সংসদে ১০০ শীর্ষ ঋণখেলাপি তালিকা প্রকাশ
সংসদ রিপোর্টার : জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। জনগণ যাদের শীর্ষ ঋণখেলাপি হিসেবে জানে, তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারও নাম এ তালিকায় নেই।ফলে তালিকার সত্যতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এবার প্রকাশিত খেলাপির তালিকায় দু’জন ব্যক্তি এবং বাকি সব প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে।
ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। ব্যবসা পরিচালনার নামে দেশের তফসিলি ব্যাংক থেকে এ বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে হজম করে ফেলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।তবে কোন প্রতিষ্ঠান কত টাকার খেলাপি তালিকায়, সে বিষয়ে উলেখ করা হয়নি।
সোমবার জাতীয় সংসদে মুহিবুর রহমান মানিকের এক প্রশ্নের জবাবে এ তালিকা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রশ্নের জবাব দেন। এদিন অর্থমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেন একাধিক সংসদ সদস্য। কিন্তু তিনি (অর্থমন্ত্রী) উপস্থিত না থাকায় তার পক্ষে প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
মন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুযায়ী শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হচ্ছে হলমার্ক ফ্যাশন, মুন্নু ফেব্রিক্স, মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড, জাসমির ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেড, ম্যাক্স স্পিনিং মিল লি., বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লি., ঢাকা ট্রেডিং হাউস, আনোয়ার স্পিনিং মিলস লি., ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম লি., এমএম ভেজিটেবল ওয়েল প্রোডাক্ট লি., আলপা কম্পোজিট টাওয়েল লি., ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লি., ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল, হলমার্ক ফ্যাশন লি., মুন্নু ফ্রেব্রিকস্ লি., ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিকস লি., সাহরিশ কম্পোজিট টাওয়েল লি., নূরজাহান সুপার ওয়েল লি., সালেহা কার্পেট মিল লি., এসকে স্টিল, চৌধুরী নিটওয়ার লি., রনকা সোহেল কম্পোজিট টাওয়েল লি., টি অ্যান্ড ব্রাদার্স নিট কম্পোজিট লি., তানিয়া এন্টারপ্রাইজ ইউনিট, রহমান স্পিনিং মিল লি., এস শিপিং লাইন, হাজী ইসলাম উদ্দিন স্পিনিং মিল লি. গ্রামবাংলা এনপিকে ফার্টিলাইজার অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, টেলিবার্তা লি., কটন কর্পোরেশন, ভিরগো মিডিয়া, সোনালী জুট মিলস লি., এক্সপার টেক লি., এমবিএ গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লি., ওয়ালমার্ট ফ্যাশন লি., ওয়ান ডেনিম মিলস লি., এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লি., হিমালয় পেপার অ্যান্ড বোর্ড প্রাইভেট লি., ইমাদাদুল হক ভ‚ঁইয়া, এমকে শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড স্টিল লি., ম্যাক শিপ বিল্ডার্স লি., বিশ্বাস গার্মেন্টস লি., মোস্টার্ড ট্রেডিং, হিন্দুল ওয়ালী টেক্সটাইল লি., ইসলাম ট্রেডিং কনসোর্টিয়াম লি., ক্যাপিটাল বনানী ওয়ান লি., মেরিন ভেজিটেবল ওয়েল লি., আরজান কারপেট অ্যান্ড জুট ওয়েভিং মিলস লি., এ জামান অ্যান্ড ব্রাদার্স, ওরনেট সার্ভিস লি., ডোয়েল অ্যাপারেলস লি., আশিক কম্পোজিট টেক্সটাইলস লি. মুন বাংলাদেশ লি., মোস্তাফা পেপার কমপ্লেক্স লি., এইচআর শিপিং মিলস প্রাইভেট লি., বিসমিলাহ টাওয়েল লি., কেয়া ইয়ার্ন লি., তাবাসসুম এন্টারপ্রাইজ, এপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লি., দ্য ওয়েল টেক্স লি., ডেলটা সিস্টেম লি., জাহিদ এন্টারপ্রাইজ, হিলফুল ফুজুল সমাজকল্যাণ সংস্থা, মজিবুর রহমান খান, নিউ বাকি টেক্সটাইল মিলস, আলী পেপার মিলস, অলটেক্স ইন্ড্রাস্ট্রিজ, নর্দান ডিস্ট্রিলারিজ, লাকি শিপ বিল্ডার্স লি., মাকসুদা স্পিনিং মিলস, শাপলা ফ্লাওয়ার মিলস, সিদ্দিক অ্যান্ড কোম্পানি লি., মনোয়ারা ট্রেডিং, একে জুট ট্রেডিং কোং, মাহবুব স্পিনিং লি., আলামিন ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট লি., প্রফেশন টেক্সটাইল লি., মা টেক্স, সুপার সিক্স স্টারশিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, টেকনো ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লি., বিসমিলাহ টাওয়েলস লি., ন্যাম কর্পোরেশন, জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, সর্দার অ্যাপারেলস লি., জেড অ্যান্ড জে ইন্টারন্যাশনাল, বিশ্বাস টেক্সটাইল, মডার্ন স্টিল মিলস লি., নিউ অটো ডিফাইন, অনিকা এন্টারপ্রাইজ, ডি আফরোজ সোয়েটার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লি., মোবারক আলী স্পিনিং মিলস, আফিল জুট মিলস, রেজা জুট ট্রেডিং, আরকে ফুডস লি., আলফা টোব্যাকো ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, ফেয়ার এক্সপো ওয়েভিং মিলস লি., কেয়ার স্পেশালাইজড হসপিটাল ও ফ্রিজ এন্টারপ্রাইজ।
টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পক্ষে বলা হয়, সুইস ব্যাংকে যেসব বাংলাদেশি টাকা রেখেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনারও উদ্যোগ নেয়া হবে। পীর ফজলুর রহমান মেজবাহর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ উত্তর দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে সংসদে প্রশ্নের জবাব দেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। মন্ত্রী বলেন, সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে যারা টাকা রেখেছেন, সরকার তাদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি পাচার করা টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেবে।
সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে : আর্থিক খাত ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান যাতে সন্ত্রাসে অর্থায়ন করতে না পারে সেজন্য একটি শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী।
বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরশীলতা হ্রাস : সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আবদুল মতিনের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী লিখিত উত্তরে এ কথা জানান। সংসদে বিগত সময়ে বৈদেশিক সাহায্যের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
পরিসংখ্যানে উলেখ করা হয়, ১৯৮০ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির গড়ে প্রায় ৫১ ভাগ বৈদেশিক সাহায্য থেকে অর্থায়ন করা হতো, যা ১৯৯১-২০০০ সাল পর্যন্ত ৪৪ ভাগ এবং ২০০১-২০১০ সাল পর্যন্ত ৩৭ ভাগে হ্রাস পেয়েছে। গত ২০১১-১৬ সময়ে এডিপির গড়ে প্রায় ৩৪ ভাগ বৈদেশিক সহায়তা থেকে অর্থায়ন করা হয়েছে।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক ৮৪৪ কোটি লেনদেন : এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রীর লিখিত জবাবে বলেন, চলতি বছরের মে মাসের হিসাব অনুযায়ী বর্তমান মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ৮৪৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। দৈনিক গড় লেনদেনের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৫ হাজার। বর্তমানে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এজেন্ট সংখ্যা ৭ লাখ ৪৬ হাজার এবং সর্বমোট গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ২৬ লাখ। বর্তমানে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে প্রদানরত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭টি।
তানভীর ইমামের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে (২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন দফতরগুলো অবৈধভাবে আসা সর্বমোট ৪ হাজার ৪৯০ দশমিক ৪৯৩ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়েছে।
প্রশ্নকারীও নেই, উত্তরদানকারীও নেই : দশম জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনে সোমবারের ‘সেশন’ শুরু হয় বিকাল সোয়া ৫টার দিকে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের শুরুতেই মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য তারকাচিহ্নত ১৫৩১ উত্থাপনের জন্য আহ্বান জানান স্পিকার। প্রশ্নকারী নুরুন্নবী চৌধুরীর নাম ঘোষণা করলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এরপর তার পক্ষে ময়মনসিংহ-৯ আসনের সরকারদলীয় আনোয়ারুল আবেদিন খান প্রশ্নটি উত্থাপন করেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রশ্ন হওয়ায় অর্থমন্ত্রীকেই উত্তর দেয়ার কথা। তিনি না থাকলে প্রতিমন্ত্রী দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে তাও সম্ভব হয়নি। অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রশ্নের উত্তর দিতে স্পিকার খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে আহ্বান জানান। সাধারণত প্রশ্নোত্তরকালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী না থাকলে তার পক্ষে অন্য মন্ত্রী উত্তর দিয়ে থাকেন।