সরকারের কড়া সমালোচনা নিউইয়র্ক টাইমসে- ’বাংলাদেশে ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনে কঠোর নীতি’
নিউইর্য়ক টাইমস অবলম্বনে আসমা খন্দকার : বাংলাদেশের বিশিষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের ঘটনায় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা।নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, ’বাংলাদেশে ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনে সরকারের কঠোর নীতি’।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই ঘটনায় পুরিশ তার সহযোগীদেরও খুঁজছে। দেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ঘটনা এটি। শফিক রেহমান (৮১) বর্তমানে মাসিক মৌচাকে ঢিল ম্যাগাজিনের সম্পাদক।
বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সঙ্গে তিনি জড়িত। রাজধানী ঢাকায় তার নিজ বাসা থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান বলেছেন, তাকে যারা তুলে নিয়ে গেছে তারা প্রথমে নিজেদের পরিচয় দেয় এই বলে যে, তারা একটি টেলিভিশন স্টেশন থেকে এসেছে।
তারা তার সাক্ষাতকার নিতে চায়। শফিক রেহমানের পাচক আলী আজম বলেন, পরে ওইসব অফিসার নিজেদের পরিচয় দেন এই বলে যে, তারা ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার লোক। পুলিশ বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকায় সন্দেহভাজহন শফিক রেহমান।
এ বিষয়ে আগস্টে একটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। ঢাকা পুলিশের মুখপাত্র মারুফ হোসেন সরদার বলেছেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রমাণ পেয়েছেন যে, ওই ষড়যন্ত্রে জড়িত রয়েছেন শফিক রেহমান। শনিবার যদিও কিছু মিডিয়া রিপোর্ট করে যে, তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে মারুফ হোসেন সরদার বলেন, একটি অপরাধ সংঘঠনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগেই শুধু তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শফিক রেহমানের বাসায় নিজেদের টেলিভিশন সাংবাদিক বলে পরিচয় দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, এর আগে জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকা যায় যায় দিন-এর সম্পাদক ছিলেন শফিক রেহমান।
১৯৮০র দশকে সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনকালে তার তীব্র সমালোচনক ছিলেন শফিক রেহমান। তখনই তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও এর নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের অধীনে একপেশে হয়ে আছেন।
সাংবাদিকরা ও সুশীল সমাজের গ্র“পগুলো বলছে, ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনে সরকার ক্রমাগত বর্ধিত হারে কঠোর নীতি অবলম্বন করছে। সরকারের সমালোচক আরও দু’জন সাংবাদিক এখন তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা মোকাবিলা করছেন।
তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা করা হয়েছে। তাদের একজন হলেন ইংরেজি ভাষায় বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রিদ্রোহের এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। আর মানহানির মামলা রয়েছে ৬০টির বেশি।
আরেকজন সাংবাদিক হলেন প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান। ডেইলি স্টারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এ পত্রিকা। মতিউর রহমান ২৫টি মানহানি মামলা মোকাবিলা করছেন। শফিক রেহমানের আইনজীবি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেছেন, আগস্টে যে মামলা হয়েছে তাতে নাম নেই শফিক রেহমানের। তারা যে যুক্তিতে তাকে সন্দেহ করছে তা পুলিশ রেকর্ডে স্পষ্ট নয়। পুলিশ বলেছে, শফিক রেহমানকে ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।