বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা :নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এ আদেশ দেন। পাশাপাশি তাঁর পক্ষে করা জামিন আবেদন নাকচ করা হয়।
আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শুনানি শুরু হয়। এ সময় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মান্নাকে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানায়। প্রায় আধঘণ্টার শুনানি শেষে বিচারক মাহবুবুর রহমান ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
এর আগে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে প্রিজন ভ্যানে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাত নাড়েন।
আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, বেলা তিনটার দিকে মান্নাকে বহনকারী ভ্যানটি আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছায়। সেখানে থাকা নাগরিক ঐক্যের কর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়েন মান্না। এ সময় কর্মীরা ‘মান্না ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ ছাড়া মান্না আদালতে পৌঁছানোর আগেই তাঁর স্ত্রী মেহের নিগার, মেয়ে নীলম মান্না, মেজো ভাই মোবায়দুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী বেগম সুলতানা আদালতে আসেন।
গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বনানীর একটি বাসা থেকে মান্নাকে গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয়ে একটি দল তুলে নিয়ে যায় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। পরিবারের লোকজন গতকাল দিনভর খোঁজ করেও জানতে পারেননি তিনি কোথায় ছিলেন, কেমন ছিলেন।
দিনভর মান্নার খোঁজ পাওয়া না গেলেও রাত সাড়ে ১০টার দিকে আভাস পাওয়া যায় যে তাঁকে রাতের যেকোনো সময় থানায় হস্তান্তর করা হবে। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। থানায় হস্তান্তরের পর তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
তুলে নিয়ে যাওয়ার ২১ ঘণ্টা পর গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মান্নাকে গুলশান থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে আটকের পর থেকে ২১ ঘণ্টা মান্নাকে কোথায় রাখা হয়েছিল, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের দাবি, গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির স্টার কাবাব রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে মান্নাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২-এর একটি দল।
পুলিশ জানায়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিদ্রোহে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মান্নার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৩১ ধারায় গুলশান থানায় মামলা হয়েছে। এসআই সোহেল রানা মামলাটির বাদী। গতকাল সন্ধ্যায় মান্নাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরেক ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।
পুলিশের রমনা, মতিঝিল ও গুলশান বিভাগের ১১ থানায় মান্নার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, নাশকতা, লাশ ফেলাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে পুলিশ ২৪টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে মান্নার কথোপকথন নিয়ে গত সোমবার আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর রাত সাড়ে তিনটার দিকে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।