• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তায় সামুদ্রিক বাহিনী প্রয়োজন-প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত: ১১:৫৪ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ১৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৭৭ বার

 

Hasina-পটুয়াখালী.জেলা প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সমুদ্র সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন সমুদ্র এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা। আর এ জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী সামুদ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ঘাঁটি সিজি বেইজ অগ্রযাত্রা বাংলাদেশে কোস্ট গার্ডের মান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এই প্রশিক্ষণ ঘাঁটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং কোস্ট গার্ডকে যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর এলাকায় নবনির্মিত বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড প্রশিক্ষণ ঘাঁটি ‘সিজি বেইজ অগ্রযাত্রা’র কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সুবিশাল সমুদ্র এবং উপকূলীয় এলাকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান কোস্ট গার্ডের অন্যতম দায়িত্ব। এই বাহিনীর সদস্যদের কর্তব্যনিষ্ঠা এবং কর্মদক্ষতা বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলে কোস্ট গার্ড একটি আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা, দেশের অভ্যন্তরীণ জলজ সম্পদ সুরক্ষা এবং নদীপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কোস্ট গার্ডের ভূমিকা অপরিসীম।
বেলা দুইটার দিকে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে পটুয়াখালীতে আসেন এবং সেখান থেকে তিনি সড়কপথে নবনির্মিত বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড প্রশিক্ষণ ঘাঁটি সিজি বেইজ অগ্রযাত্রায় পৌঁছান।
১১ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফায় তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীর সদর দপ্তর পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তরসহ একটি সুসংগঠিত নৌবহরের উপস্থিতির দাবি জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই নিরিখে ১৯৭৪ সালে টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস ও মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়। ২০০৯ সালে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়ার ফলে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং এ বছর ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ হওয়ায় বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডের প্রায় সমপরিমাণ সমুদ্র এলাকার সম্পদের ওপর আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত বছরগুলোতে চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙর এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর অব্যাহত নিরাপত্তায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের কর্মতৎপরতা আজ বহির্বিশ্বেও সমাদৃত। পটুয়াখালীতে নবনির্মিত পায়রা সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা প্রদানেও কোস্ট গার্ড অনন্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যুতা দমন, চোরাচালানবিরোধী অভিযান, জাটকা নিধন প্রতিরোধ এবং মা ইলিশ রক্ষায় কোস্ট গার্ডকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোস্ট গার্ডের মূলমন্ত্র হলো সমুদ্রের অভিভাবক। তাই বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার জনগণকে আরও সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কোস্ট গার্ডে একটি জোন, তিনটি বেইজ, ১৮টি স্টেশন, ১০টি আইটপোস্ট, ৫৭টি বিভিন্ন ধরনের জলযান, আটটি পন্টুন এবং এক হাজার ২৮২ জন জনবল যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও কোস্ট গার্ডের জন্য আরও ১৮টি বিভিন্ন ধরনের জলযান ও আটটি পন্টুন নির্মাণাধীন। বৃহৎ আকারের আটটি অফশোর পেট্রোল ভেসেল সংযোজনের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোস্টগার্ড সদস্যরা তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে দেশের সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড প্রশিক্ষণ ঘাঁটি সিজি বেইজ অগ্রযাত্রায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত কোস্ট গার্ড সদস্যদের প্যারেডে সালাম গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকার ১৪টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও বৃক্ষরোপণ করেন।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, চিফ হুইপ আ. স. ম ফিরোজ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান মিয়া, জাপা সাংসদ এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানেরা, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পটুয়াখালীর সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর এলাকায় ৪৩ কোটি ৫৬ লাখ ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে কোস্ট গার্ডের আধুনিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটি সিজি বেইজ অগ্রযাত্রা স্থাপিত হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে ১৯টি ভবন ও সাতটি স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, কমান্ড্যান্ট বাংলো, অফিসার্স মেস ও অফিসার্স বাসভবন। রয়েছে নাবিকদের বাসস্থান, প্যারেড গ্রাউন্ড, এমটি শেড, খেলাধুলার মাঠ। এ ছাড়াও অগ্রযাত্রার প্রবেশমুখের বাম দিকে রয়েছে বিশাল দিঘি এবং দিঘির চারপাশে ফুল ও বিভিন্ন গাছ এই ঘাঁটি সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছে।
গণপূর্ত বিভাগ, পটুয়াখালী কার্যালয় জানায়, ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে ‘পটুয়াখালীতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড প্রশিক্ষণ ঘাঁটি নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার পশ্চিমে দুর্গাপুর এলাকায় ২৩ দশমিক ৬৮ একর জমির ওপর এই প্রশিক্ষণ ঘাঁটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ কাজে ব্যয় হয়েছে ৪৩ কোটি ৫৬ লাখ ২৮ হাজার টাকা। জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।