‘সরকারকে বিশ্বব্যাংকের কাছে এখন জবাব চাইতে হবে’
সাইফুল বারী মাসুম : অভিযোগ প্রমাণের আগেই বিশ্বব্যাংক কেন পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করল তার জবাব সরকারকে চাইতে হবে। সংক্ষুদ্ধ পার্টি হিসেবে সরকারের এই জবাব চাওয়া উচিত বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির মামলাকে ‘অনুমানভিত্তিক’ ও ‘গুজব’ বলে উল্লেখ করেছেন কানাডার একটি আদালত। এরই প্রেক্ষিতে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে টিআইবি’র বক্তব্য চাওয়া হলে ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আদালত যে রায় দিয়েছে, সেখানে কয়েকটা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। জল্পনা, গুজব, রটনার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল। যুক্তিগুলো আদালতের কাছে আমলযোগ্য হয়নি। সে কারণে মামলা খারিজ করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হলো— বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগগুলো উত্থাপন করেছিল সেগুলো যুক্তিহীন ছিল। এই অভিযোগের মাধ্যমে সরকার ও দেশের জনগণের ওপর একটা কলঙ্কের কালিমা লেপন হয়েছিল। এই রায়ের মাধ্যমে আমরা স্বস্তি পেয়েছি।’
আদালতের রায়ের মাধ্যমেই সব শেষ হয়নি উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমি মনে করি বিষয়টি এখনও চলমান আছে। কারণ, বিশ্বব্যাংক নিজেরাই দেশবাসীকে জানিয়েছিল যে তারা তদন্ত করে এই অভিযোগগুলো পেয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা আন্তর্জাতিক তদন্ত দল নিয়ে এসে তদন্ত করেছিল। সেই তদন্তেও তারা অভিযোগ অব্যাহত রাখলো। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই তারা অর্থায়ন বন্ধ করলো। প্রমাণ হওয়ার আগে অর্থায়ন বন্ধ কোন যুক্তিতে হলো? এ ব্যাপারে সরকারের ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত।’
সারাবিশ্বে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে যেসব প্রকল্প হচ্ছে, হবে বা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ দুর্নীতি বা দুর্নীতির অভিযোগমুক্ত কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘তারা পদ্মা সেতু নিয়ে যেমন কঠিন অবস্থান নিয়েছিল, তার অর্থ কি এই যে বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে বা হবে, সেগুলোতে কোনও ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ বা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রেরও অভিযোগ নেই? যদি থেকেই থাকে তবে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগের ঘটনা ঘটেছে তাদের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুর্বল থাকার কারণে।’
দুর্নীতির এই অভিযোগের মাধ্যমে দেশের ওপর কালিমা লেপন করা হয়েছে উল্লেখ করে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগে তারা কেবল পদ্মা সেতুতে অর্থায়নই বন্ধ করেনি, তারা দেশ ও জনগণের ওপর কালিমা-ও লেপন করেছে। আমি মনে করি, এর জন্য সরকার সংক্ষুদ্ধ পার্টি হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কাছে জবাব চাইতে পারে।’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’কে ‘শো-পিস’ দাবি করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে শূন্য সহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে, তারা শোপিস হিসেবেই এটা দেখাতে চেষ্টা করেছে। এর একটি ভিত্তি থাকতে হবে। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে ওই অভিযোগ করা হয়েছিল। এর পেছনে অন্য কিছু কাজ করেছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।’
যুক্তিহীনভাবে প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের কোনও অধিকার বিশ্বব্যাংকের নেই উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল। এটা নিয়ে বিতর্ক আছে প্রচুর। বিশ্বব্যাংকও আমাদের ওপর নির্ভরশীল। কারণ তারা আমাদের মতো দেশে অর্থ সহায়তা দেয় বলেই টিকে আছে। কাজেই যুক্তিহীনভাবে অর্থায়ন বন্ধের অধিকার তাদের কেউ দেয়নি।’
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করেছিল বিশ্বব্যাংক। সেই দুর্নীতির মামলাকে ‘অনুমানভিত্তিক’ বলে উল্লেখ করেছেন কানাডার একটি আদালত। কানাডার সংবাদমাধ্যম টরোন্টো স্টার সূত্রে শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এই তথ্য জানা যায়।