• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সন্তুষ্ট ওবামা প্রশাসন হাসিনা সরকারে স্বস্তি


প্রকাশিত: ৬:২৬ পিএম, ২৬ আগস্ট ১৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৭৫ বার

 

Sheikh_Hasina_with_Obamas-2 প্রিয়া রহমান, ঢাকা:
শেখ হাসিনা সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায়  এবার আমেরিকার সুর নরম হয়েছে।কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মার্কিন নীতি কিছুটা নরম হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত তাদের জাতীয় নির্বাচনে ভোটদানের হার ৪০.৪ শতাংশ। আমেরিকা বা ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে ৫০ শতাংশ ভোট পড়লে তাকে গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ সাফল্য বলে মনে করা হয়। ফলে বাংলাদেশের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনকে কিছুতেই ব্যর্থ বলতে পারছে না পশ্চিম বিশ্ব। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দুতাবাস আরও যে একটি রিপোর্ট হোয়াইট হাউসকে পাঠিয়েছে, তাতে আপাত ভাবে সন্তুষ্ট ওবামা প্রশাসন। বাংলাদেশে এখন উপজেলা নির্বাচন চলছে। সেখানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা যথেষ্ট ভাল ফল করছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রশ্ন, আওয়ামী লীগ সরকার রিগিং-সন্ত্রাস করলে এই প্রার্থীরা কি জিততে পারত ।

 

ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার নিয়ে আমেরিকা অনেকটা নমনীয় হয়েছে। এতে নয়া দিল্লি খুশি। কারণ দিল্লি মনে করে তাদের তৎপরাতেই এটি সম্ভব হয়েছে।
আনন্দবাজার লিখেছে, বাংলাদেশের প্রতি যুদ্ধং দেহি মনোভাব থেকে কিছুটা সরে এই প্রথম সুর নরম করল আমেরিকা। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, মার্কিন বিদেশ দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের সহ-সচিব নিশা দেশাই বিসওয়াল সেনেট-এর একটি বৈঠকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়াতে হবে। আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব প্রত্যাহার করারও প্রয়োজন রয়েছে।

Hasina-Obama-300-----------------প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাভাবিক ভাবে এই মনোভাবে নয়া দিল্লিও খুশি। বাংলাদেশের বিদেশসচিব সইদুল ইসলাম এই মুহূর্তে আমেরিকায়। সে দেশে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসিনা সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে সম্পর্কে বিশদে তিনি ব্যাখ্যা করছেন মার্কিন কর্তাদের কাছে। গোটা বিষয়টির দিকে অবশ্য সতর্ক ভাবে নজর রাখছে নয়া দিল্লি। সম্প্রতি গ্যারি বাস রচিত ‘দ্য ব্লাড টেলিগ্রাম’ গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পর আমেরিকার মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী ভূমিকার বিষয়টি ফের সামনে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে আমেরিকার সেই ‘নিক্সন-নীতির’ সত্যিই কোনও পরিবর্তন হল কি না, তা-ই আগে খতিয়ে দেখতে চাইছে সাউথ ব্লক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাক্তন কূটনীতিক এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্কের অন্যতম রূপকার রণেন সেন বলছেন, ‘এ’টি অবশ্যই ইতিবাচক ঘটনা। তবে বিষয়টি আচমকা ঘটেনি। বাংলাদেশে ভোট হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ওয়াশিংটনের তরফে কিছু ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। একটু দেরিতে হলেও আমেরিকা অনুধাবন করছে যে জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে আইএসআই-ই ছাড়াও ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলিরও যোগসাজস রয়েছে। মায়ানমারে রোহিঙ্গা উপজাতিদের নিয়ে উদ্ভূত সমস্যাতেও যে জামায়াত যুক্ত এমন খবরও মার্কিন বিদেশ দফতরের কাছে পৌঁছেছে।’ বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত রজিত মিটারের মতে ‘বাংলাদেশে বিরোধী দলের সেই রাজনৈতিক জোর যে আর নেই তা স্পষ্ট। আমেরিকা বুঝছে বাইরে থেকে হাওয়া দিয়ে তাদের বেশি ক্ষণ ভাসিয়ে রাখা যাবে না। ইউনূস-এর সঙ্গে হাসিনার সম্পর্ক খারাপ হওয়াটা অবশ্যই আমেরিকাকে খুশি করেনি। কিন্তু আজকের দিনে সব দেশই নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়, আমেরিকাও’।
obamaআনন্দবাজার আরো লিখেছে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন কিন্তু যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গেই গোটা বিষয়টি দেখতে চাইছেন। তার কথায়, ‘কোনও দেশই তার বিদেশনীতি রাতারাতি বদলায় না। কিছু সূক্ষ্ম তারতম্য ঘটায় মাত্র। এ ক্ষেত্রে আমেরিকা কেন হাসিনা সরকারের প্রতি নরম মনোভাব নিচ্ছে, তার কোনও সাময়িক কারণ রয়েছে কি না, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে তবেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে’।
আনন্দবাজার লিখেছে, আমেরিকা এর আগে বিবৃতি দিয়ে ঘোষণা করেছিল, বাংলাদেশে কোনও রকম হিংসা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার তারা বরদাস্ত করবে না। আবার ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’-এর লক্ষ্য অর্জন ও জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির জন্য হাসিনা সরকারের প্রশংসা করেছে হোয়াইট হাউস। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ নিয়ে যে সেনেট ‘ব্রিফিং’টি নিশা দেশাই করেছেন, সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আবার নতুন করে দেখার কথা বলা হয়েছে। আমেরিকার কিছু শিল্প সংস্থাও এই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সেনেটের উপর চাপ তৈরি করেছে।
obama_yeswecan প্রতিবেদনে বলা হয়, নয়া দিল্লিতে অবস্থিত ঢাকা দূতাবাস সূত্রে জানানো হচ্ছে, মার্কিন নীতি কিছুটা নরম হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত তাদের জাতীয় নির্বাচনে ভোটদানের হার ৪০.৪ শতাংশ। আমেরিকা বা ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে ৫০ শতাংশ ভোট পড়লে তাকে গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ সাফল্য বলে মনে করা হয়। ফলে বাংলাদেশের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনকে কিছুতেই ব্যর্থ বলতে পারছে না পশ্চিম বিশ্ব। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দুতাবাস আরও যে একটি রিপোর্ট হোয়াইট হাউসকে পাঠিয়েছে, তাতে আপাত ভাবে সন্তুষ্ট ওবামা প্রশাসন। বাংলাদেশে এখন উপজেলা নির্বাচন চলছে। সেখানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা যথেষ্ট ভাল ফল করছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রশ্ন, আওয়ামী লীগ সরকার রিগিং-সন্ত্রাস করলে এই প্রার্থীরা কি জিততে পারত ।
আনন্দবাজার লিখেছে, তবে ক’মাস আগেও পরিস্থিতিটা ভিন্ন ছিল।বিএনপি-জামায়াত জোটের দাবি অগ্রাহ্য করে, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে না-দাঁড়িয়েই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। গোটা ঘটনার জেরে হিংসা তুঙ্গে ওঠে। তখনই প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে হাসিনার অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সে সময়ে পশ্চিমের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে কূটনৈতিক দৌত্য চালিয়ে যায় নয়া দিল্লি।সাউথ ব্লক মার্কিন নেতৃত্বকে স্পষ্ট ভাষায় জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার স্বার্থে পশ্চিম বিশ্বের উচিত বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক এবং হিংসামুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করা। জামায়াতের হিংসাত্মক কার্যকলাপের জন্য সে দেশের পরিস্থিতি যে ক্রমশই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, সে কথাও আমেরিকাকে বোঝানোর চেষ্টা করে নয়া দিল্লি। আমেরিকার এই অবস্থান পরিবর্তনকে তাই নিজেদের কূটনৈতিক সাফল্য বলেও মনে করছে সাউথ ব্লক।