• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শিশু ধর্ষণরোধে লিঙ্গচ্ছেদ-মাদ্রাজ হাইকোর্ট বলেছে-এটা করা হলে ম্যাজিকের মতো ফল মিলবে’


প্রকাশিত: ৮:৫৭ পিএম, ২৮ অক্টোবর ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৩০ বার

chop there raping tools-www.jatirkhantha.com.bd নরেশ কুমার.চেন্নাই:   লিঙ্গচ্ছেদ— শিশুদের যৌন হেনস্থার প্রশ্নে এক কথায় এমনই দাওয়াই সুপারিশ করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। দেশ জুড়ে শিশুদের যৌন নিগ্রহের ঘটনা যে বেড়েই চলেছে সে কথা উল্লেখ করে সম্প্রতি মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি এন কিরুবাকরন এই অপরাধে অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে লিঙ্গচ্ছেদের সুপারিশ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘লিঙ্গচ্ছেদের সুপারিশ নৃশংস মনে হলেও পাশবিক অপরাধের জন্য পাশবিক শাস্তিবিধিই প্রয়োজন।

অনেকেই একমত হবেন না। তবে সমাজের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই সুপারিশকে সমর্থন করা উচিত।’’ তিনি আরও জানান, ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে শিশুদের যৌন হেনস্থার ঘটনা ৪০০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। আর শাস্তি হয়েছে মাত্র ২.৪ শতাংশের।

হাইকোর্ট বলছে, গতানুগতিক আইন যথেষ্ট কঠোর নয়। তাতে প্রত্যাশিত ফল মিলছে না। বিচারপতির কথায়, ‘‘আদালত মনে করে অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে লিঙ্গচ্ছেদ করা হলে ম্যাজিকের মতো ফল মিলবে।’’ তামিলনাড়ুতে এক পনেরো বছরের কিশোরকে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত এক ব্রিটিশ নাগরিক সম্প্রতি মামলা খারিজের আর্জি নিয়ে হাইকোর্টে যায়।

২০১১ সালে ছেলেটিকে ভাল ভাবে পড়াশোনা করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে দিল্লি নিয়ে চলে যায় এই ব্রিটিশ যুবক। সেখানে তার উপর যৌন নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ। এই মামলার শুনানি চলাকালীনই লিঙ্গচ্ছেদের সুপারিশ করে হাইকোর্ট। অভিযুক্তের আর্জি খারিজ করে তার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি রাখার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘শুধু দেশের রাক্ষসরাই নয়, শিশুদের যৌন নিগ্রহ করতে বিদেশি অপরাধীও নিয়মিত উড়ে আসে এ দেশে।’’

গত সপ্তাহে দিল্লিতে আড়াই এবং পাঁচ বছরের দুই শিশুকে গণধর্ষণের খবর সামনে আসায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে সারা দেশে। এই ঘটনা জনস্মৃতিতে ফিরিয়ে এনেছে নির্ভয়া-কাণ্ড। ২০১২ সালে দিল্লির চলন্ত বাসে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে দেশ উত্তাল হলে লিঙ্গচ্ছেদের প্রস্তাব তোলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। কেন্দ্রীয় আইন সংশোধন করে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড বা লিঙ্গচ্ছেদের শাস্তির বিধি তৈরির প্রস্তাব দেন তিনি।

মাদ্রাজ হাইকোর্টে শুনানি চলাকালীন একাধিক বার দিল্লির  জোড়া শিশু-ধর্ষণের উল্লেখ করেছেন বিচারপতি এন কিরুবাকরন। তাঁর কথায়, ‘‘আইন যখন এই ভয়ানক পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না, তখন আদালত হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। দেশ জুড়ে শিশুদের গণধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।

আদালত চুপ করে বসে থাকলে তা শুধু নির্যাতিতাদের প্রতি অবিচার নয়, বরং আদালতের শপথবাক্য পাঠেরও বিরোধিতা করা হবে।’’ তথ্য বলছে, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, তামিলনাড়ু, কেরল— শিশুদের যৌন নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে দেশের প্রতিটি রাজ্যেই। গত কালও রাজধানীর একটি বস্তিতে ধর্ষিত হয়েছে এক কিশোরী।

২০১২ সালে পোকসো-অ্যাক্টে (প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট) শিশুদের যৌন হেনস্থায় কড়া শাস্তির সুপারিশ হলেও বাস্তবে যে তার প্রতিফলন হচ্ছে না, তা স্পষ্ট হচ্ছে জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্যে। ২০১২ সালে দেশে শিশু-নিগ্রহের ৩৮ হাজার ১৭২টি অভিযোগ হয়। সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয় ২০১৩ সালে। সে বছর অভিযোগ  হয়েছে ৫৮ হাজার ২২৪টি। ২০১৪ সালে সেই সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ৮৯ হাজার ৪২৩টিতে।

বিচারপতি এন কিরুবাকরন সুপারিশে মনে করিয়ে দিয়েছেন, শিশুদের ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহ করার শাস্তি হিসেবে লিঙ্গচ্ছেদ পোলান্ড, রাশিয়া এবং আমেরিকার ৯টি রাজ্যে বৈধ। এশিয়ায় লিঙ্গচ্ছেদের শাস্তি প্রথম জারি করে দক্ষিণ কোরিয়া। তবে ভারতের মতো দেশে লিঙ্গচ্ছেদের সুপারিশও যে বিতর্ক তৈরি করবে, তা এক প্রকার আগেভাগে বলেই দিয়েছেন বিচারপতি। বলেছেন, ‘‘এই সুপারিশকে অমানবিক, পাশবিক, প্রাগৈতিহাসিক বলে সমালোচনা করা হবে।’’

তাঁর মতে, যে মানবাধিকার কর্মীরা অপরাধীর অধিকারের কথাই আগে ভাবেন এবং লিঙ্গচ্ছেদের বিরোধিতা করেন তাদের সমাজের সার্বিক পরিস্থিতির কথা মনে রাখতে হবে। হাইকোর্টের পরামর্শ, ‘‘এই সব মানবাধিকার কর্মী নির্যাতিতার সঙ্গে গিয়ে দেখা করুন। তাদের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করুন। ভুল জায়গায় সমবেদনা জানাবেন না।’’