দিনা করিম.ঢাকা: হুমা আকরামের মৃত্যুর পর জীবনে বড় ঝড়ই সামলাতে হয়েছে ওয়াসিম আকরামকে। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে ধারাভাষ্য ও ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট নানা কাজে জড়িয়ে যাওয়ায় সন্তানদের সময় দিতে পেরেছেন কমই। হুমাই সব সামলে নিয়েছেন। কিন্তু স্ত্রীর অকালপ্রয়াণে সব যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল আকরামের। সন্তানদের নিয়ে মহা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেট কিংবদন্তি।
জীবনের সেই মেঘাচ্ছন্ন দিনগুলো কাটিয়ে এখন সুখের ভেলায় ভাসছেন ‘কিং অব সুইং’। আর সুখের পেছনে বিরাট ভূমিকা শ্যানিয়েরার। এই অস্ট্রেলীয় কন্যার সঙ্গে আকরাম গাঁটছড়া বেঁধেছেন ২০১৩ সালের আগস্টে। গত বছর এ দম্পতির ঘর আলো করে এসেছে কন্যা আয়লা। দুজন দুই দেশের হলেও বড় ক্রিকেট তারকা হওয়ায় আকরামকে সহজেই চেনার কথা শ্যানিয়েরার। তবে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের খ্যাতি নয়, শ্যানিয়েরাকে টেনেছে তাঁর অতুলনীয় রসবোধ।
কদিন আগে পাকিস্তানের টিভি শো দ্য রেহনাম খান শোতে সস্ত্রীক হাজির হয়েছিলেন আকরাম। রেহনাম খানকে চিনতে পেরেছেন? আরেক কিংবদন্তি ইমরান খানের স্ত্রী। প্রথমবারের মতো টিভি পর্দায় এলেন শ্যানিয়েরা। জবাব দিলেন নানা প্রশ্নের। অস্ট্রেলিয়ান শ্যানিয়েরা যখন প্রথম পাকিস্তানে বউ হয়ে এলেন, তখন ওয়াসিমের পরিবারের প্রতিক্রিয়া কী ছিল? আকরাম বেশ রসিকতার সুরেই জানালেন, মা ও স্ত্রী—দুজনের জন্যই লাভজনক হয়েছে ব্যাপারটা। মুখে ট্রেডমার্ক হাসিটি ঝুলিয়ে পাকিস্তান কিংবদন্তি বললেন, ‘আমার মা তাঁর ছেলে-বউয়ের সৌন্দর্যের খুব প্রশংসা করেন। কিন্তু তাঁর চিন্তার বিষয় হলো, বউমার সঙ্গে কথা বলবেন কীভাবে। আমি তাঁকে বলেছি, ইশারায় বলবেন! আমার মা ইংরেজি জানেন না। আবার শ্যানিয়েরা পাঞ্জাবি ভাষা বোঝে না। এ কারণে তৈরি হয়েছে নিখুঁত সম্পর্ক!’ অবশ্য শাশুড়ি-বউ ভাষার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে নাকি ভাষা শিক্ষা নিচ্ছেন।
অনুষ্ঠানের একফাঁকে উপস্থাপক রেহনাম আকরামের কাছে জানতে চান, রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা আছে কি না। আকরামের উত্তরটা বেশ কৌশলী বটে, ‘আমার গুরু রাজনীতিতে আছেন। এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।’ গুরুকে নিশ্চয় চিনতে পেরেছেন, ইমরান খান।
ক্রিকেটার ও ভাষ্যকার হিসেবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সব সময় ঘুরে বেড়াতে হয় আকরামকে। এ কারণে আর দশজন বাবার মতো সন্তানদের খুব একটা সময় দিতে পারেননি। এ কারণে সন্তানদের সঙ্গে তাঁর সম্পকর্টাও খুব বেশি নিবিড় হয়নি। আকরাম জানালেন, কখনো সন্তানদের জন্য জামা-কাপড় কিনেছেন, টুকটাক কথা হয়েছে। ব্যস, এতটুকুই! ভালোভাবে মেশা হয়নি। স্ত্রী হুমাই সাধারণত এ দিকটা সামলাতেন। কিন্তু যখন হুমা মারা গেলেন, আকরাম পড়লেন মহা হুজ্জতে। ছোট ছেলে আকবরের বয়স তখন নয় বছর আর বড় তৈমুরের মাত্র ১২।
সে সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আকরাম বললেন, ‘প্রথম কয়েক মাস সব ছিল এলোমেলো। সন্তানেরা কখন কী করে, তাদের সময়সূচি কী, জানতে শুরু করি। তাদের বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হই।’ তবে এ সময়ে এক নারী তাঁর এলোমেলো জীবনটা সাজিয়ে দিতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তিনি শ্যানিয়েরা। আকরাম বললেন, ‘ছেলেদের দেখভাল করতে অনেক সাহায্য করেছে শ্যানিয়েরা। সে আমার ছেলেকে ফুটবল মাঠে প্রশিক্ষণে নিয়ে গেছে এবং বসে তার খেলা দেখেছে।’
শ্যানিয়েরাকে কি এখন শতভাগ পাকিস্তানি বলা যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে, আকরাম বললেন, ‘শ্যানিয়েরা অস্ট্রেলীয় হলেও এখন সে পাকিস্তানের সংস্কৃতি উপভোগ করছে। শ্যানিয়েরা ১০০ ভাগ পাকিস্তানি। ভাষাগত কিছু সমস্যা থাকলেও সে পাকিস্তানকে নিজের দেশ বলেই মনে করে।’ পাশ থেকে শ্যানিয়েরা যোগ করলেন, ‘বসবাসের জন্য আকরাম পাকিস্তানকে বেছে নিয়েছে। আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই। আর আমি যখন খুশি অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারি।’
হুমার মৃত্যুর পর বলিউড অভিনেত্রী সুস্মিতা সেনের সঙ্গে আকরামের প্রেমের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তবে তা কেবলই গুজব। এখন পরিষ্কার, আকরাম মূলত প্রেমে পড়েছিলেন শ্যানিয়েরার। দুজনের প্রেমের দিনগুলো কেমন ছিল? প্রেমের স্বভাবসুলভ পাগলামি ছিল আকরামের মধ্যে? শ্যানিয়েরা বললেন, ‘তাঁর উদ্যামতা দেখেছিলাম। তখনই তাঁর মধ্যে আমার ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলাম। ও যখন আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়, আমরা তখন জীবনের এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে। দুজনই সম্পর্ক বিষয়ে অভিজ্ঞ। বয়স যখন কম থাকে, তখন ছোট ছোট অনেক কিছু বড় মনে হয়। কিন্তু আমরা অনেক পরিণত ও বয়স্ক। কাজেই আমাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ছোট বিষয়গুলো তেমন বড় হয়ে দেখা দেয়নি।’