• শনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

শপখ নিয়ে আজ চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে হুদা কমিশন


প্রকাশিত: ১:৩৪ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৭ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৬৯ বার

Cec-n-huda-www.jatirkhantha.com.bd

স্টাফ রিপোর্টার :  প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদে নবনিযুক্ত কে. এম. নুরুল হুদাসহ পাঁচ কমিশনার আজ শপথ নিতে যাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর সরাসরি আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনের নতুন ভবনে গিয়ে কাজে যোগ দেবেন তারা। ইসি কার্যালয়ে তারা বিকেল ৫টায় গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হবেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বিবদমান পরিস্থিতিতে নতুন কমিশনের এই যাত্রা মসৃণ নয়। অগি্নপরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে নতুন সিইসিকে। নির্বাচন কমিশন, বিশেষ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়ে এত শোরগোল, আলোচনা-সমালোচনা ইতিপূর্বে আর হয়নি।

গত সপ্তাহে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই কমিশন সদস্যরা একযোগে দেশবাসীকে আশার বাণী শুনিয়েছেন। নতুন নিযুক্ত সিইসি নুরুল হুদা বলেছেন, ‘নির্বাচনের সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করব, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত হয়।’ তিনি জানিয়েছেন, কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করবেন না তারা। তার এ কথায় সাধুবাদ জানিয়ে বিশিষ্টজন বলেছেন, ‘কথার সঙ্গে কাজের মিল

থাকতে হবে। এর আগে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও শুরুতে ভালো কথা বলেছিল। পরে কাজে সেসবের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই নতুন কমিশনকে কাজ দিয়েই তাদের আন্তরিকতা ও দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে। তাদের সফলতার ওপরই নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ।’

এ বিষয়ে নবনিযুক্ত সিইসি কে. এম. নুরুল হুদা গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, ‘কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলসহ সব মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। দায়িত্ব নেওয়ার পর সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কমিশনের ভবিষ্যৎ পথচলার কৌশল নির্ধারণ করা হবে। কাজের মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের নিরপেক্ষতার প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করব।’

নতুন ইসির প্রথম নির্বাচন ১৮ ফেব্রুয়ারি :ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শপথ নেওয়ার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করবে নতুন ইসি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী লড়ছেন এ নির্বাচনে। এর পরপরই আগামী ৬ মার্চ ১৮টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হবে। এর মধ্যে তিনটিতে চেয়ারম্যানসহ সব পদে সাধারণ নির্বাচন এবং ১৫টি উপজেলা পরিষদের কোনোটিতে চেয়ারম্যান পদে, আবার কোনোটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন হবে। এসব নির্বাচনও দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এসব পদেও প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এরই মধ্যে ১৮টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।

এসব উপজেলার মধ্যে সিলেটের ওসমানীনগর, খাগড়াছড়ির গুইমারা ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। এ ছাড়া বরিশালের বানারীপাড়া ও গৌরনদী, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, কুমিল্লা সদর, পাবনার সুজানগর, কুড়িগ্রাম সদর ও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে শুধু চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন হবে। নাটোরের বড়াইগ্রাম, নীলফামারীর জলঢাকা, সাতক্ষীরার কলারোয়া, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং পাবনার ঈশ্বরদী ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন হবে। মামলা, পদত্যাগ, মৃত্যুসহ নানা কারণে এসব পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন কমিশনকে কুমিল্লা, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে। এ ছাড়া উপনির্বাচন হতে হবে জাতীয় সংসদের শূন্য ঘোষিত গাইবান্ধা-১ ও সুনামগঞ্জ-২ আসনের। এসব নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান কমিশন জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার সুযোগ পাবে।

বিশিষ্টজনের বক্তব্য :দেশের অন্যতম রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নবনিযুক্ত সিইসির যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এ সুযোগ নতুন ইসিকে কাজে লাগাতে হবে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) শামসুল হুদাও মনে করেন, এই কমিশনকে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘রাজনৈতিক অবস্থানের অংশ হিসেবে দলগুলো অনেক সময় অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কমিশন সদস্যদের সেদিকে তাকালে চলবে না। নিজেদের মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে মানুষের আস্থায় নিয়ে আসতে হবে।

নতুন ইসির শুরুতেই তাদের আন্তরিকতা প্রমাণ করতে হবে। সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার জানান, নতুন ইসির দু’জন কমিশন সদস্য এর আগে ইসি সচিবালয়ে কাজ করেছেন। তারা তাদের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলে ইতিবাচক কিছু করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।

সদ্য বিদায়ী নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ নতুন কমিশনের জন্য শুভকামনা ব্যক্ত করে বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে নির্বাচন বর্জন ও ঠেকানোর মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত হতে বাধ্য। তাই নির্বাচন বর্জন বা ঠেকানোর কর্মসূচি থেকে রাজনৈতিক দলগুলো বেরিয়ে না এলে নতুন কমিশনের পথচলা মোটেই সহজ হবে না।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নতুন ইসি ইতিমধ্যে অনেক ভালো ভালো কথা বলেছেন। কাজের মাধ্যমে তাদের এ কথার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। নতুন সদস্যরা কাজী রকিবউদ্দীনের পথে হাঁটলে দেশের মানুষের সামনে অন্ধকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।’

প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘শপথ নেওয়ার আগেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন। অতীতের যে কোনো কমিশনের তুলনায় মানুষের মনোযোগ ও সন্দেহ দুটোই বেশি থাকবে এই কমিশনের ওপর। এসব কারণে নতুন কমিশনের সামনে পথচলা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।’

শপথের পরপরই সংবাদ সম্মেলন নতুন ইসির :শপথ অনুষ্ঠানের পরপরই ইসি কার্যালয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন চার সদস্যসহ সিইসি। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিকেল ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনারকে শপথ পড়াবেন। অন্য চার নির্বাচন কমিশনার হলেন_ সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ বেগম কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।

গত ২৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির ১০টি নামের সুপারিশ থেকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এই পাঁচজনকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী বিদায় নেন। চারজনের বিদায়ের পর থেকে গত এক সপ্তাহ নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের চলতি দায়িত্বে ছিলেন। তিনি গতকাল নিজের শেষ কর্মদিবস শেষে বিকেল ৪টায় সব কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে বিদায় নেন।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। এ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৪০টি দলের ১২টি অংশ নেয়। নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর অভিযোগ ছিল, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসি ছিল সরকারের আজ্ঞাবহ। তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। গত তিন বছরে অনুষ্ঠিত উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল।