সরকারের প্রেস্টিজ ইস্যু জুলহাস-তনয় হত্যা-ঘাতকদের ধরতে লড়ছে এফবিআই’ও
এস রহমান : কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় ঘাতকদের শনাক্ত করে পাকরাও করা সরকারের প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে।পুরিশ ও গোয়েন্দরা ইতিমধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাত ঘাতক কে চিহ্নিত করেছে। ঘাতকদের গ্রেফতারে রাজধানীসহ সারা দেশে অভিযান চালানো হচ্ছে।
যে কোনো সময় তাদের গ্রেফতারের আশা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ঘাতকরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশের সব ইমিগ্রেশন পয়েন্টে কিলিং মিশনের সম্ভাব্য নেতৃত্বে থাকা দু’জনের নাম-ঠিকানাসহ সাতজনের ছবি দেয়া হয়েছে।
সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুলিশ যে দু’জনকে শনাক্ত করেছে তারা হলেন- নাজমুল হাসান নিশান ও তার বন্ধু সনেট। এর মধ্যে ফুটেজে লাল গেঞ্জি পরিহিত যুবক নিশানের বাসা ওই গলিতেই। আর সনেট উত্তরার শান্তা মরিয়ম ইউনিভার্সিটির ছাত্র।বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছবি ছাপা হওয়ার পর এ ব্যাপারে নাজমুল হাসান নিশানের খালা খেলাঘরের সংগঠক শাহীনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, নিশান গণমাধ্যমের ভুল বিশ্লেষণ ও ষড়যন্ত্রের শিকার।
সে কোনো সন্ত্রাসী কিংবা উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে নিশান তার কাছেই বড় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিশান যদি অপরাধী হতো তাহলে সে পালিয়ে যেত। ঘটনার সময় হয়তো নিশান তার বন্ধুকে নিয়ে ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল আর সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়তে পারে বলে তিনি দাবি করেন। এখন পর্যন্ত আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেনি বলে তিনি দাবি করেন।
২৫ এপ্রিল বিকালে কলাবাগানের বাসায় ঢুকে ইউএস এইডের কর্মকর্তা ও সমকামী আন্দোলনের নেতা জুলহাজ মান্নান এবং তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। জুলহাজ সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল সহকারী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির খালাতো ভাই।
এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় পুলিশের এসআই মোহাম্মদ শামীম আহমেদ ও নিহতের ভাই মিনহাজ মান্নান ইমন বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। মামলা দুটির তদন্ত করছে ডিবি। ইতিমধ্যে মামলার তদন্তে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। আগামী সপ্তাহে তারা ডিবির সঙ্গে বৈঠক করতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, সন্দেহভাজন ঘাতকরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তারা বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্র। তাদের গ্রেফতারে প্রযুক্তিগত তদন্তের পাশাপাশি বিশ্বস্ত গুপ্তচরের সহায়তা নেয়া হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, কিলিং মিশনের নেতৃত্বে থাকা দুই তরুণের নাম, ঠিকানা ও পরিবারের অবস্থান জানা গেছে। তাদের পরিবারকেও এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অপর ৫ ঘাতকের সম্ভাব্য নাম জানা গেছে।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বিভিন্ন আলামত, ফুটেজ, নিহতদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট, ফেসবুক আইডি, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক শত্রুতা, আর্থিক লেনদেন, অতীত কর্মকাণ্ড চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে তদন্ত সংস্থা। সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকার প্রায় অর্ধশত ব্যক্তির। এছাড়া পরীক্ষার জন্য উদ্ধারকৃত অস্ত্র, চাপাতি, হাতের ছাপসহ অন্যান্য আলামত সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে জোড়া খুন মামলার আসামিদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেফতারের তাগিদ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মামলার তদন্ত সংস্থাকে কাজের সুবিধার্থে ছায়া তদন্তকারী র্যাব, পিবিআই, সিআইডি ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট উইং প্রধান বা প্রতিনিধিদের ডেকে নিয়ে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশ সদর দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাতিরকন্ঠকে বলেন, ছায়া তদন্তকারী কোনো সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সমন্বয় সেলকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখার অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। এই সেল আইন প্রয়োগকারী ও তদন্ত সংস্থার সব উইংয়ের কাজ সমন্বয় করছে। সেলটি চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকবে।
সূত্র জানায়, এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০ ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট, থানা পুলিশ ও ডিবি। যার মধ্যে ৯ ধরনের আলামত পাওয়া গেছে খুনিদের একজনের কাছ থেকে এএসআই মমতাজের কেড়ে নেয়া ব্যাগ থেকে।
আলামতের মধ্যে রয়েছে একটি ৭ পয়েন্ট ৬৫ বোরের আমেরিকার তৈরি অটোমেটিক পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলিভর্তি ম্যাগাজিন, দুই রাউন্ড গুলিভর্তি একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, তেরো ইঞ্চি লম্বা একটি চাপাতি, দুটি মোবাইল সেট, ৫ ফুট লম্বা একটি পুরনো লাল চেক গামছা, একটি সাদা ও পুরনো ছাই রংয়ের লুঙ্গি, একটি পিক্যাপ, ছাই রঙের একটি প্রেসিডেন্ট লেখা ব্যাগ, আরবি ও বাংলা লেখা কিছু কাগজ, ঘটনাস্থলে হামলাকারীদের হাত ও পায়ের ছাপ, ভিক্টিমদের রক্ত, চুল, নখ ও মাথার ঘিলু।