শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপিকে ধরবে কে?
বিশেষ প্রতিনিধি : শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপিকে ধরবে কে? এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ অর্থমন্ত্রীর সভায়। বলা হয়েছে- রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের বৃহৎ অংকের টাকা কুক্ষিগত করে রেখেছে শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপি। এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে সরকারেরও যে দায় আছে, তা স্বীকার করে নিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। শনিবার সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শ্রেণীকৃত ঋণ অত্যন্ত বেশি, যা বেশি হওয়ার জন্য কিছুটা আমরাও দায়ী, সরকার দায়ী।
আমরা অনেক সময় আমাদের ছয় ব্যাংকের (রাষ্ট্রায়ত্ত) উপর জারিজুরি করি। সোনালী ব্যাংক যেহেতু সবচেয়ে বড় ব্যাংক, তাই জারিজুরিটা সোনালী ব্যাংকের উপর একটু বেশিই হয়।গত মাসের শেষে সংসদের পশ্নোত্তর পর্বে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, গত ১০ বছরে ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে যাদের, তাদের কাছ থেকে ৬৫ হাজার ৬০২ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি। শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ৫০ কোটি টাকা।
যে ১০ বছরের খেলাপি ঋণের হিসাব অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন, তার নয় বছরই ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। আর খেলাপি ঋণের ওই অর্থ দিয়ে দুটি পদ্মা সেতুর ব্যয় মেটানো সম্ভব।ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশনে সোনালী ব্যাংকের সম্মেলনে মুহিত বলেন, আমরা জারিজুরি কমানোর চেষ্টা করছি। আপনারা (ব্যাংক কর্মকর্তা) যখন কোনো প্রকল্পকে বিশ্লেষণ করে ঋণ প্রদানে অনুপযুক্ত মনে করবেন, সেটাতে আমরা জারিজুরি বন্ধ করার চেষ্টা করব।অনুষ্ঠানে ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের প্রধান কাজ হল গ্রাহককে চেনা এবং যখন কোন প্রকল্প গ্রহণ করেন সেটার বিশ্লেষণটা যতদূর সম্ভব ভাল করে করা। পরিকল্পনার প্রকল্পের উপরই তার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে, যে তা সার্থক হবে কিনা।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে , অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. ইউনুসুর রহমান জানান, শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির কাছে বিপুল অঙ্কের টাকা আটকে আছে। জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৪৯ শতাংশই আটকে আছে ২০ জনের কাছে। রূপালী ব্যাংকের ৫১ শতাংশই শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ আছে ২০ জনের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দেওয়ার আগে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, বড় প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেবার আগে এর মূলধনের আকার, উৎপাদন ক্ষমতা, সক্ষমতা, অর্থায়ন প্রয়োজনীয়তা, ব্যবস্থাপনা, অতীত পারফরমেন্সসহ সব দিক বিবেচনায় আনতে হবে।”ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে গভর্নর বলেন, “বড় ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী না হলেও চলবে, আমাদের দরকার মধ্যম পর্যায়ে ঋণ দেয়া, অর্থাৎ এসএমই যে ঋণগুলো (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে) আছে, সেগুলোর একাধিক লাভ রয়েছে।
শুধু যে এই ঋণ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে তা নয়, এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।”দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুলসহ প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।