• শুক্রবার , ১৫ নভেম্বর ২০২৪

‘সমৃদ্ধির মহাসড়কে’ বাংলাদেশ-যেভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন হাসিনা


প্রকাশিত: ৩:৪৮ এএম, ১২ জানুয়ারী ১৭ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৩৮ বার

এস রহমান  :  গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ‘সমৃদ্ধির মহাসড়কে’ এখন বাংলাদেশ। দেশ এগিয়ে hhনিচ্ছেন শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয় বাস্তবতা। এগিয়ে চলেছে মধ্যম আয়ের পথে এক নতুন বাংলাদেশ। এটাই শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের এই উন্নয়নের যাত্রায় মাথাপিছু আয় বেড়ে বাংলাদেশ উচ্চ মধ‌্যম আয়ের দেশে উঠে এসেছে। মূল‌্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; আগামী বছরগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ৭ শতাংশের নিচে আর নামবে না বলে আশাবাদ ঝরছে অর্থমন্ত্রীর কণ্ঠে।

গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রাখার উপর জোর দিয়ে বাংলাদেশকে ‘সমৃদ্ধির মহাসড়কে’ তোলার স্লোগান নিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসেছিল আওয়ামী লীগ, তার তিন বছর পার হল।
সহিংসতা দিয়ে শুরু হলেও মেয়াদের অর্ধেকের বেশি পথ পেরিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিচারে অনেকটা নির্ভার এখন স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দলটি।

hhhসরকার পতনের আন্দোলনে ব‌্যর্থ হওয়ার পর মধ‌্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তোলা বিএনপির সুর দৃশ‌্যত অনেকখানি নিচু; পরবর্তী নির্বাচনেই এখন চোখ তাদের। পরবর্তী ভোটে জোর দিচ্ছে আওয়ামী লীগও।

৫ জানুয়ারির ভোটে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে সরকার গঠনের পর দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকেই বেশি জোর দিয়েছিল। সরকারের শপথ নেওয়ার দিন বিএনপির অবরোধে ফেনীতে মহাসড়কে জ্বলছে এই ট্রাক; তিন বছর পর এখন সেই চিত্র আর নেই।

তার সুফল এখন দেশবাসী ভোগ করেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন বছর পূর্তির আগের দিন এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সরকার শুধু নিজেদের ক্ষমতা ভোগ করতে আসে না সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।”

তিন বছর পূর্তিতে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে আসছেন শেখ হাসিনা; তাতে উন্নয়নের অগ্রগতি এবং পরবর্তী পরিকল্পনা তিনি তুলে ধরবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

hতবে বিরোধী দলের উপর ‘খড়গহস্ত’ সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ‌্যমে ‘গণতন্ত্রহীন অবস্থাকে’ আড়াল করতে চাইছে বলে জোর অভিযোগ বিএনপির।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবারই এক সভায় সরকারের ‘উন্নয়ন মেলা’র সমালোচনা করে বলেন, “আইয়ুব খানও ১৯৬৮ সালে উন্নয়নের ১০ বছর করেছিল। ’৬৯ সালে তাকে পত্রপাঠ বিদায় হতে হয়েছিল।”

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশে মত প্রকাশের অধিকারের সুরক্ষা সঙ্কুচিত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোরও অভিযোগ।

দেশে-বিদেশে এই সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, ভোটের চেয়ে উন্নয়নই বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখন ‘বেশি কাঙ্ক্ষিত’।

সরকারের তৃতীয় বছরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিং-এর সফরেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রশংসা পেয়েছে। তেমনি বিদেশি নানা ফোরামে প্রশংসায় ভেসেছেন শেখ হাসিনাও।

সরকারের এই উন্নয়নের যাত্রায় মাথাপিছু আয় বেড়ে বাংলাদেশ উচ্চ মধ‌্যম আয়ের দেশে উঠে এসেছে। মূল‌্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; আগামী বছরগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ৭ শতাংশের নিচে আর নামবে না বলে আশাবাদ ঝরছে অর্থমন্ত্রীর কণ্ঠে।h3

বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা উন্নীত হয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াটে, আট বছরে এক কোটি ১৪ লাখ নতুন সংযোগের মাধ্যমে ৭৮ শতাংশ মানুষ এসেছে বিদ‌্যুৎ সুবিধার আওতায়।

দেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতুর ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মূল পদ্মাসেতুর কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত হয়েছে, শুরু হয়েছে ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ।

সোনাদিয়ার গভীর সমুদ্র বন্দরে কোনো অগ্রগতি না হলেও নতুন সমুদ্র বন্দর হিসেবে পায়রার যাত্রা শুরু হয়েছে। রেলের উন্নয়নেও চলছে নানা প্রকল্প, যমুনা নদীর উপর আলাদা রেল সেতুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

হতদরিদ্র, পঙ্গু ও প্রতিবন্ধীরা যাতে স্বল্পমূল্যে চাল কিনতে পারে, সেজন্য পল্লী রেশনিং কার্ড চালু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণও শুরু হয়েছে।

তবে এই উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্নীতির অভিযোগও উঠছে। ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণেই ব‌্যাপক অভিযোগের ব্যাপক ‍উঠলে সরকারকে নড়েচড়ে বসতে হয়।

গত জানুয়ারি প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন‌্যাশনালের সূচকে বাংলাদেশের ‘দুর্নীতিচিত্রে’ তেমন কোনো হেরফের হয়নি। স্কোর আগের বছরের সমান থাকলেও অবস্থানের অবনমন ঘটেছে এক ধাপ।
নানা ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে সরকার এখনও সফল হয়নি বলে স্বীকার করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও।

বিএনপি মহাসচিব ফখরুলের ভাষায়, দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে, আর এর মধ্যে ব‌্যাংক খাত ‘ধ্বংস করে ফেলেছে সরকারের দুর্নীতি’।  ব‌্যাংক খাতে অনিয়ম নিয়ে সরকারকে গত কয়েক বছর ধরেই সমালোচনা সইতে হচ্ছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে কেন্দ্রীয় ব‌্যাংকের রিজার্ভ চুরির আলোচিত ঘটনা, যার তদন্ত এখনও চলছে।

একের পর এক ব্লগার, অনলাইন অ‌্যাক্টিভিস্ট হত‌্যাকাণ্ডের পরও খুনি ধরা না পড়ার কারণে সমালোচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে সচকিত হয়ে উঠতে হয় গুলশানের ক‌্যাফেতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশি মারা যাওয়ার পর।

সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী সব জঙ্গি মারা যাওয়ার পর র‌্যাব-পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে নিহত হন শীর্ষ জঙ্গিনেতাদের অনেকেই।

জঙ্গি দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এসব অভিযান প্রশংসা পেলেও বিচার-বহির্ভূত হত‌্যাকাণ্ডের সমালোচনাও হচ্ছে; আর বিরোধী নেতা-কর্মীদের গুম-খুনের অভিযোগ তো আগে থেকেই ছিল।

গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার মধ‌্যদিয়ে অভিজাত পরিবারের আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার তথ‌্য প্রকাশ পায়, যা এতদিন ছিল অনেকেরই অজানা।

তরুণদের জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে জনসচেতনতামূলক নানা কার্যক্রমও প্রশংসা কুড়িয়েছে নানা মহলে।

নানা চাপের মুখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালিয়ে যাওয়া এবং দণ্ডিত প্রভাবশালী জামায়াত নেতাদের ফাঁসি কার্যকর শেখ হাসিনার দৃঢ়তার পরিচয়ই মেলে ধরেছে।

তবে আওয়ামী লীগে মধ‌্যে কারও কারও সাম্প্রদায়িক মনোভাবের প্রকাশও দেখেছেন অনেকে ওলামা লীগের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। বছরের শুরুতে পাঠ‌্যপুস্তকে ত্রুটির সঙ্গে কয়েকটি লেখা সরানোকে হেফাজতিদের প্রতি সরকারের নমনীয়তার প্রকাশ বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের এবং গাইবান্ধায় সাঁওতালদের উপর হামলায় দল সংশ্লিষ্টতার জড়িত থাকার অভিযোগ আসার সমালোচনাও সইতে হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক দল আওয়ামী লীগকে।

দলের বিভিন্ন সংসদ সদস‌্য, সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা সরকারের উপর গিয়েও পড়ছে। যে কারণ দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বারবার হুঁশিয়ার করতে হচ্ছে নেতা-কর্মীদের।

যে কোনো দেশের রাজনীতির উপর সার্বিক বিষয়গুলো নির্ভর করে বলে গত দেড় বছরে নিরুত্তাপ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সরকারের জন‌্য অনেকটাই অনুকূল ছিল।

সহিংস স্থানীয় নির্বাচনের পর প্রায় অভিযোগহীন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির উদ‌্যোগে সংলাপে সব দলের অংশগ্রহণে এক ধরনের স্বস্তি দেখছে জনগণ।

আগামী দুই বছর এই অবস্থা থাকলে সেটা আওয়ামী লীগের ঘোষিত কাজ বাস্তবায়নের জন‌্য বড় সুযোগই করে দেবে; কারণ নিজেদের জন‌্য এমন অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশ বাংলাদেশের কোনো ক্ষমতাসীন দল আগে পায়নি।