সবাই আমাকে মাফ করবেন-আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি-২ খুনে পরিকল্পিত স্ট্যাটাস!
এস রহমান : সবাই আমাকে মাফ করবেন-আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি- মৃত্যুর আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পর একই হোটেলে খুন হয়েছে দুই যুবক যুবতী। এ ঘটনাকে পরিকল্পিত খুন এবং স্ট্যাটাসও পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছে গোয়েন্দারা।
রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার এলাকায় অবস্থিত হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল থেকে যুবক-যুবতীর জোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে ধন্দে পড়েছেন আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।
মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে নিহত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মিজানুর রহমানের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে তৈরী করেছে ধোয়াশা। এটি পরিকল্পিত হত্যা-নাকি আত্মহত্যা তা খতিয়ে দেখতে উঠেপড়ে লেগেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ঘটনা যা-ই ঘটুক তা যে পরিকল্পিত এটা নিশ্চিত হয়েছেন তারা।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ ওই হোটেলের ৩০২ নম্বর কক্ষ থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে। এর আগে খবর পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। খবর পেয়ে সেখানে যান সিআইডি, পিবিআই ও র্যাবের সদস্যরাও। তারাও সংগ্রহ করেন আলামাত।
লাশ উদ্ধার হওয়ার প্রায় ১৫ ঘণ্টা আগে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মিজানুর। মিজান খান (https://www.facebook.com/songgihinmizan.mizan/photos?pnref=lhc) নামের ওই ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, ‘আমার থাকার ম্যাচে কিছু খাবার টাকা পাইতে পারে, উনু খাঁ শিশিরদের দোকানে ২৫ টাকা পাবে, কালিকাপুরের আরিফ বন্ধু ১শ’ টাকা পাবে সিম না বলে নিছিলাম তার জন্য। টাকাগুলো যেন বাসা থেকে প্রদান করে। এছাড়া আমার পাওনা নেই। সবাই আমাকে মাফ করবেন, আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে ওই স্ট্যাটাস দেন মিজানুর। তার এ বক্তব্যে মন্তব্যও করেন তার কয়েকজন বন্ধু। এরই মধ্যে মিজানুরের স্ট্যাটাসের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে তারা তদন্ত করছেন। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসও একটি। ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে অন্য কেউ এটা করেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনিয়ে তারা আইনত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
নিহত মিজানুর রহমান (২৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। তিনি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার পাঠানপাড়া এলাকার উমেদ আলীর ছেলে। এছাড়া তার সঙ্গের সুমাইয়া নাসরিন (২০) পাবনা সদরের রাধানগর এলাকার আব্দুল করিমের মেয়ে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া পরিবারের সঙ্গে বগুড়ায় থাকতেন। তার বাবা আব্দুল করিম গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক। তিনি গাইবান্ধা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাদের দু’জনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা বুধবার রাত ১০টার পর ওই হোটেলে ওঠেন। হোটেলের রেজিস্টারে তাদের এই পরিচায় দেন তারা। ব্যবসার কারণে তারা রাজশাহীতে এসেছেন বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়। শুক্রবার সকালে তাদের হোটেল ছেড়ে যাবার কথা ছিলো। দুপুরেও তারা বেরিয়ে না যাওয়ায় বাইরে থেকে লাগানো তালা খুলে ভেতরে যান হোটেল কর্মচারীরা। পরে তাদের লাশ দেখে পুলিশে খবর দেন। তখনই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ।
পুলিশের ভাষ্য, মিজানুর রহমানের লাশ কক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এসময় তার দুই হাত পিছমোড়া করে বাঁধা ছিলো। এছাড়া বিছানায় পড়েছিলো সুমাইয়ার লাশ। তার মুখে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। এছাড়া তার মুখে বালিশ চাপাও ছিলো। প্রাথমিক আলামত দেখে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। হত্যার পর কক্ষের বাইরে থেকে দরজায় সয়ংক্রিয় তালা দিয়ে চলে গেছে দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই হোটেলের সুপারভাইজার রবিউল ইসলাম (৩৫), হোটেল বয় নয়ন হোসেন (২৫), ফয়সাল আহম্মেদ (২৬) ও বখতিয়ার হোসেনকে (৩০) নিয়ে গেছে পুলিশ। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের হোটেল থেকে নিজ হেফাজতে নেয় পুলিশ।