সংসদে তোপের মুখে অর্থমন্ত্রী ‘দয়া করে অবসর দিন মুহিতকে’
সংসদ প্রতিনিধি : রবিবার অনলাইন দৈনিক জাতিরকন্ঠ প্রকাশ করেছিল ” সরকারের ইমেজের ১২টা বাজিয়ে অবশেষে অর্থমন্ত্রী কহিলেন- আবগারি শুল্কের নাম ও হার উভয়ই পরিবর্তন হবে” সেই ধারাবাহিকতায় আজ জাতীয় সংসদে তোপের মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী। সরকারি দলের সাংসদদের মুখেই বোঝা গেল মি. মুহিত সরকারের ইমেজের কতটা ক্ষতি করেছেন।
আবগারি শুল্ক নিয়ে সরকারের ইমেজ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন তাতে অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিতকে তাঁর পদ থেকে বাদ দেয়া নিয়েও কথা উঠেছে। অনেকেই বলেছেন তাঁর বয়স হয়েছে এবার বিশ্রামে পাঠান তাঁকে। দয়া করে তাঁকে বাদ দিন। তাঁর স্থলে সরকার বান্ধব জনবান্ধব অর্থমন্ত্রী নিয়ে আসুন। যাতে দেশ ও সরকারের উপকার হয়। কারণ, সামনে নির্বাচন তাই বিষয়টি খুবই জরুরী।
এদিকে আজ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অধিবেশনে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে অনড় থাকায় অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘আপনার দায়িত্ব বাজেট পেশ করা। এই সংসদের ৩৫০ জন জনগণের প্রতিনিধি ঠিক করবেন জনগণের কল্যাণে কোনটা থাকবে, কোনটা থাকবে না। আপনি একগুঁয়েমি সিস্টেম বন্ধ করেন, কথা কম বলেন।’
সেলিম বলেন, অর্থমন্ত্রীর কিছু কথাবার্তায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। আগেও তিনি অর্থমন্ত্রীকে কথা কম বলার পরামর্শ দিয়েছেন জানিয়ে সেলিম বলেন, আপনার বয়স হয়ে গেছে, কখন কী বলে ফেলেন—ঠিক থাকে না।
ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করে সেলিম বলেন, এই সামান্য টাকার জন্য গোটা জাতির কাছে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি হবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বাজেট নিয়ে সারা দেশে আলোচনার ঝড় চলছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা নির্বাচনী বাজেট নয়। তাহলে মাননীয় অর্থমন্ত্রী কবে নির্বাচনী বাজেট দেবেন?
হানিফ বলেন, আগামী বাজেট কার্যকর হবে জুলাইয়ে। তখন বর্ষা শুরু হবে। সেপ্টেম্বরে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় গেলে, অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল। এবারই নির্বাচনমুখী বাজেট করা উচিত ছিল। বলা যায়, অর্থমন্ত্রী এবার নির্বাচন বিরোধী বাজেট করেছেন।
আবগারি শুল্ক আগের অবস্থায় রাখার দাবি জানিয়ে হানিফ বলেন, অর্থমন্ত্রী কী কারণে কার স্বার্থে ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক করেছেন, জানা নেই। তিনি বলেন, হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির পর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এ টাকা কিছু নয়। তাহলে কেন সামান্য টাকার জন্য সারা দেশে মানুষের মধ্যে আক্ষেপ তৈরি করলেন।
১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সরকার দলের এই সদস্য বলেন, অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আরোপ করেছেন গণহারে। পৃথিবীর ইতিহাসে এক বছরে ৩০ শতাংশ বাড়তি ভ্যাট আহরণের নজির নেই। এটা যৌক্তিক নয়।
ব্যাংকখাতে লুটপাটের অভিযোগ এনে হানিফ বলেন, বেসিক ব্যাংককে এক হাজার কোটি টাকা মূলধন দেওয়া হচ্ছে। কার টাকা কেন দিচ্ছেন? তাঁরা দুর্নীতির জন্য লুটপাট করবে আর মূলধন দিতে হবে আমাদের? প্রয়োজনে এই ব্যাংকগুলোর বিষয়ে নতুন করে চিন্তা করা হোক। সরকারি টাকা এভাবে লুটপাট করতে দেওয়া যাবে না।
হানিফ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, আদালতের সরকারি কৌসুঁলি, সহকারী কৌঁসুলিদের ভাতা বাড়ানোর দাবি জানান। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট দিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্বাচনের আগে জনগণকে ‘বিভ্রান্ত’ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি দলের আরেক সাংসদ সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আল্লাহ তাঁকে (অর্থমন্ত্রী) সুযোগ দেবে কি না জানি না। কিন্তু যাদের আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে, তাঁরা যাতে নির্বাচন করতে পারে সেটা খেয়াল করতে হবে।’
আবুল কালাম ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি করে বলেন, এমনিতে সুদ কম। এর ওপর শুল্ক বাড়ালে তা হবে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। সুদ এমনিতেই কম।
সঞ্চয়পত্রে সুদের হার না কমানোর দাবি জানিয়ে আবুল কালাম বলেন, ১০ শতাংশ বাড়ালে খরচ হবে এক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু উপকার পাবে লাখ লাখ মানুষ। এটা সিনিয়র সিটিজেনরা পান। তাঁরা কোথাও হাত পাততে পারে না। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ঋণ খেলাপিদের বিশাল লিস্ট দিছেন। কই তাদের তো ধরতে পারেন না। ব্যাংকের টাকা পাচার বন্ধ করতে পারছেন না। আর নিম্নমধ্যবিত্তের ওপর কর চাপিয়ে দিচ্ছেন।’
এ সময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিদ্যুতের উন্নতি হয়েছে ঠিকই। অনেক লাইন হয়েছে। কিন্তু রমজানের সময়, সাহরির সময় এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। এগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নিতে হবে।
পাশে বসে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খাঁনের উদ্দেশে আবুল কালাম বলেন, এই যে ইয়াবা, ফেনসিডিল,৫-৬ বছরের শিশু ধর্ষণ যেভাবে হচ্ছে…এগুলোর বিরুদ্ধে জোরালোভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে।