শেয়ারবাজারে ব্যাংকের নয়া পরিধি বাড়ল
ন্টাফ রিপোর্টার : আগামী বছর থেকে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানে মূলধন হিসেবে সরবরাহ করা অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে না। এর ফলে বর্তমানে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হচ্ছে এমন পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকা হিসাবের বাইরে থাকবে। ফলে সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়বে। গতকাল রোববার এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে দেওয়া মূলধনের বিপরীতে ধারণকৃত ইকুইটি শেয়ার একক ভিত্তিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত হবে না।
আর এ বিষয়ে আগে জারি করা নির্দেশনা সংশোধিত হিসেবে গণ্য করতে বলা হয়েছে। গতকালের নির্দেশনায় বলা হয়, ব্যাংকের ধারণ করা সব ধরনের শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নির্দেশনাপত্রের বাজারমূল্য ধরে মোট বিনিয়োগ হিসাব করা হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৫ ধারায় গভর্নরকে দেওয়া ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
এক সময় ব্যাংকগুলো মোট দায়ের ১০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারত। তবে ২০১৩ সালে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে একটি ব্যাংক তার আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম হিসেবে রক্ষিত স্থিতি, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংয়ের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। বর্তমানে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ এই সীমার ওপরে রয়েছে আগামী বছরের ২১ জুলাইয়ের মধ্যে তা নামিয়ে আনার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে কোনো ব্যাংক শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ নামিয়ে আনার চেষ্টা করলে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকে বলে আসছেন।
বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, আইন সংশোধন করে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ নামিয়ে আনার সময়সীমা আরও দু’বছর বাড়ানো হবে। অবশ্য এ বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনও নিতে দেখা যায়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনার কারণে এখন সব ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ায় এমনিতেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের হার কমে আসবে। ফলে নতুন করে সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হবে কি-না তা নিয়ে ভাবতে হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত বিনিয়োগ এখন বর্তমান বাজার মূল্যে মূলধনের প্রায় ৩৪ শতাংশ। বিনিয়োগের হার কারও কম,কারও বেশি। তবে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারিতে মূলধন হিসেবে সরবরাহ করা অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে না ধরে হিসাব করলে গড় বিনিয়োগ নেমে আসবে ২৫ দশমিক ৮৭ শতাংশে। ফলে অনেক ব্যাংক নতুন করে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিনিয়োগ সংক্রান্ত ঝুঁকি নূ্যনতম পর্যায়ে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন কাজ করছে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজারের সার্বিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে নির্দেশনাগুলোর পরিপালন নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে একক ভিত্তিতে এবং ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে একক ও সমন্বিত উভয় ভিত্তিতে তদারক করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে সার্বিক অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থে একটি গতিশীল পুঁজিবাজার সৃষ্টিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন নীতিগত সমর্থন দিচ্ছে। এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনগত বাধ্যবাধকতা পরিপালনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সমর্থন বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।