বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে কর্মী যাবে সৌদি আরবে। তবে বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা শতভাগ লোক পাঠাবেন।
ঢাকা সফররত সৌদি প্রতিনিধিদল আজ সোমবার সকালে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব যেতে একজন কর্মীর ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না।
আজ সকালে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসে প্রতিনিধিদল। মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কর্মীদের সৌদি আরবে যাওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সৌদি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাইদ।
দীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আবারও কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। কোন প্রক্রিয়ায় লোক যাবে, সেটি চূড়ান্ত করতেই গতকাল রোববার ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে।
মন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতের পর মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সৌদি শ্রমবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার। ২০০৮ সালে এই বাজারটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারা আবার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে। আমরা আশা করছি, সৌদি আরব কর্মী নেওয়া শুরু করায় মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশও কর্মী নেওয়া শুরু করবে।’
এর আগে মালয়েশিয়ায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় কর্মী গিয়েছিল। কিন্তু সরকারি ব্যবস্থাপনার কারণে খুব বেশি কর্মী সেখানে যেতে পারেননি। এমন অবস্থায় সৌদি আরবেও সরকারি ব্যবস্থাপনায় লোক যাবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বেসরকারি এজেন্সিগুলোর নানারকম প্রতারণার কারণেই মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে লোক পাঠাতে হয়েছিল।
আর জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা যে লোক পাঠায়, সেটিও তো সরকারি প্রক্রিয়ায় হয়। সরকারি প্রক্রিয়া ছাড়া তো একটা লোকও বিদেশে যেতে পারেন না। এবারও তাই হবে। সৌদি আরবে লোক পাঠানোর পুরোটাই বেসরকারিভাবে হবে। তারাই সব প্রক্রিয়া করবেন। সরকার শুধু নিয়ন্ত্রণ করবে।
সৌদি আরব যেতে কেমন খরচ হবে—সে বিষয়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমাদের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল খরচ। আমরা এবার নামমাত্র খরচে কর্মী পাঠাতে চাই। একজন কর্মীর সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হবে।’
বেসরকারি প্রক্রিয়ায় গেলে খরচ বাড়বে কিনা বা বেসরকারি রপ্তানিকারকেরা কত টাকা প্রক্রিয়া ফি বাবদ নেবে—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা তো ব্যবসা করবেই। কত টাকা নিল সেটা বিষয় না। আমরা দেখব যেন আকাশচুম্বী ব্যয় না হয়। আর আমরা চাই কর্মীদের কাছ থেকে একটা টাকাও নেওয়া হবে না। যারা লোক নেবে, তারাই সে খরচ দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ভিসা কেনাবেচার কারণেই সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যায়। এবার ভিসা কেনাবেচা করলে ১৫ বছরের জেল হয়ে যাবে।
সৌদি আরবে কী পরিমাণ কর্মী যাবে—জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে গৃহকর্মী নেওয়ার ব্যাপারে সৌদি আরব আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা বলছেন, মাসে ১০ হাজার কর্মী তারা নেবেন। সেই হিসাবে বছরে এক লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মী সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।’ শুধু গৃহকর্মীই যাবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ড্রাইভার, ম্যানেজারসহ ১০টি খাত আছে গৃহকর্মী খাতে। এ ছাড়া সৌদি আরবে ছয়টি মেগাসিটি হচ্ছে। সেখানেও তারা কর্মী নিতে চায়।’ কর্মীদের বেতন ১২০০ থেকে ১৫০০ রিয়ালের মধ্যে হবে বলে মন্ত্রী জানান।