শাকিলের রহস্যজনক মৃত্যু-‘তাঁর হৃৎপিণ্ডটি বড় ছিল-শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই’
মেডিকেল রিপোর্টার : শাকিলের রহস্যজনক মৃত্যু-‘তাঁর হৃৎপিণ্ডটি বড় ছিল শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই’ । ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। তাঁর হৃৎপিণ্ডটি বড় ছিল। আজ বুধবার সকালে শাকিলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর এক প্রশ্নের জবাবে সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।এর আগে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে শাকিলের ময়নাতদন্ত শুরু করেন সোহেল মাহমুদ। সকাল সোয়া ৯টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষ হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে শাকিলের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। তাঁর শরীর থেকে রক্ত, হৃৎপিণ্ড ও ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এসব প্রতিবেদন হাতে এলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
ময়নাতদন্ত শেষে ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী শাকিলকে গোসল করানো ও কাফন পরানো হয়। এর পর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নেওয়া হয়। ওই সময় সঙ্গে ছিলেন শাকিলের স্বজন, তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী ও পুলিশ সদস্যরা।
সকাল পৌনে ৮টায় শাকিলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের হিমঘর থেকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই সময় লাশের সঙ্গে ছিলেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম।
মঙ্গলবার দুপুরে রহস্যজনক মৃত্যু হয় মাহবুবুল হক শাকিলের। তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বিশেষ সহকারী শাকিলের অকালমৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।শাকিলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে গুলশানের সামদাদো রেস্তোরাঁয় ছুটে যান আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
বিকেলে সেখানে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ সাংবাদিকদের জানান, গত সোমবার রাত ৮টায় শাকিল সামদাদোতে আসেন। সেখানেই তিনি রাতে খাওয়া-দাওয়া করে একটি কক্ষে বিশ্রামে ছিলেন। গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত তাঁর কোনো খবর না পেয়ে রেস্তোরাঁর লোকজন ডাকতে যায়। কিন্তু তখন কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। পরে লোকজন ঘরে ঢুকে মেঝেতে তাঁর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ পরে শাকিলের পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়।
মাহবুবুল হক শাকিল এর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব (ডিপিএস) হিসেবে সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করেছেন।
শাকিল ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাহবুবুল হক শাকিলের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। তাঁর বাবা জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। সাবেক এই ছাত্রনেতা সাহিত্য অনুরাগী ও লেখক ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত বইগুলো হলো ‘খেরোখাতার পাতা থেকে’ ও ‘মন খারাপের গাড়ী’।