শিক্ষার মানের মাত্রাটা কী ব্যাখা দিন-প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন তাদের কাছে মানের মাত্রা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটা কথা বলে দিলেই হলো না। এর ব্যাখ্যা দিতে হবে আর সেটা কার্যকর করার জন্য সহযোগিতাও করতে হবে।
শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরের বছর থেকে ১ জানুয়ারি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ করে। একে পাঠ্যপুস্তক উৎসব নাম দেয়া হয়েছে। শুরুতে কেবল প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা সবাই নতুন বই এই বই পেলেও গত তিন বছর ধরে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদেকেও বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে।
বই বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধনের আগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের কয়েকজন শিশুর হাতে বই তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এদের মধ্যে কয়েকজন অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। শিক্ষার্থীদেরকে বিনামূল্যে বই দেয়ার পাশাপাশি নানা উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। পাসের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। কমেছে ঝরে পড়ার হার।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ হওয়া প্রাথমিক সমাপনীতে পাস করেছে ৯৮ শতাংশেরও বেশি। একই দিন প্রকাশ হওয়া অষ্টম শ্রেণি সমাপনীতেও পাসের হার ৯২ শতাংশের বেশি। একইভাবে এসএসসি, এইচএসসি বা পরবর্তী ধাপগুলোতেও পাসের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
সমালোচনা আছে, পাসের সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়ছে না সেখাবে। বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করে এই সমালোচনা নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পড়াশোনার মান নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদেরকে আমি বলবো, একদিনে সব কিছু হয়ে যায় না। আর মানের মাত্রাটা কী সেটার ব্যাখ্যাটা আমরা পাই না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা প্রশ্নটা তোলেন তাদের কাছ থেকে মানের মাত্রাটা আমরা পেতাম আর তারাও যদি একট ভলেন্টিয়ার সার্ভিস দিতেন, কোন কোন এলাকায় মাত্রা ঠিক নেই, তারা সেখানে গেলেন, একটু পড়ালেন, কিছু সময় খরচ করলেন তাহলে আমরা খুশি হতাম।’ তিনি বলেন, ‘একটা কথা বলে ফেলতেই তো হবে না। সেটা কীভাবে কার্যকর করা যায়, আর কার্যকর করার জন্য সহযোগিতা করা উচিত বলে আমরা মনে করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রযুক্তি শিক্ষা ও সব ধরনের শিক্ষার ওপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। সথে সাথে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক শিক্ষা-সব কিছুর ওপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি, যা আমাদের শিশুদের মনের বিকাশ ঘটাতে পারবে, তাদের মেধা মননের বিকাশ ঘটাতে পারবে। তাদের সুস্বাস্থ্য হবে, তাদের মন আরও উন্নয়ন হবে, সেটাই আমরা চাই।
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার ব্যাখ্যা
গত বৃহস্পতিবার প্রাথমিক সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে একবার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। দুইদিন পর তিনি আবারও একই বিষয়ে কথা বললেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্কুলে ক্লাস ফাইভে আগে কিছু ছেলেমেয়ে বাছা হতো। তাদেরকে প্রস্তুত করা হতো বৃত্তি পরীক্ষা দিতো। আমিও ছাত্রী ছিলাম, আমারও অভিজ্ঞতা আছে। বৃত্তির জন্য বাছার পর তাদেরকে আলাদাভাবে পড়ানো হতো, আলাদা টিফিন খাওয়ানো হতো। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য এর ব্যবস্থা ছিল না। এই জায়গাটায় আমার প্রশ্ন ছিল। যাদেরকে বাছলেন না তাদের মধ্যেও তো মেধাবী থাকতে পারে। কাজেই পরীক্ষা যদি দিতেই হয়, তাহলে সবাই পরীক্ষা দেবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে যদি কোনো দ্বিধা থাকে, আমি আশা করবো, আমার এই বক্তব্যের পরে সেটা পরিস্কার হবে।’ তিনি বলেন, ক্লাস ফাইভে পড়ার পর বাচ্চা যখন একটা সার্টিফিকেট পায়, তখন তার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোটবেলা থেকেই বোর্ড পরীক্ষা দিলে পরীক্ষা দেয়ার ভীতিও সেটা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, আমরা মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছি। প্রথম পরীক্ষা দিতে গেলে একটা ভয় ভীতি পেটের মধ্যে গুরগুর করে, বমি বমি লাগে, নানা রকমের উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু ক্লাস ফাইভ থেকেই যখন একটি শিশু পরীক্ষা দিচ্ছে, এরপর ক্লাস এইটে পরীক্ষা দিচ্ছে, তখন কিন্তু আর ভয়টা থাকে না। …এ জন্যই পাসের হার বাড়ছে।’