সরকারের বৃদ্ধাঙ্গুলি-ক্ষুদ্ধ ৩৭ পাবলিক বিশ্ব. শিক্ষকরা লাগাতার কর্মবিরতিতে
সাইফুল ইসলাম : সরকারের আচরনে অতিষ্ঠ হয়ে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ হাজার শিক্ষক একযোগে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিগুলোর সম্মিলিত মোর্চা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল একথা জানান জাতিরকন্ঠকে। তিনি বলেন, আজ সকাল থেকে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ হাজার শিক্ষক একযোগে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
বেতন বৈষম্য নিরসনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি পূরণ না হওয়ায় একযোগে সবক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি চলবে।এ সময়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স পরিচালনা বন্ধসহ সব ক্লাস, পরীক্ষা ও দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবেন তারা। তবে চলমান পরীক্ষাগুলো শেষ করা হবে। শিক্ষকদের কর্মসূচিতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএস খুসরুল আলম জানান, ফাইনাল পরীক্ষার বিষয়ে আজকে (সোমবার) সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে রোববার সন্ধ্যায় ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কোর্স ফাইনাল, সেমিস্টার ফাইনালসহ যেসব পরীক্ষা চলছে সেগুলো চলবে।
তবে নতুন করে কোনো ফাইনাল, মিডটার্ম বা অন্য কোনো পরীক্ষা শুরু করা হবে না। শিক্ষার্থীরা যেন সেশনজটে না পড়েন সেজন্য বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’তিনি বলেন, ‘যতদিন শিক্ষকদের দাবি আদায় না হবে, ততদিন পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আহ্বান এলে শিক্ষক নেতারা আলোচনায় বসবেন। কিন্তু প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে যতদিন না দাবি মেনে নেওয়া হবে, ততদিন কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হবে না।’
এর আগে দাবি পূরণের জন্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন শিক্ষকরা। তবে ওই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় গত ২ জানুয়ারি সাধারণ সভা করে শিক্ষকরা সোমবার থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় ‘কমপ্লিটলি শাটডাউন’ করার ঘোষণা দেন।
শিক্ষকদের দাবি আদায়ে ৩ জানুয়ারি শিক্ষকরা কালো ব্যাজ পরে ক্লাসে যান এবং ৭ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিন ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এর আগে শিক্ষকদের বিরোধিতার মধ্যে সরকার গত ১৫ ডিসেম্বর অষ্টম বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশ করে।
অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই গ্রেডে মর্যাদার অবনমন এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষকরা। এরপর সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই দাবি পর্যালোচনায় কমিটি করে। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকও করেন। গত ৬ ডিসেম্বর বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ১০ দিন পর বেতন কাঠামোর গেজেটে প্রথম দুটি দাবির প্রতিফলন ঘটেনি বলে শিক্ষকদের অভিযোগ।
ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তারা প্রতারিত হয়েছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করেছিলেন; কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।’