সাঈদী-নামা দাফন কাফন

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে পিরোজপুর পৌরসভার মাছিমপুরে পারিবারিক কবরস্থানে বড় ছেলে মাওলানা রাফীক বিন সাঈদীর কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
দুপুর সোয়া ১টার দিকে তাঁর জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। সাঈদীর ছোট ছেলে ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ বিন সাঈদীসহ জানাজায় আশপাশের জেলাগুলো থেকেও তার বিপুল সংখ্যাক ভক্ত ও অনুসারী অংশ নেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৮ মিনিটে সাঈদীর লাশবাহী গাড়ি পুলিশ পাহারায় পিরোজপুর পৌঁছায়। পিরোজপুরে তার লাশ পৌঁছার পরপরই দ্রুত জানাজা শেষে দাফন করার নির্দেশ দেয় পুলিশ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একবার জানাজার নামাজ শুরু হয়েও বন্ধ হয়ে যায়। উপস্থিত মুসুল্লিদের আবেদনে এটি বন্ধ করা হয়। মাওলানা সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী দেশের বাইরে থাকায় তারা এ আবেদন করেন।
জানাজা শেষ হওয়ার পর সাঈদীর মেজ ছেলে শামীম বিন সাঈদী এসে পিরোজপুরে পৌঁছান। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে আজ তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরেন। পরে তাঁর উপস্থিতিতে বেলা তিনটার দিকে দ্বিতীয় দফা জানাজা হয়। এরপর বেলা সাড়ে তিনটায় তাঁকে দাফন করা হয়।
এদিকে, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়ার সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে জামায়াত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজন কর্মীকে আটকও করে পুলিশ। (মঙ্গলবার) দুপুর দেড়টার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, মসজিদের ভেতরে শোক দিবসের দোয়া চলাকালে গায়েবানা জানাজা পড়ার চেষ্টা করে সাঈদীর অনুসারী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ নিয়ন্ত্রণে গেলে তাদের ওপর হামলা চালায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ে তারা। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।
বায়তুল মোকাররমে পুলিশের লাঠিচার্জ
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবসের দোয়া মাহফিল হচ্ছিল। এ সময় সাঈদীর অনুসারী ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সদস্যরা হট্টগোল সৃষ্টি করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে জামায়াতের অনুসারীরা তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার বিকেলে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে মাওলানা সাঈদীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাশিমপুর কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাকে বিএসএসএমইউ-তে পাঠানো হয়। গতকাল (সোমবার) রাত ৮টা ৪০মিনিটে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে, ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী। পরে একই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়।