‘সরকারের পাশে থেকে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর মহাসুযোগ হাতছাড়া খালেদার’
ডেস্ক রিপোর্টার : সম্প্রতি দেশে গুপ্তহত্যা ও জঙ্গি হামলার ঘটনায় পদত্যাগ না চেয়ে সরকারকে সহযোগিতা করলে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা আরও বৃদ্ধি পেত বলে মনে করেন সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান।আজ শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন। ‘সন্ত্রাস দমনে সরকারের চরম ব্যর্থতায় পদত্যাগ দাবি না করে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়ালে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা আরো বেশি বৃদ্ধি পেত বলেই অনেকেই মনে করে। আমরা প্রায়শঃ বলে থাকি, শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা রাজনীতি করি না। সম্প্রতি আমরা এও বলেছি, আমরা কেও প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না।
আমরা চাই জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে। তাই যদি হয় তাহলে যেখানে সরকারের ব্যর্থতার জন্য জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত সেখানে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষে সরকারের পাশে দাঁড়ানোই অনেক বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করতো বলেই অনেকের মনে করে। এই মুহূর্তে সরকারের পদত্যাগ দেশে আরো বেশি বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করবে, যা কোন জনকল্যাণকামী রাজনৈতিক দল চাইতে পারে না বলে অনেকের বিশ্বাস।’
কোন সরকার চিরস্থায়ী নয়। সরকার একটি নির্দিষ্ট সময় পরে অবশ্যই পরিবর্তন হবে। সেই পরিবর্তন নিজেদের অনুকূলে নিতে হলে সঠিক সময়ে সঠিক রাজনীতি করতে হবে। পুত্রহারা মায়ের কাছে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী যে নাটকীয়ভাবে ছুটে গিয়েছিলো, ম্যাডামও কিন্তু একইভাবে শুক্রবার গুলশান হামলার পরে শনিবার ২ জুলাই ২০১৬ তারিখ দুপুর বেলা গণভবনে ছুটে গিয়ে সরকারকে হতভম্ম করে দিতে পারতেন।
শুরু করতে পারতেন বাংলাদেশের রাজনীতির এক নতুন পথযাত্রা যার ১০০% ভাগ কৃতিত্ব হতো বিএনপির নেত্রীর। দেশের আপামর জনগণসহ সারা বিশ্ববাসী শ্রদ্ধাভরে দেখতো বিএনপির রাজনীতির প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনীতি বলিষ্ট অবস্থান। নির্দ্বিধায় বিএনপি শুধু দেশের জনগণের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা নয় তাবৎ বিশ্ববাসীকেও বিএনপির পাশে নিয়ে আসতে পারতো।
সকল সময় সব বিষয়ে সরকারের বিরোধিতা করা সঠিক রাজনীতি নয়। সব সময় কর্মীদেরকে খুশি করার বক্তৃতা দেয়াই শুধু রাজনৈতিক বক্তৃতা হতে পারে না। ঐক্যের আহবান মানে অন্যরা এসে ঐক্য করবে ভাবা যেমন সঠিক রাজনীতি নয়, তেমনি দূর থেকে কাওকে ঐক্যের কথা বলে ঐক্য করা যায় না। কারো সঙ্গে ঐক্য করতে হলে যার সঙ্গে ঐক্য করার দরকার বিনা দাওয়াতে তার বাড়িতে গিয়ে সেই ঐক্যের কথা বলা আসতে হবে এবং অনেকের মতে তা হবে সঠিক রাজনীতি।
গুলশান হামলা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি মহাসুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল। বিভেদের রাজনীতি অবসানের একটি বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। ম্যাডাম যদি কোন কিছু তোয়াক্কা না করে গণভবনে ছুটে যেতেন, ছুটে যেতেন মর্গে পুলিশ অফিসারদের মরদেহের পাশে, ছুটে যেতেন পুলিশ লাইনে, ছুটে যেতেন আর্মি স্টেডিয়ামে তাহলে অন্তত চক্ষু লজ্জার খাতিরে হলেও কিছু দিনের জন্য পুলিশি নির্যাতনের হাত থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা রক্ষা পেত।
অথচ তা না করে বিএনপির কিছু রেডিমেট নেতারা ম্যাডামের বক্তব্য ধরে সাংবাদিকদের সামনে বড় বড় বুলি আওড়িয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে লেলিয়ে দিতে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। যে সমস্ত নেতারা সাংবাদিকদের সামনে বড় বড় কথা বলে তাদের উচিৎ জনসমাবেশ করে জনগণের সামনে ঐ সকল বক্তব্য রাখা। জনগণের সামনে জনসভায় সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বক্তৃতা দেয়ার হিম্মত ওই রেডিমেট নেতাদের কতটুকু আছে তা জনগণ দেখতে চায়।
সবশেষে ম্যাডামের উদ্দেশ্যে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, এই সরকারের পদত্যাগ চাইতে হবে না। এই সরকারের আর মাত্র আড়াই বছর সময় আছে। এর মধ্যে সরকার পরিবর্তন হবেই কিন্তু সেই পরিবর্তনে আপনার, আমাদের, বিএনপির কোন ইতিবাচক সুযোগ আছে কিনা সেই অংক কষার সময় চলে এসেছে। এবার যদি আবারো সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন তাহলে ইতিহাস কিন্তু ক্ষমা করবে না। তখন কিন্তু আপনার পদত্যাগের দাবি উঠতে পারে যা মানার দায়িত্ব আপনার কাঁধেই পড়বে। আমার বেয়াদবির জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।মেজর অব. মো আখতারুজ্জামান, সাবেক সংসদ সদস্য।