সংসদে আইনের দুর্বল চর্চা হচ্ছে-এখনকার প্রত্যেকটা আইনই ত্রুটিপূর্ণ-অসম্পূর্ণ-সুরেন্দ্র
বিশেষ প্রতিবেদক : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আইনসভায় আইনের চর্চা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য এখনকার প্রত্যেকটা আইনই ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ রয়ে যাচ্ছে।শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে আইন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহ আলমের লেখা দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সংসদ সদস্যদের সমালোচনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনপ্রণেতাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো আইন বিষয়ে অজ্ঞতা। জাতীয় সংসদে প্রচলিত আইন কিংবা আইনের সংস্কার বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা না হওয়ায় সংসদে আইনের দুর্বল চর্চা হচ্ছে। এ জন্য এখনকার প্রত্যেকটা আইনই ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ থেকে যায়। জনগণ ভোগান্তিতে পড়ে যান। এছাড়া বিচার বিভাগের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যায়।
ধর্ষণের পর খুন হওয়া কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তনু হত্যার ঘটনা একটি আধুনিক অপরাধ। পুরনো মানসিকতায় তদন্ত করে এর সুষ্ঠু বিচার সম্ভব নয়। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে প্রচলিত ফৌজদারি আইনের মিল নেই। একে ঢেলে সাজাতে হবে। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইন দিয়ে তনু হত্যার বিচার করা যাবে না।
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচার ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে তিনটি কারণ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো বিচার ব্যবস্থা বাণিজ্যিক হয়ে যাওয়া, প্রচলিত আইনগুলো অচল হয়ে পড়া ও অধিকার সচেতন ব্যক্তিদের দায়িত্ব ভুলে যাওয়া। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশির ভাগ আইন অচল হয়ে গেছে। এসব আইনের ব্যবহারের কার্যকারিতা অনেক কম। এসব আইনের ব্যাপক সংস্কার করা না হলে বিচার বিভাগ আরো মুখ থুবড়ে পড়বে।
বিচার বিভাগের অনিয়ম প্রসঙ্গে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, এ দেশের যেখানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম, সেখানে বিচার বিভাগ আলাদা কোনো দ্বীপের মতো নয় যে সব জায়গায় অনিয়ম থাকবে আর বিচার বিভাগের সব ফেরেশতা হয়ে যাবে, সাধারণত এমন হয় না। বিচার বিভাগেও কিছু অনিয়ম আছে কিন্তু সেটা পাঁচ থেকে ১০ শতাংশের বেশি না। এই প্রক্রিয়া মেনে নিয়েই আমাদের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, জগন্নাথ বিশ্ববদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।