সরকারের সংস্কারের কোনো প্রতিফলন নেই:আনু মুহাম্মদ
স্টাফ রিপোর্টার : গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কোথায় করছে, তা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন তুলেছেন? তিনি বলেছেন, ‘সংস্কারটা কোথায় হচ্ছে, এটাই তো আমরা বুঝতে পারছি না। সংস্কার হতে গেলে তার তো একটা প্রতিফলন জনগণের জীবনের মধ্যে থাকবে। জনগণের জীবনে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
আজ ৩১ জানুয়ারী শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দামের মধ্যে সংস্কারের প্রতিফলন নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে এর প্রতিফলন নেই। বিভিন্ন জায়গায় যে দমন–পীড়ন ও অনিশ্চয়তা, সেটার মধ্যে সংস্কারের কোনো প্রতিফলন নেই। সংস্কারের প্রতিফলন আনতে হলে সাম্রাজ্যবাদের ওপর নির্ভরশীলতার জায়গা থেকে বের হতে হবে।‘বন্ধ কারখানা চালু, বকেয়া মজুরি পরিশোধ, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং মিথ্যা মামলায় শ্রমিক হয়রানি বন্ধের দাবিতে’ ওই সমাবেশের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আইএমএফের সঙ্গে চুক্তির কারণে কিছুদিন আগে সরকার জনগণের ওপর ভ্যাট বসিয়েছে। এতে জিনিসের দাম বেড়েছে। সরকারের লোকজন বলছেন, তাঁদের টাকাপয়সার অভাব। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ না নিলে হচ্ছে না।গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য থাকে একটি দেশের যত সম্পদ, তা কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে ছেড়ে দেওয়া। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের আমলে যে লুটেরা ধনিকশ্রেণির উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছিল, তার পেছনে এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো প্রবলভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর পরিবর্তন হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কোনো ধরনের পার্থক্য নেই।
বকেয়া মজুরির জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে এই সরকারের সময়ও গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিক মারা গেছেন উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, বিষয়টি অবিশ্বাস্য। শ্রমিকদের রাজনৈতিক শক্তি তৈরি না হলে অন্তর্বর্তী সরকার মুখে যতই বড় বড় কথা বলুক, শ্রমিকদের পক্ষে কোনো ধরনের পদক্ষেপ তারা নেবে না। এ সময় শিল্প পুলিশ বাতিলের দাবিও জানান তিনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান মানুষের টাকা লুট করে যেসব কারখানা করেছেন, সেগুলোর ওপর বাংলাদেশের মানুষের সম্পূর্ণ অধিকার আছে বলে মনে করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, এসব কারখানা চালু রাখা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু সরকার বিবেচনাহীন সিদ্ধান্ত নিয়ে কারখানা বন্ধ করায় প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছেন।শ্রমিকদের মতো প্রান্তিক মানুষদের সঠিক প্রতিনিধিত্ব এই সরকারেও দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান। সমাবেশে তিনি বলেন, দিনে দিনে বৈষম্য প্রকট হচ্ছে।
ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করায় পতিত স্বৈরাচারী সরকারের করা বিশেষ আইনে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার হওয়া শ্রমিকদের মুক্তি এবং হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘…তা না হলে আমরা বুঝে নেব, আগের রেজিমের (শাসন) সঙ্গে এই রেজিমের কোনো তফাত নেই।’
এই সরকার যেসব কথা বলে ক্ষমতায় বসেছে, তার বিপরীত কাজ করছে বলে সমাবেশে অভিযোগ করেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মাহতাব উদ্দীন আহমেদের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন শ্রমিকনেতা আ ক ম জহিরুল ইসলাম, হারুন-অর-রশিদ ভূঁইয়া, মাসুম বিল্লাহ, সত্যজিৎ বিশ্বাস প্রমুখ।