সব দলের ঐকমতে নির্বাচন কমিশন!আজ খালেদার ঘোষণায় এটাই থাকছে?
এস রহমান : সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করা এবং ন্যায়পরায়ণ, বিতর্কমুক্ত, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠন করার প্রস্তাব দিতে পারেন খালেদা জিয়া।নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও কাঠামো সম্পর্কে বিএনপির একটি প্রস্তাব আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করবেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে এই প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন তিনি। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হবে।
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে এখনো কোনো আইন নেই। সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান নিজ উদ্যোগে একটি ‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে বর্তমান কমিশন গঠন করেছিলেন। বর্তমান কমিশনের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে এখন আবার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটি করা, বিতর্কমুক্তদের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ এবং ভোটগ্রহণ, গণনাসহ নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু করতে প্রস্তাব তুলে ধরবেন। তবে তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবেন না। তবে কমিশনারদের একটি যোগ্যতার মাপকাঠি তুলে ধরবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি এবং নির্বাচনকালীন কমিশনের ভূমিকার বিষয়ে আলোকপাত করবেন খালেদা জিয়া।
১২ পৃষ্ঠারও ওই প্রস্তাবের মূল কথা হচ্ছে, সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করা এবং ন্যায়পরায়ণ, বিতর্কমুক্ত, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠন করা।
কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু বর্তমান কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান নিজ উদ্যোগে সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। বিএনপি চায় এবারও রাষ্ট্রপতি সে ধরনের উদ্যোগ নেবেন এবং সব কটি রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই সার্চ কমিটি গঠন করবেন। বিএনপির চেয়ারপারসন এই প্রস্তাব করবেন।
সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সে কমিশনে কে কে থাকবেন—বিএনপি তা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলবে না বা কারও নাম প্রস্তাব করবে না। তবে তারা দেশপ্রেমিক, সৎ, সবার কাছে শ্রদ্ধাভাজন, বিতর্কমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের কমিশনার করার প্রস্তাব করবে। তাঁরা হাইকোর্টের বিচারপতি ছাড়া সাবেক আমলা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক বা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি যে কেউ হতে পারেন।
বিএনপি প্রস্তাবে, সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের কমিশনার করার ক্ষেত্রে অন্তত তিন বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার শর্ত থাকবে। পাশাপাশি নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যাতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের অনুসরণ করে সে জন্য কিছু প্রস্তাব থাকতে পারে। ভোট গণনার সময় যাতে কোনো কারচুপি না হয় সে বিষয়েও প্রস্তাব থাকতে পারে।
সূত্র জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসনের এই প্রস্তাব হবে মূলত আলোচনা বা সমঝোতায় আসার জন্য সরকারের প্রতি এক ধরনের আহ্বান। সরকার বা আওয়ামী লীগ যদি এই প্রস্তাব গ্রহণ না করে পাল্টা কোনো প্রস্তাব দেয় বিএনপি সেটি নিয়েও আলোচনায় প্রস্তুত থাকবে। সরকার এই আহ্বানে কতটুকু সাড়া দেয় বিএনপি তা দেখতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে দলের করণীয় ঠিক করবে।