• শনিবার , ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

সাকা মুজাহিদের খেল খতম-রাতে ফাঁসি


প্রকাশিত: ৫:১১ এএম, ২০ নভেম্বর ১৫ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৮ বার

hhhhhhhhhhhhhhhhhhhhhhhhস রহমান:    সাকা মুজাহিদের সময় শেষ হয়ে আসছে-সব খেল খতম হতে চলেছে।আর মাত্র কয়েক ঘন্টা-অপেক্ষা। তারপর ফাঁসি। একাত্তরের এই দুই যুদ্ধাপরাধির ফাঁসির আদেশ ইতিমধ্যে হয়েছে। ফাঁসির মঞ্চ জল্লাদও প্রস্তুত পুরোটাই প্রস্তুত। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একই ফাঁসির মঞ্চে রায় কার্যকর করা হবে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে ক্ষণগণনা। যে কোনো সময় ফাঁসির রশিতে ঝুলবেন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় গতকালই প্রকাশ করা হয়।

রায়ের অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে রাত ৮টা ৪৩ মিনিটে পেঁৗছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে কনডেম সেলে বন্দি সাকা ও মুজাহিদ মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। গোটা জাতিও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সেই কাঙ্ক্ষিত ক্ষণের। তাই সবার দৃষ্টিও এখন কেন্দ্রীয় কারাগারেই। রাতেই কারা কর্তৃপক্ষ সাকা ও মুজাহিদকে রায় পড়ে শোনান।

তবে প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে একাত্তরের এই দুই যুদ্ধাপরাধী কী বলেছেন, তা এখনই বলতে রাজি হয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় প্রথমে সাকা চৌধুরীর খারিজ হওয়া রিভিউ রায়ে স্বাক্ষর করেন। এর পর ৬টা ৩৫ মিনিটে মুজাহিদের খারিজ হওয়া রিভিউ রায়ে স্বাক্ষর করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন_বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

ফাঁসি কার্যকরের দিনক্ষণ স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। তবে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক গতকাল বলেছেন, এখন কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ডিতদের কাছে জানতে চাইবে, তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি-না। তাদের উত্তরের ওপর নির্ভর করছে দণ্ড কার্যকরের দিনক্ষণ ।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৪৩ মিনিটের দিকে ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবুজ্জামান, সিনিয়র আইন গবেষক ফাহিম ফয়সালসহ পাঁচ কর্মকর্তা প্রাইভেটকারে পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি নিয়ে কারাগারে যান। সিলগালা করা খয়েরি রঙের প্যাকেটের ভেতরে থাকা রায়ের অনুুলিপি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে মিনিট দশেকের মধ্যে তারা এলাকা ত্যাগ করেন। এর আগে কারাগারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন।

রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর, জেলার নেছার আলমসহ চার কর্মকর্তা কনডেম সেলে গিয়ে সাকা চৌধুরীকে ১৩ পৃষ্ঠা ও মুজাহিদকে ২৯ পৃষ্ঠার রায় পড়েন শোনান।
আইন অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ এখন দণ্ডিতদের কাছে জানতে চাইবেন, রাষ্ট্রপতির কাছে তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে চান কি-না। তাদের মতামত জানার পরই অনুকম্পা চাওয়া-না চাওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তারা প্রাণভিক্ষা না চাইলে যে কোনো সময় দণ্ড কার্যকর করা যাবে।

কারাবিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার ব্যাপারে অন্যান্য ক্ষেত্রে আসামি সাত দিন সময় পেলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সে নিয়ম প্রযোজ্য নয় বলে আইন বিশেষজ্ঞরা জানান। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ইচ্ছানুযায়ী রায় কার্যকর হয়। এর আগে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড একই প্রক্রিয়ায় কার্যকর হয়েছিল।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গতকাল বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ছাড়া আসামিদের পক্ষে আর কোনো আবেদনের সুযোগ নেই। আসামিদের নিজ হাতে প্রাণভিক্ষার পত্র লিখতে হবে। রায় কার্যকরের বিষয়টি এখন সরকারের ওপর নির্ভরশীল। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। অনুলিপি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুলিপি হাতে পাওয়ায় কারা কর্তৃপক্ষ দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদর আগে প্রাণভিক্ষার আনুষ্ঠানিকতা সারতে পারবে।রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আদালতকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলতেই সাকা চৌধুরী জাল সনদ দাখিল করেন।

এদিকে গতকাল সাকা ও মুজাহিদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যরা পৃথকভাবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাৎ করেন। তবে জেলবিধি অনুযায়ী সেটা ‘শেষ সাক্ষাৎ’ ছিল না। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর সাকার ভাই জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তার ভাইয়ের প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়টি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে এড়িয়ে যান। এ ছাড়া মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর বলেন, মৌখিকভাবে রায় শুনলেও লিখিত কপি এখনও পাননি। লিখিত কপি হাতে পাওয়ার পর আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করবেন। এর পর আইনি একটি বিশেষ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে চান তার বাবা। তবে সেটা প্রাণভিক্ষা কি-না তা তিনি বলেননি।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর :রায়ের অনুলিপি গতকাল রাতেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আইন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় এবং আসামি পক্ষকে দেওয়ার জন্য রায়ের কয়েকটি অনুলিপি তৈরি করা হয়। আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাবি্বর ফয়েজ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

একটি সূত্র জানায়, আগামীকাল শনিবার রাতে দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে। তবে দায়িত্বশীল কোনো সূত্র এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় স্বাক্ষরিত দুটি রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
রায় কার্যকর করার আগে এখন কেবল আসামিদের সামনে একটি ধাপ বাকি আছে। তা হলো, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন। নিয়ম অনুযায়ী দুই যুদ্ধাপরাধী এখন কেবল একাত্তরে নিজেদের অপকর্মের দায় স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। তবে প্রাণভিক্ষা পাবেন কি-না সেটি রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।

ফিরে দেখা :সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বুধবার আবেদন দুটি নিষ্পত্তি করেন। রিভিউ আবেদন খারিজের মধ্য দিয়ে দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ‘গলা বাঁচানোর’ চূড়ান্ত আইনি লড়াই শেষ হয়। এর আগে যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মাদ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন শুনানি শেষে খারিজ হয়ে যায়। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাননি। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে ফাঁসি কার্যকর হয় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার। এর পর চলতি বছরের ১১ এপ্রিল রাতে জামায়াতের আরেক নেতা কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সাকা চৌধুরী দেশ ছেড়ে পালান।

এরশাদ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা হন। মুক্তিযুদ্ধের পর আলবদর নেতা মুজাহিদ ছিলেন আত্মগোপনে। জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শাসনামলে মুজাহিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রীও ছিলেন।