• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

শান্তিতে নোবেল: মালালা-কৈলাস


প্রকাশিত: ৪:৪৫ এএম, ১১ অক্টোবর ১৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১১ বার

মালালা ইউসুফজাই। ১৮ আগস্ট জাতিসংঘ দপ্তরে তোলা ছবি l এএফপি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

স্টাফ রিপোর্টার.ঢাকা:
শান্তির নোবেল এবার ভাগাভাগি হলো চির বৈরী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই এবং ভারতের কৈলাস সত্যার্থী যৌথভাবে পেয়েছেন এই পুরস্কার। মালালা নারীশিক্ষা আন্দোলনের কর্মী এবং কৈলাস কাজ করেন শিশু অধিকার নিয়ে। খবর এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি ও এনডিটিভির।
গতকাল শুক্রবার মালালা ও কৈলাসকে যৌথভাবে শান্তি পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি বলেছে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষার জন্য ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে একই লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন একজন মুসলিম ও একজন হিন্দু, একজন পাকিস্তানি ও একজন ভারতীয়।
মালালার বয়স এখন মাত্র ১৭ বছর। এত অল্প বয়সে এর আগে কেউ নোবেল পুরস্কার পায়নি। চরম কট্টরপন্থী তালেবানের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে নারীশিক্ষা নিয়ে কাজ করার জন্য ২০১২ সালের অক্টোবরে তার মাথায় গুলি করেছিল জঙ্গিরা। বর্তমানে সে বসবাস করছে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে। গতকাল যখন পুরস্কার ঘোষণা করা হয়, তখন মালালা বার্মিংহামে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এজবাস্টন হাইস্কুলেই ছিল। তার জন্ম ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মিঙ্গোরা শহরে।
নোবেল পাওয়ার পর গতকাল লন্ডনে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে মালালা। এ সময় সে বলে, ‘আমাদের পুরস্কার নেওয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’ সে আরও বলে, ‘পাকিস্তান ও ভারতের সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। শান্তি, উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য আমরা লড়াই করতে চাই।’
আর ৬০ বছর বয়সী কৈলাস মহাত্মা গান্ধীর অনুসারী। শিশু অধিকার আদায়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন শান্তিপূর্ণভাবে। ‘বাচপান বাঁচাও আন্দোলন’ (শিশু অধিকার রক্ষার আন্দোলন) নামের একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তিনি। শিশুশ্রম নিরসন, শিশু অধিকার আদায় এবং মানব পাচার অবসানের লক্ষ্যে কাজ করে এই সংস্থাটি। কারখানা ও খনিতে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কর্মরত প্রায় ৮০ হাজার শিশুকে উদ্ধার করে পুনর্বাসন ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে সংস্থাটি।
কৈলাসের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১১ জানুয়ারি, ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের বিদিশা শহরে। তাঁর পড়াশোনা তড়িৎ প্রকৌশলে। তবে ২৬ বছর বয়সেই তিনি নেমে পড়েন শিশু অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে। কিছুদিন কাজ করার পর ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাচপান বাঁচাও আন্দোলন’। এ ছাড়া শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘গ্লোবাল মার্চ অ্যাগেইনস্ট চাইল্ড লেবার’সহ আরও অনেক ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত তিনি। এসব কাজের অবদানস্বরূপ নোবেল পাওয়ার আগেই তিনি পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড ও ডিফেন্ডার্স অব ডেমোক্র্যাসি অ্যাওয়ার্ড, স্পেনের আলফনসো কমিং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড এবং মেডেল অব দ্য ইতালিয়ান সিনেটসহ আরও অনেক সম্মানজনক পুরস্কার।
নোবেল পাওয়ার খবর পেয়ে কৈলাস বিবিসিকে বলেছেন, সব ভারতীয়র জন্য এটা অত্যন্ত সম্মানের, এ সম্মান সেসব শিশুর জন্যও, যারা প্রযুক্তি, বাজার ও অর্থনীতির এই অগ্রগতির মধ্যেও দাসত্বের জীবন যাপন করছে। তিনি আরও বলেন, ‘এই পুরস্কার আমি উৎসর্গ করছি পৃথিবীর সব শিশুর প্রতি।’
নয়াদিল্লিতে নিজের কর্মস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কৈলাস অভিনন্দন জানান মালালাকেও। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুজনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ মালালার উদ্দেশে কৈলাস বলেন, ‘চলো, আমরা শান্তির জন্য হাত মেলাই।’

কৈলাস সত্যার্থী। গতকাল নয়াদিল্লিতে নিজের বাসায় l এএফপি

 

মালালার প্রতি সম্মান জানিয়ে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান থর্বজর্ন জ্যাগল্যান্ড বলেছেন, এই অল্প বয়সেই মামলা দেখিয়েছে শিশুদের নিজেদের অবস্থার উন্নয়নে তারা নিজেরাও অবদান রাখতে পারে। মালালা তা করছে চরম বৈরী পরিস্থিতির মধ্যে। নায়কোচিত এই লড়াইয়ের মাধ্যমে সে নারীশিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার কিশোরী মালালা প্রথম সবার নজর কাড়ে ২০০৯ সালে। সে সময় তার লেখা ডায়েরি প্রকাশিত হয় বিবিসির উর্দু বিভাগে। কট্টরপন্থী তালেবানের অধীনে উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের নিপীড়িত নারীদের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছিল কিশোরী মালালার সেই লেখায়। এর পর থেকে তালেবানের চক্ষুশূল ছিল সে। ২০১২ সালের অক্টোবরে তার স্কুলবাসে গুলি চালায় জঙ্গিরা। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় মালালা।
ওই ঘটনার পর থেকে সারা দুনিয়ার নজর মালালার দিকে। যুক্তরাজ্যে নিয়ে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে এখন সেখানেই লেখাপড়া করছে সে। এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তার আত্মজীবনী। ভাষণ দিয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। আর পেয়েছে বিশ্বের সম্মানজনক অনেক পুরস্কার। গত বছরও জোর গুঞ্জন উঠেছিল নোবেল শান্তি পুরস্কার পাচ্ছে সে। তবে ওই বছর তা না পেলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মানজনক শাখারভ মানবাধিকার পুরস্কার পায় সে। একই বছর সে স্থান পায় বিখ্যাত টাইম সাময়িকীর বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায়।
মালালাকে ‘দেশের গর্ব’ উল্লেখ করে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য পোপ ফ্রান্সিস, মার্কিন গোপন নথি ফাঁস করে হইচই ফেলে দেওয়া সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেনের নাম শোনা যাচ্ছিল জোরালো প্রার্থী হিসেবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর নোবেল পুরস্কারের প্রবক্তা বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে নরওয়ের রাজার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে পুরস্কার।