• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সাইজ হচ্ছে টিআইবি-ক্ষুদ্ধ জাতীয় সংসদ


প্রকাশিত: ৩:০৫ এএম, ১০ নভেম্বর ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৯ বার

jatio saang-------------------সংসদ রিপোর্টার:    মহান জাতীয় সংসদকে পুতুলনাচের নাট্যশালা বলায় টিআইবিকে খুব শিগগির তলব করা হচ্ছে। এজন্য তিন দিনের আলটিমেটামও  দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সংসদে আসতে হবে তাদের।সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘ইফতেখারুজ্জামানকে তিন দিন সময় দিতে চাই। অবিলম্বে অবনত মস্তকে ক্ষমা চাইবেন। জীবনে কোনো দিন সংসদ ও সংবিধান নিয়ে কথা বলবেন না। নতুবা আমার কাছে যে ফাইল আছে, তাতে লিখে দেব। সেই এনজিও টিআইবির অস্তিত্ব থাকবে না। তাদের প্রাণ এই পার্লামেন্টের হাতে। টিআইবিকে যদি পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করে দেয়, তাহলে আমার কিছু করার থাকবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও কিছু করার থাকবে না। সংসদের এই ক্ষমতা আছে।’

জাতীয় সংসদ প্রসঙ্গে দেওয়া সাম্প্রতিক বক্তব্য সংবিধান পরিপন্থী উল্লেখ করে সরকার ও বিরোধী দলের সাংসদেরা আজ সোমবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে (টিআইবি) সংসদে তলব (সমন) করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এই বক্তব্য দিয়ে টিআইবি রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছে। তা ছাড়া এই সময়ে এমন বক্তব্যের পেছনে কোনো ইঙ্গিত আছে বলে তাঁরা মনে করেন।

‘পার্লামেন্টওয়াচ’ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সম্প্রতি টিআইবি বলেছিল, বর্তমান জাতীয় সংসদ শুধুই নিয়ম রক্ষার এবং এটি কেবল ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র ভুবনে পরিণত হয়েছে। আরেকটি নির্বাচনই পারে জাতীয় সংসদকে কার্যকর করতে। বর্তমান সংসদ ‘পুতুলনাচের নাট্যশালায়’ পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, সংসদ বিরোধী দলের সমালোচনা ও ক্ষমতাসীন দলের প্রশংসার স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে।

টিআইবির ওই প্রতিবেদনের তথ্য ও সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ। এরপর এই বিষয়ে বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সরকারদলীয় সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মঈন উদ্দীন খান বাদল, স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী প্রমুখ। এ বিষয়ে বক্তব্য চলার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনকক্ষে প্রবেশ করেন। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি।

এর আগে স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের সোমবারের অধিবেশনে প্রথমে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। রওশন এরশাদ বলেন, টিআইবির বক্তব্য ও কার্যক্রম খতিয়ে দেখা দরকার। তারা যে বক্তব্য দিয়েছে, তা তাদের এখতিয়ারের মধ্যে কি না, তা দেখতে হবে। তারা সাংবিধানিকভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নতুন নির্বাচন চেয়েছে। বিরোধী দলকে কথিত বিরোধী দল বলেছে। পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যার সময় তারা চুপ ছিল। এ মুহূর্তে সংসদ ও বিরোধী দল নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছে, তা কতটা যুক্তিসংগত ও সৌজন্যমূলক, তা বিবেচনার দাবি রাখে।

রওশন এরশাদ আরও বলেন, গণতন্ত্র ও সংবিধান সমুন্নত রাখা টিআইবির দায়িত্ব হলেও নির্বাচন ও বিরোধী দল নিয়ে কথা বলেছে। ১৯৯১ সালের পর বিরোধী দলগুলো কী ভূমিকা রেখেছে? ফাইল ছোড়াছুড়ি, গালিগালাজ করেছে। বর্তমান বিরোধী দল সংসদে জনগণের সমস্যা তুলে ধরেছে।
রওশন বলেন, ‘টিআইবিকে আমরা সংসদে আহ্বান জানিয়েছিলাম। তারা এসে আমাদের সঙ্গে কথাও বলেছে। এরপরও কীভাবে তারা কথিত বিরোধী দল বলে। শিক্ষিত লোক হয়ে এটা কীভাবে বলতে পারে?’

টিআইবির কোথা থেকে টাকা আসে? স্পিকারের নেতৃত্বাধীন সংসদের বিশেষ অধিকার কমিটিতে টিআইবিকে সমন বা তলব করার দাবি জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, টিআইবির কোথা থেকে টাকা আসে, কীভাবে খরচ হয়, এর কোনো জবাবদিহি নেই। তাদের একটাই কাজ-বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অগ্রগতি বানচাল করা।

দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে টিআইবি বিদেশে বাংলাদেশের মর্যাদাহানি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনতিবিলম্বে প্রিভিলেজ কমিটিতে সমন করে এবং তাদের হাজির করে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। তাহলে আমরা প্রশ্ন করতে পারব।’
তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, ‘টিআইবির মুখে কি কখনো বাংলাদেশের প্রশংসা শুনেছেন? খালেদা জিয়া যখন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল, তখন তারা তো কোনো কথা বলেনি।’ তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, টিআইবি বিএনপির অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে।’

টিআইবির সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, ‘সংসদকে রঙ্গমঞ্চ বললেন। আসলে সহেনা যাতনা… নিশিদিনও বসে আছি শুধু পথ পানে চেয়ে…। বসে থাকেন, নির্বাচন পাঁচ বছর পর হবে। নানান সুতার টানে আপনারা নাচতে পারেন। আপনাদের এই নাচের উদ্দেশ্য আছে। যখন সামরিক শাসন আসে, তখন তো আপনারা কথা বলেন না। এই সরকারের বিদেশিদের কাছে আনুগত্য নেই। আপনাদের আছে।’

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘ইফতেখারুজ্জামানকে তিন দিন সময় দিতে চাই। অবিলম্বে অবনত মস্তকে ক্ষমা চাইবেন। জীবনে কোনো দিন সংসদ ও সংবিধান নিয়ে কথা বলবেন না। নতুবা আমার কাছে যে ফাইল আছে, তাতে লিখে দেব। সেই এনজিও টিআইবির অস্তিত্ব থাকবে না। তাদের প্রাণ এই পার্লামেন্টের হাতে। টিআইবিকে যদি পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করে দেয়, তাহলে আমার কিছু করার থাকবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও কিছু করার থাকবে না। সংসদের এই ক্ষমতা আছে।’
সুরঞ্জিত আরও বলেন, বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত এনজিওগুলোর বিষয়ে একটি আইন সংশোধনের ফাইল তাঁর কাছে আছে। এনজিওর কর্তারা আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে এসে বক্তব্য দিয়েছেন।

টিআইবির ইফতেখারুজ্জামানকে উদ্দেশ করে সুরঞ্জিত বলেন, ‘এখানে এসে কথা বলে গিয়ে বাইরে গিয়ে বলেন “পুতুলনাচ” হচ্ছে। তাহলে আপনারা কি এখানে “বাদুড়নাচ নেচে” গেছেন?’
সুরঞ্জিত সেন এনজিও কর্তাদের উদ্দেশে আরও বলেন, এনজিওগুলোকে তাঁরা অধিকার দিতে চান। কিন্তু যদি সার্বভৌম সংসদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে, সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়, রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অপরাধ করা হয়, তাহলে কেন দায়িত্ব নেবেন?

সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, যখন দেশের অর্জন বেড়েছে, তখন টিআইবি সংসদ নিয়ে কথা বলেছে। তাদের ট্রাস্টি বোর্ডের পুরো তালিকা রয়েছে। সেখানে কারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের চিন্তা-চেতনা ও অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন আসে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মঈন উদ্দীন খান বাদল টিআইবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত করে বলেন, ‘জাতির যাতে বারোটা না বাজে, সে জন্য কিছু পেইনফুল (বেদনাদায়ক) অপারেশন করতে হবে।’
জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডে আওয়ামীপন্থীরাই বেশি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর জেনারেল সফিউল্লাহ সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছিলেন। খোন্দকার মোশতাক ও জিয়াও সুবিধাভোগী।