• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

সহিংসতা প্রতিরোধ-দমনেই সমাধান দেখছে সরকার?


প্রকাশিত: ৯:৫৯ এএম, ২০ জানুয়ারী ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৩২ বার

Atok-www.jatirkhantha.com.bdগোলাম কিবরিয়া: 
সংলাপ বা সমঝোতা নয়, সহিংসতা প্রতিরোধে দমনকেই বেছে নিচ্ছে সরকার। আর সেই লক্ষেই এগোচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। বিরোধী দলের কথিত আন্দোলন-কর্মসূচি, সহিংসতা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সহ্যের একটা সীমা আছে। বর্তমান সহিংসতা মোকাবেলায় যা যা করা দরকার সরকার তাই করবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও আরো কঠোর হতে হবে।’ এছাড়াও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নীতি নির্ধারকদের পক্ষ থেকেও এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

দিনে দিনে বেড়েই চলেছে রাজনৈতিক সহিংসতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি নামানো হয়েছে বিজিবি। কিন্তু তার পরেও কমছে না সহিংসতা। জ্বলছে দেশ, পুড়ছে মানুষ, ধ্বসে পড়ছে অর্থনীতি, স্থবির হয়ে পড়ছে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি। রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার বেশিরভাগ মানুষই কোন রাজনৈতিক দলের নয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আল-কায়েদা এবং আইএসদেরকে কোন ধরণের আলোচনা ছাড়াই দমন ও নির্মূল করা হয়েছে, নাশকতাকরীদেরকেও একইভাবে দমন করা হবে।’ আর বিজিবি প্রধান তো ঘোষণা করেই দিয়েছেন বিশৃঙ্খলাকারীদের প্রয়োজনে গুলি করা হবে। পুলিশের আইজি ও ডিএমপি কমিশনারও ঘোষণা করেছেন, নাশকতাকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

এদিকে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকারের প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার আহ্বান জানানো হলেও তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে এবং ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেয়া এবং বিএনপি চেয়ারপারসনকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে সরকার বিরোধীদের আন্দোলন আরো চড়া আকার ধারণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে কঠোর আন্দোলন ও নাশকতায় নেমেছে আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের পাশাপাশি এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিরাই নির্বাচন হবে কি হবে না তার ঘোষণা দিচ্ছেন। সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত র‌্যাব’র ডিজি বেনজির আহমেদ বলেছেন, ‘২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচন নয়।’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কর্মকর্তারা যে ভাষায় কথা বলছেন তাতে মনে হচ্ছে তারাই সরকারের মুখপাত্র। জনগণের সেবা বাদ দিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করা বিশেষ করে বিএনপিকে অবরুদ্ধ করাই এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন পুরো সরকারি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা এখন তাদের প্রধান কাজ।

rab-1এদিকে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় এবং নতুন একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, ‘আমরা সংলাপের কথা ভাবছি না। বিএনপি ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে। কিন্তু জনগণ আমাদেরকে আগামী ৫ বছরের ম্যান্ডেট দিয়েছে। তাই ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচন নয়’। আর বিএনপি আন্দোলন বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের ঠান্ডা করতে কেবল একটি মামলাই যথেষ্ট।’

সরকারের অনড় অবস্থান এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতায় টিকে থাকার অভিপ্রায় দেখে বিএনপির সঙ্গে সরকারের কোন ধরণের সংলাপের কোন পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে না। যদিও সরকারের পক্ষের কয়েকজন নীতি নির্ধারকরা শর্ত সাপেক্ষে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে ছিলো বিএনপিকে। কিন্তু সে বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

তাই দেশের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সমাধানের পরিবর্তে দমনের দিকেই এগোচ্ছে সরকার। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই এখন রয়েছেন গ্রেফতার আতঙ্কে। অনেকে গ্রেফতার হয়ে আছেন। খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই রয়েছেন গ্রেফতার আতঙ্কে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘হরতাল অবরোধের নামে মানুষ হত্যার দায়ে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে দায়ী করে হুকুমের আসামী করা হতে পারে।’

-what happen-www.jatirkhantha.com.bdকোন দিকে যাবে দেশ? সরকার কি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে যাবে নাকি আবার দমন-পিড়নের মাধ্যমে বিরোধী দলকে শায়েস্তা করবে, নাকি আবার অনড় অবস্থানে থেকে সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করবে!