শান্তিতে নোবেল জয়ীর দেশে রোহিঙ্গা অশান্তি কেন?
আবু তাহের : নোবেল শান্তি জয়ীর দেশে রোহিঙ্গা অশান্তি কেন? মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালানো রোহিঙ্গাদের গ্রহণে সীমান্ত খুলে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অজানা নয়, বাংলাদেশ পাঁচ লাখের মতো বৈধ-অবৈধ রোহিঙ্গা নিয়ে সমস্যায় আছে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত শরণার্থী নিয়ে হিমশিম খাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ অনেক বছর ধরেই বলে আসছে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার টেবিলসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে প্রসঙ্গটি অনেকবার তোলা হয়েছে। শরণার্থীদের ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নতুন করে জাতিগত সহিংসতার শিকার হওয়ায় বাংলাদেশও উদ্বিগ্ন, মর্মাহত। যেসব কারণে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে সেগুলোর নিরসন না হওয়া পর্যন্ত সংখ্যালঘু এই মুসলিম সম্প্রদায়টির নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না।
শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দল ক্ষমতায় আসার পরও সরকারের রোহিঙ্গা নীতির বদল না হওয়া দুঃখজনক। পশ্চিমা সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে জোর দিয়ে বলতে হবে, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফেরত দেওয়ার মধ্যেই সমস্যার সমাধান নিহিত। মিয়ানমারকে আলোচনার টেবিলে এনে ইতিহাসের নির্জলা সত্যটি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ কাজে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর অবস্থান কখনোই দেখা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পরপর মিয়ানমার সফরে এসে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গুরুত্বারোপ করেছিলেন। এই চাপ কার্যকর হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই মুসলমানবিরোধী অনেক মন্তব্য করেছেন। তাঁর সময়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিয়ে মার্কিন নীতি কী হতে পারে, তা এখনই অনুমান করা যায়। এ অবস্থায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপই সমাধানের সম্ভাবনা জাগাতে পারে। বাংলাদেশকে চাপ দেওয়ার বদলে বরং মিয়ানমারকে বলতে হবে, ‘রোহিঙ্গাদের হৃত অধিকার ফিরিয়ে দাও, সমস্যা মিটে যাবে।’
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা নানা অপরাধমূলক কাজে জড়াচ্ছে, বন উজাড় করেছে, মাদক চোরাচালানে যুক্ত হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর স্পর্ধা দেখিয়েছে। তাদের কেউ কেউ জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানার ষড়যন্ত্র করছে—এমন খবরও পাওয়া যায়। বাংলাদেশের এই উদ্বেগের জায়গাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উপলব্ধি করতে হবে।
মিয়ানমারের নতুন সরকার কিছুদিন আগে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে পরামর্শের জন্য জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে। তার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলাকারীদের ধরার নামে সেনা-পুলিশের চলমান রোহিঙ্গা নিধন অভিযান সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ দেয় না। বাংলাদেশকে ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে শরণার্থী সমস্যার বিষয়টি আরো জোরালোভাবে উত্থাপন করতে হবে।
বিশ্ব সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে জনমত গঠনের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করতে হবে মিয়ানমারের ওপর। বাংলাদেশ ছাড়াও আরো কিছু দেশ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে এসেছে। কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগে তাদেরও সঙ্গে রাখলে দাবি আদায় সহজ হবে।