সাইকেলে নারী পুলিশ-ডিসি মোস্তাকের আবেগঘন পোস্ট-তোলপাড় ফেসবুক
বিশেষ প্রতিনিধি : সাইকেলে নারী পুলিশ ও ডিসি মোস্তাকের আবেগঘন পোস্ট নিয়ে তোলপাড় চলছে ফেসবুকে। এক নারী পুলিশের সংগ্রামী পথচলার কাহিনী ফেসবুকে তুলে ধরে আলোচিত পুলিশের ডিসি মোস্তাক। তাঁর আবেগঘন পোস্ট বলে দেয় তিনি কত উদার প্রকৃতির। ইতিমধ্যে তাঁর পোস্টটি শেয়ার হয়েছে সাড়ে তিন হাজার। মন্তব্য অজস্র।
ডিসি মোস্তাকের আবেগঘন পোস্ট
পুলিশে পরিবর্তন, বিস্মিত অভিভূত আমি!! : আজ সকালে আমি অফিসে আসার সময় মগবাজার মোড়ে দেখলাম একজন নারী কনস্টবল সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাচ্ছেন। তার কাধে ব্যাগ, মাথায় হেলমেট। আমি গাড়ি টান দিয়ে সামনে এসে কথা বললাম। নাম লুৎফা, শিল্পাঞ্চল থানায় দায়িত্ব পালন করেন। আবাসস্থল থেকে কর্মস্থল দূরে থাকায় সাইকেল চালিয়ে তিনি কর্মস্থলে যাচ্ছেন। আমার ষোল বছরের চাকরি জীবনে আমি বাংলাদেশ পুলিশে বহু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখেছি। কিন্তু ব্যাগ কাধে হ্যালমেট পরে আমার এক নারী সহকর্মীর কমর্স্থলে গমন সত্যি আমাকে বিস্মিত অভিভূত করেছে। আমি বিশ্বাস করি লুৎফার এরূপ কর্মস্থলে গমন বাংলাদেশ পুলিশের পরিবর্তন ও উন্নয়নের এক অবিস্মরনীয় মাইলফলক। তার সহকর্মী হতে পেরে আমি গর্বিত। মোস্তাক আহমেদ, ডিসি গুলশান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে দায়িত্ব পালন করা ওই নারী পুলিশ সদস্যের সাইকেলে করে কর্মস্থলে যাওয়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার কনস্টেবল লুৎফা বেগমের সাইকেলে করে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার ওই ছবি সোমবার সকালে ফেইসবুকে পোস্ট করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোশতাক আহমেদ।
সংগ্রামী লুৎফা’র পথচলা-
বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি সাইকেলে যাতায়াত করছেন। সাইকেল চড়েই অফিস, কোর্টসহ অফিসিয়াল ডিউটিতে যাই, ঢাকায় অনেক যানজট দেখে বেশ কিছুদিন ধরে সাইকেলেই যাতায়াত করছি।
২০০৮ সালের ৪ মার্চ পুলিশে নিয়োগ পাওয়া এই তরুণীর বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ থানায়। এখন থাকছেন রাজারবাগে, পুলিশ হোস্টেলে। চাকরির পাশাপাশি হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করছেন।
নিজেকে একজন সাধারণ কৃষকের মেয়ে হিসেবে বর্ণনা করে এ পুলিশ সদস্য জানান তার সংগ্রামী জীবনের কথা। ছোট বেলা থেকেই সংসারে অনেক অভাব অনটন ছিল, আমি সব সময় ভাবতাম কী করা যায় নিজে থেকে। বেকারত্বকে সবসময় ঘৃণা করে এসেছি, একটা দিনও বেকার থাকতে চাইনি। নবম শ্রেণী থেকেই টিউশনি করে নিজের খরচ নিজে চালিয়েছি।
এভাবেই ২০০৪ সালে সিলেটের বোয়ালপুর বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক আর ২০০৬ সালে বালাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেন লুৎফা। ২০০৭ সালে যখন শুনলাম পুলিশের সার্কুলার দিয়েছে, আমার বাবা-মা কেউ রাজি ছিলেন না। মেয়েরা পুলিশে চাকরি করবে- তা আমাদের এলাকায় কেউ কল্পনাও করতে পারত না।
শেষ পর্যন্ত বড় ভাই লুৎফাকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যান। পরীক্ষায় টিকেও যান তিনি। ২০০৭ সালে রংপুর পুলিশ ট্রেনিং কেন্দ্রে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকা মহানগরীতে পুলিশে কনস্টেবল পদে যোগ দেন তিনি।
জীবনে শত বাধা প্রতিকূলতার মধ্যেও থেমে থাকিনি। কারও সাহায্য কিংবা দয়া চাইনি, হাত পাতিনি কারও কাছে। সবসময় চেষ্টা ছিল নিজে থেকে কিছু একটা করার। পুলিশে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি।