাংলাদেশ
এস রহমান/সাইফুল বারী মাসুম : সাকিব-রনি জিততে দিলোনা বাংলাদেশকে ।কেন পারল না বাংলাদেশ। এনিয়ে তৃতীয়োরের মত কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে এসেও জিততে পারল না টাইগাররা। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ক্রিকেটপ্রেমীদের।১৫ ওভারে ১২১ একেবারে কম টার্গেট ছিল না। যদিও ব্যাটসম্যান তামিম, সাকিবদের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
স্টেডিয়ামে দেখা গেছে, ১৫ ওভারে ১২১ নিশ্চয়ই অনেক বড় লক্ষ ছিলো ভারতের জন্যে । সেই লক্ষকে আরও বড় বানিয়ে ফেলার মতো করে বোলিং শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। প্রথম ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান ব্যয় করেছিলেন তাসকিন ও আল আমিন। এর মধ্যে আল আমিন তুলে নিয়েছিলেন রোহিত শর্মার উইকেটও। কিন্তু পরের দুটো ওভারেই রনি ১৪ ও সাকিব ১৫ রান ব্যয় করে লাগামটা হাতছাড়া করে ফেলেন।
অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে বোলিং এ্যাকশানে প্রথমেই সাড়া ফেলে দেয়ার পর অার কোন উইকেট কেন পড়ল না তা নিয়েও প্রশ্ন বড় প্রশ্ন রয়েছে! এরপরও রনি ও সাকিবের ৩ ওভার এবং এত রান দেয়া নিয়েও ম্যাচ হারার প্রশ্ন উঠেছে।
দেশপ্রেমিক মানুষ বলেছেন, প্রধম ম্যাচে ওই সাকিব ক্যাচ ফেলে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল।সেই সাকিব ফাইনালেও ব্যাটে এবং বলে বারোটা বাজিয়ে দিলো বাংলাদেশের।সাকিবের সঙ্গে শেষপেরেকটা মারল রনি।
আল আমিনের করা ১৪-তম ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরেই আনন্দে ভেসে গেলেন ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। সঙ্গী হলেন বিরাট কোহলিও। আর মাঠে থাকা লাল সবুজ জার্সি জড়ানো এগারোজন? হতাশায় মুহ্য! হতাশ গ্যালারিতে থাকা পঁচিশ হাজার দর্শকও।
ম্যাচটিকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা ছিল সারা বাংলাদেশের মানুষের। সে প্রত্যাশার গুড়ে বালি ঘটল বাংলাদেশী কতিপয়
ক্রিকেটারের কারণে। কোহলি-ধাওয়ান-ধোনিরা ম্যাচের আগেও আতংকে ছিল।শেষমেষ তারাই হঠাৎ বাঘ বনে গেলো কি করে তা নিয়েও প্রশ্ন ক্রিকেটপ্রেমীদের।
মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিরের সৌজন্যে ভারতের সামনে ১২১ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। বোলিংয়ে রোহিত শর্মাকে তাড়াতাড়ি ফেরানো গিয়েছিল। এর আগের তিনটি টি-টোয়েন্টিতেই বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছিলেন ভারতীয় ওপেনার, প্রায় ১৪৫ স্ট্রাইক রেটে তুলেছিলেন ১৭৫ রান! কিন্তু আজ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন আল আমিন। রোহিত ফিরতেই আশাও জেগেছিল, আজ কিছু একটা হবে! আজ আর আক্ষেপে পুড়তে হবে না।
কিন্তু রোহিতের পর যিনি এলেন, তিনি শুধু বাংলাদেশ কেন, যেকোনো দলের জন্যই সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম। মিরপুরের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ৯০ গড়ে রান করেছেন, আজও ধারাটা ধরে রাখলেন কোহলি। প্রয়োজনে এক-দুই, সঙ্গে বাজে বলে চার নিয়ে ম্যাচটাকে বাংলাদেশের হাত থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি। প্রতিটি বলে, প্রতিটি শটে যেন দেখিয়ে দিচ্ছিলেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।
কোহলিকে সঙ্গ দিয়ে গেলেন ওপেনিংয়ে নামা শিখর ধাওয়ানও। পুরো টুর্নামেন্টে তিনটি ম্যাচ খেলে করেছিলেন মাত্র ১৯। কে জানত, আজ ফাইনালেই নিজের সেরাটা ঢেলে দেবেন এই বাঁহাতি। কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু নিজের জাতটাও চিনিয়ে দিয়ে বলে রান করেছেন ধাওয়ান।
বাংলাদেশের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছেন, তবে কোহলি-ধাওয়ানকে কৃতিত্বটা দিতেই হবে টি-টোয়েন্টির দাবি মেনে অসাধারণ ব্যাটিংয়ের জন্য। ব্যাটের রেশমি পেলব ছোঁয়ানো শট, বাংলাদেশের ফিল্ডারদের জায়গা বুঝে রান বের করে নেওয়া…এই বিষয়গুলোই তো ম্যাচটা বাংলাদেশের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে।
আক্ষেপের মধ্যেও কিছু ব্যাপার বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে আশা জাগাবে। সবার আগে থাকবে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং আর সাব্বিরের নির্ভরতা। শুরুতে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে যে ১২০ রান এনে দিলেন এ দুজনই। মাহমুদউল্লাহ ১৩ বলে ৩৩, সাব্বির ২৯ বলে ৩২।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৫ ওভারে ১২০/৫ (তামিম ১৩, সৌম্য ১৪, সাব্বির ৩২*, সাকিব ২১, মুশফিক ৪, মাশরাফি ০, মাহমুদউল্লাহ ৩৩*; অশ্বিন ১/১৪, নেহরা ১/৩৩, বুমরাহ ১/১৩, জাদেজা ১/২৫, পান্ডিয়া ০/৩৫)
ভারত: ১৩.৫ ওভারে ১২২/২ (রোহিত ১, ধাওয়ান ৬০, কোহলি ৪১*, ধোনি ২০*; তাসকিন ১/১৪, আল আমিন ১/৩০, হায়দার ০/১৪, সাকিব ০/২৬, মাশরাফি ০/১৬, নাসির ০/২২)
ফল: ভারত ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শিখর ধাওয়ান