সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন মি.ক্লিন আনিসুল
বিমানবন্দরে মেয়রের লাশ গ্রহণ করতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল আলম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেখান থেকে বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে মরদেহ বনানীর বাসায় নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনিসুল হকের বনানীর বাসায় যান। তিনি মরহুমের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং তাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান। ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপির নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ শত শত মানুষ আনিসুল হকের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাতে তাঁর বাসায় ছুটে যান।
এদিকে আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বস্তরের হাজারো মানুষ প্রিয় মেয়রকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। সেখান থেকে আনিসুল হকের মরদেহ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি বেলা সাড়ে তিনটায় আর্মি স্টেডিয়ামে পৌঁছায়। সেখানকার চারটি ফটক দিয়ে হাজারো মানুষ সারিবদ্ধভাবে স্টেডিয়ামে ঢোকেন। ছিল উপচে পড়া ভিড়। বাইরেও ছিল সাধারণ মানুষের ঢল।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন, স্পিকার শিরীন শারমিনের পক্ষে ক্যাপ্টেন মোশতাক আহমেদ, আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন এবং সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়া বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই, বিকেএমইএসহ সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় সিক্ত হন তিনি।
বাদ আসর জানাজায় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষের ঢল নামে।ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের মরদেহ শনিবার দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। মেয়রের একান্ত সচিব আবরাউল হাসান জাতিরকন্ঠ কে বলেন, মেয়রের মরদেহের সঙ্গে দেশে এসেছেন তাঁর স্ত্রী রুবানা হক, ছেলে নাভিদুল হক, দুই মেয়ে ওয়ামিক উমায়রা ও তানিশা ফারিয়াম্যান হক।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হকের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বনানী কবরস্থানে মা ও ছোট সন্তান শারাফের সঙ্গে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি। আজ শনিবার বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে বিকেল সোয়া ৪টায় রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর লন্ডনের সেন্ট্রাল মসজিদে আনিসুল হকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার আগে আনিসুল হকের একমাত্র ছেলে নাভিদুল হক বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন একজন শৌখিন মানুষ। তিনি সুখী ও হাসি-খুশি মানুষ ছিলেন। দেশবাসীর কাছে বাবার জন্য দোয়া চাই। কাজের খাতিরে কেউ যদি আমার বাবার ব্যবহারে দুঃখ পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনারা তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েন।’প্রয়াত এই মেয়রের কুলখানি ৬ ডিসেম্বর বুধবার। সেদিন গুলশানের আজাদ মসজিদে বাদ আসর তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান মেয়র আনিসুল হক। অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৩ আগস্ট তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর শরীরে মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকেরা। এরপর তাঁকে দীর্ঘদিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। একপর্যায়ে মেয়রের শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাঁর কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র খুলে নেওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার মেয়রের পরিবারের একজন সদস্য বলেন, রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাঁকে আবার আইসিইউতে নেওয়া হয়। এরপর তাঁর ফুসফুসও আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা যান মেয়র আনিসুল হক।
এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি, ব্যবসায়ী ও একসময়কার জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আনিসুল হক ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তবে তাঁর শৈশবের একটি বড় সময় কাটে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় নানার বাড়িতে।
নব্বইয়ের দশকে টিভি উপস্থাপক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন আনিসুল হক। তাঁর উপস্থাপনায় ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ অনুষ্ঠান দুটি জনপ্রিয়তা পায়। তবে পরে টেলিভিশনের পর্দায় মানুষ তাঁকে বেশি দেখেছিল ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেই। ২০০৫-০৬ সালে বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি হন তিনি।