সন্ত্রাস-নাশকতায় দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি : জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের সদস্য ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ সহযোগিতা চান তিনি।সন্ত্রাস-নাশকতাকারীদের বিষয়ে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী। গেল কয়েকদিনে যে পাশবিকতা ও তাণ্ডব চালানো হয়েছে, তা সম্প্রচারমাধ্যমে তুলে ধরার আহ্বান জানান সরকার প্রধান। দেশের সম্পদ রক্ষায় সবাইকে দায়িত্বশীল ভুমিকা রাখার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। কোটা আন্দোলন এবং একে ঘিরে দেশজুড়ে চলা ব্যাপক নাশকতার বিষয়ে সাংবাদিকদের মতামত ও ভাবনা জানতে চান শেখ হাসিনা। এসময় সাংবাদিকরা নিজেদের ভাবনা তুলে ধরে সার্বিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন করেন। নৈরাজ্য পেছনে ফেলে দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বিএনপি-জামায়াত) আমাদের নির্বাচন করতে দিতে চায়নি, কিন্তু আমরা নির্বাচন করেছি। নির্বাচনের পর এটা সবাই মেনে নেবে না, সেটাও আমরা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে দিয়েছি, আমরা সরকার গঠন করেছি। আমার একটা আশঙ্কা ছিল যে, এরকম একটা আঘাত আসবে।তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৩-১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি-জামায়াত চক্র অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল, ফলে শত শত মানুষ নিহত ও হাজার হাজার লোক আহত হয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি এমন কোনো ঘটনা দেখতে চান না, যা দেশে অস্থিতিশীলতা বা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। কারণ তাদের লক্ষ্য ছিল দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা। তিনি দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিকে পঙ্গু করার লক্ষ্যে এই বিপর্যয়কে সমর্থনকারী লোকদের বোধবুদ্ধির স্তর নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘স্বার্থান্বেষী মহল দেশের স্বাধীনতা এবং দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চলমান গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বিনষ্ট করতে অত্যন্ত আগ্রহী। ছাত্ররা যখন মাঠে ছিল তখন তিনি কখনই সেনা সদস্যদের মোতায়েন করতে চাননি। তারা (ছাত্ররা) ঘোষণা করেছিল যে, তারা চলমান নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়, তখন আমরা সেনাবাহিনীকে ডেকেছি।তিনি আরও বলেন, ‘তিনি কারফিউ আরোপ করতে চাননি, কারণ দেশ বিগত ১৫ বছর ধরে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যারা দেশের জন্য এই ক্ষতি করেছে, তাদের প্রতিহত করার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহবান জানান।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের কল্যাণ ও জীবিকা নির্বাহের জন্য যে সকল স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে তারা তা ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা সব কাঠামোতে আঘাত করেছে। যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে, তারা অবশ্যই গণমানুষ। এখন এসব সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করার দায়িত্ব জনগণের। তিনি এই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জড়িত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জনগণ যদি সচেতন না হয়, তাহলে আমরা কী করতে পারি বা আমরা একা কতটা করতে পারি। সাম্প্রতিক ধ্বংসযজ্ঞের টার্গেট ছিল আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটামুক্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সব দাবি যখন মানা হলো তখন তারা কেন জঙ্গিদের এমন জঘন্য কর্মকা-ের সুযোগ দিল। তিনি বলেন, ‘কোটা মুক্ত আন্দোলনকারীদের একদিন জাতির কাছে জবাব দিতে হবে, কেন তারা তাদের দেশের এই ধ্বংসযজ্ঞের সুযোগ দিল।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মোঃ নাঈমুল ইসলাম খান আর স্বাগত বক্তব্য রাখেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু। সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ডিবিসি’র প্রধান সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা জার্নালের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদ, আমাদের সময় সম্পাদক মাইনুল আলম, বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাজাহান সরদার, ডিবিসি’র বার্তা সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির আশীষ সৈকত, বাংলা ট্রিবিউন সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, ৭১ টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার এডিটর মোল্লা আমজাদ, কিংস নিউজের হেড অব নিউজ নাজমুল হক সৈকত, আরটিভির মামুনুর রহমান খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।