• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সরকারের সমালোচনায় আসামী পান্না-যিনি কোটা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন


প্রকাশিত: ৮:৫২ পিএম, ২০ অক্টোবর ২৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৩ বার

 

বিশেষ প্রতিনিধি : সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে। রাজধানীর খিলগাঁও থানায় এ মামলা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর)। এ মামলায় আসামি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ ১৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আইনজীবী জেড আই খান পান্না এ মামলার ৯৪ নম্বর আসামি। গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলাম নামে একজনকে গুলি ও মারধর করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়। গত ১৭ অক্টোবর মামলাটি করেন আহাদুলের বাবা মো. বাকের।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজারের পশ্চিমে শুক্কুর আলী গার্মেন্টস মোড়ে ছাত্রজনতার আন্দোলনে অংশ নেন বাদী মো. বাকেরের ছেলে মো. আহাদুল ইসলাম। এ সময় পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাবসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন এবং ১৪–দলীয় জোটের নেতা–কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ ককটেল ও সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটান এবং আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নসাৎ করার জন্য হত্যার উদ্দেশ্যে এ গুলি চালানো হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। সেখানে আহাদুল ইসলাম বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। সন্ত্রাসীরা তাঁকে পরে আরও লাঠিপেটা করেন। আহাদুলকে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিক, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

মামলার বিষয়ে জেড আই খান পান্না দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ঘটনার তিন মাস পর আমার বিরুদ্ধে মামলা হলো। এটা কোনো না কোনো প্রভাবশালীর ইন্ধনেই হয়েছে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। অথচ আমি কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে সক্রিয় ছিলাম। জেড আই খান পান্না বলেন, যে স্থানের কথা বলা হয়েছে সেই মেরাদিয়ায় আমি কখনো গেছি বলেও তো মনে হয় না। এ ব্যাপারে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেন রোববার দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, বাদীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত হবে। কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হলে তো তিনি অব্যাহতি পেয়ে যাবেন।

জেড আই খান পান্না মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন। তিনি বিগত সরকারের সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী নানা আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে শক্ত ভূমিকা নেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে আদালতে শুনানিও করেছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে অন্তবর্তী সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান নতুন করে লেখার যে কথা বলছে, তারও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। জেড আই খান পান্না গণমাধ্যমে বলেছেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে সংবিধান রচিত হয়েছে, তার ঘোষণাপত্র পাল্টানো যাবে না। যদি করে, তাহলে যুদ্ধ না, মহাযুদ্ধ হবে।

জেড আইন খান পান্নার বিরুদ্ধে এ মামলাকে ‘অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত ও নিন্দনীয় বলেছে মানবাধিকার সংগঠন আসক। আজ এই সংগঠনের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, মানবাধিকার বিষয়ে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট–সংশ্লিষ্ট জেড আই খান পান্নার আলোচনা, মতামত ও বক্তব্যসংক্রান্ত তাঁর কোনো ভূমিকায় কোনো পক্ষের অসন্তুষ্টি থেকে এ ধরনের মামলা দায়ের হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। সেই সঙ্গে মামলাটি হয়রানিমূলক বলেও প্রতীয়মান হয়।

আসকের বিবৃতিতে বলা হয়, মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্না জীবনভর মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন এবং বলছেন। সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনো তিনি ক্রসফায়ার, গুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে কোনো পক্ষের অসন্তষ্টিতে পড়েছেন; আবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করতে বিশেষ কোনো পক্ষের অসন্তুষ্টিতে পড়েছেন।