সরকার হঠাতে বিএনপি জামায়াতের ‘মোসাদ’কে অর্থায়ন নিয়ে তোলপাড়
এস রহমান : বিএনপি জামায়াতের কয়েক প্রভাবশালী নেতার প্রচ্ছয়ে এবার প্রায় প্রকাশ্যেই মাঠে নেমেছে ইসরাইলের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’। গোয়েন্দা সূত্রমতে, এতদিন লুকোচুরি করে, গোপনে বাংলাদেশে তত্পরতা চালালেও এখন প্রায় প্রকাশ্যেই মাঠে নেমেছে ইসরাইলের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’। সরকার উত্খাতে সরাসরি মিটিং-সিটিং করে চলেছেন মোসাদের কর্মকর্তারা।
সর্বশেষ গত মার্চে কলকাতা, দিল্লি ও লন্ডনে তিনটি বৈঠক করেছেন ইসরাইলের প্রভাবশালী নেতা মেন্দি এন সাফাদি। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা, একটি ইসলামী দলের নেতা এবং মোসাদের এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করা একজন ব্যক্তি বৈঠকগুলোতে উপস্থিত ছিলেন। লন্ডনে বৈঠক চলাকালে বাংলাদেশে একজন বিএনপি নেতার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার তথ্য এখন গোয়েন্দাদের হাতে। আর সরকার উত্খাতের এই ষড়যন্ত্রে অর্থায়ন করার আশ্বাসও দিয়েছেন মোসাদের ওই প্রভাবশালী নেতা।
এদিকে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো পাঁচ বাংলাদেশিকে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য উদঘাটনের জন্য প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আলী মাসুদ শেখ এ আদেশ দেন। আসামিরা হলেন মিজানুর রহমান ওরফে গালিব হাসান (৩৮), মো. রাহা মিয়া পাইলট (২৯), মো. আলমগীর হোসেন (৩১), মো. তানজিমুল ইসলাম (২৪) ও মো. মাসুদ রানা ওরফে সন্টু খান (৩১)। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজ্ম্ অ্যান্ড ট্রান্স-ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি)। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় তাদের রিমান্ড হয়েছে।
একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের হাতে যে তথ্য এসেছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। গত ৬ মার্চ কলকাতায় একটি বৈঠক হয়। সেখানে মোসাদের সদস্য ছাড়াও ৩০০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি একজন বিএনপি নেতা, খেলাফত আন্দোলনের একজন নেতা ও বাংলাদেশি এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন।
এরপর ১০ থেকে ১৪ মার্চ টানা ৪ দিন দিল্লিতে বৈঠক হয়। সেখানে ইসরাইলের প্রভাবশালী নেতা ও মোসাদের দায়িত্বে থাকা মেন্দি এন সাফাদি উপস্থিত ছিলেন। তিনিই বাংলাদেশের সরকার উত্খাতে সবধরনের অর্থায়নের আশ্বাস দেন। এদিকে বিরোধী পক্ষ থেকে সরকার উত্খাত হলে বাংলাদেশে মোসাদকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়াসহ নানা ধরনের সহযেগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
এই বৈঠকের পর ১৮ মার্চ লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার ব্রিজ রোডের পার্ক প্লাজা হোটেলের ১১৪৫ নম্বর রুমে বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন মেন্দি এন সাফাদি। সেখানে জামায়াতে ইসলামীরও একজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠক থেকেই বাংলাদেশের একজন প্রভাবশালী বিএনপি নেতার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স হয়।
ওই ভিডিও কনফারেন্সের ফুটেজ এখন গোয়েন্দাদের হাতে। এই ফুটেজ ধরে বিএনপির সিনিয়র কোনো নেতা গ্রেফতার হতে পারেন বলে গোয়েন্দারা ইঙ্গিত দিয়েছেন। পাশাপাশি সিঙ্গাপুর ইস্যুতেও বিএনপি ও জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। গ্রেফতারকৃতরা এসব তথ্য দিয়েছে।
রাজধানীর রামপুরা থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা একটি মামলায় সিঙ্গাপুর ফেরত ৫ জনকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। মামলা তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মুনছুর আলী তদন্তের স্বার্থে আসামিদের দশদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন।
এ আসামিদেরকে গত ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় গ্রেফতার করার সময় তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী সংগঠনের বেশ কিছু বই ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। এরা ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরে শ্রমিক হিসেবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে সে দেশে গিয়েছিল।
জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সিঙ্গাপুরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই দেশে অবস্থানরত ১৩ বাংলাদেশিকে সম্প্রতি আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর এই ৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে।
সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, আটকেরা ওই দেশে অবস্থান করে জঙ্গিবাদে যোগদানের জন্য সদস্য সংগ্রহ করছিল। বিভিন্নভাবে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য তারা ফান্ড কালেক্ট করছিল। আসামিদের দেশে ফেরত পাঠানোর পর নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
সিঙ্গাপুরের একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়া এবং ইরাকে গিয়ে জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ জটিলতাপূর্ণ হওয়ায় তারা বাংলাদেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সহিংস কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকার উত্খাতের পরিকল্পনা করে। বাংলাদেশে ফিরে এখানে আইএসের শাখা গঠনের পরিকল্পনা ছিল তাদের। প্রায় দুই মাস আগেও সিঙ্গাপুর সরকার জঙ্গি তত্পরতার অভিযোগে যে ২৬ জনকে ফেরত পাঠিয়েছিল, তাদের মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছিল। তারা কারাগারে আছে।