• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে কোটা আন্দোলনকারীদের শাহবাগ দখল


প্রকাশিত: ৩:৫৬ পিএম, ১৪ মে ১৮ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২০১ বার

বিশেষ প্রতিনিধি :   ফের কোটা আন্দোলনের দখলে শাহবাগ চত্বর এলাকা। এ যেন সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে প্রজ্ঞাপন দাবি করার kota-shabag-www.jatirkhantha.com.bdশামিল। ইতিমধ্যে আন্দোলনকারীরা বলেছে, প্রজ্ঞাপন আদায় করেই তারা ঘরে ফিরবেন। এলক্ষ্যে কোটা আন্দোলনকারীরা চত্বরের মাঝখানে এসে নিজেদের দখল নিয়েছে ফেলেছেন। তাদের দাবি কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত ফয়সালা করবেন।

এতে ওই এলাকার রাস্তাগুলোতে অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।সোমবার বেলা পৌনে ১টা থেকে তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, কোটা বাতিলে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে এ আন্দোলন করছেন তারা।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, আমরা বারবার আলটিমেটাম দিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। আমরা একরকম বাধ্য হয়েই শাহবাগে অবস্থান নিয়েছি। কোনো কমিটি নয়, আমরা সংস্কার চেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিল করেছেন সেটিকেও সাধুবাদ জানাই। এখন দ্রুত প্রজ্ঞাপন চাই।

সরেজমিন দেখা গেছে, শাহবাগ চত্বরের মাঝখানে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক হাজার আন্দোলনকারী। গাড়ি চারপাশ থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আন্দোলনকারীরা অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার গাড়িগুলোকে ছেড়ে দিচ্ছেন। আন্দোলনকারীদের হাতে প্ল্যাকার্ড রয়েছে। বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন তারা।

এর আগে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে বেলা ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনের দাবিতে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

উল্লেখ্য, গত ৮ এপ্রিল থেকে চার দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন।

পর দিন সচিবালয়ে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনকারীরা।

বৈঠক শেষে মন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের অত্যন্ত সুন্দর আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি- আগামী ৭ মের মধ্যে সরকার বিদ্যমান কোটার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। সেই পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকবে।

এ সময় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনও ৭ মে পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।

এ ঘোষণার পর ৯ এপ্রিল রাতে আন্দোলন স্থগিত হয়ে যায়। তবে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর এক বক্তব্য কেন্দ্র করে ১০ এপ্রিল থেকে ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসার দাবি জানান।

পরে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কোটাপদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে সব চাকরিতে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পর দিন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল বের করেন।

এর দুই সপ্তাহ পর গত ২৬ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। না হলে ফের আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন তারা।

পর দিন ২৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।

গত ২ মে সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ধরনের ক্ষোভ থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ছাত্ররা কোটাব্যবস্থা বাতিল চেয়েছে, বাতিল করে দেয়া হয়েছে।

এর পর গত ৭ মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছিলেন, সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল বা সংস্কারের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।

তার এ বক্তব্যের পর গত ৯ মে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা।

এ সময় তারা ঘোষণা দেন ১০ মের মধ্যে কোটা সংস্কারে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে সারা দেশে সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠোর আন্দোলন শুরু হবে।

সর্বশেষ গতকাল রোববার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।

বিকালের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় আজ সোমবার থেকে সারা দেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা।